রবীন্দ্রসঙ্গীতে নিবেদিত শিল্পী বুলবুল ইসলাম। জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদের সহ-সভাপতির দায়িত্বে থেকে দেশের নতুন প্রজন্মের কাছে রবীন্দ্রনাথকে বিভিন্নভাবে তুলে ধরার জন্য কাজ করে চলেছেন। ধানম-ির বেঙ্গল শিল্পালয়ে ‘প্রাণের খেলা’ অনুষ্ঠানে আজ সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় সঙ্গীত পরিবেশন করবেন দেশের প্রতিথযশা এই শিল্পী। আজকের পরিবেশনা ও রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্পর্কে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
‘প্রাণের খেলা’ অনুষ্ঠানে রবীন্দ্রনাথের কোন্ পর্যায়ের গান পরিবেশন করবেন?
বুলবুল ইসলাম : বেঙ্গল ফাউন্ডেশন আয়োজিত ‘প্রাণের খেলা’ শীর্ষক নিয়মিত গানের অনুষ্ঠানে এর আগেও আমি দুবার অংশ নিয়েছি। এবার আমার পাশাপাশি শিল্পী শ্রেয়সী রায়ও রবীন্দ্রসঙ্গীত পরিবেশন করবেন। এখন যেহেতু প্রকৃতিতে বর্ষার আবহ বিরাজ করছে। কখনও মৃদু ও কখনও ঝমঝম বৃষ্টিতে স্নাত হচ্ছে সবাই। সে জন্য আমি স্থির করেছি বর্ষার গানই বেশি করব। এছাড়া প্রেম, পুজাসহ অন্যান্য পর্যায়ের গানও আমার পরিবেশনায় থাকবে।
রবীন্দ্রনাথের কোন্ কোন্ গান করার ইচ্ছা আছে?
বুলবুল ইসলাম : ‘সঘন গহন রাত্রি ঝরিছে শ্রাবণধারা’ গানটি দিয়ে শুরু করব। বর্ষার মধ্যে এমন গানই যেন আমাকে বেশি টানে। এরপর ‘তিমির অবগুণ্ঠনে’, ‘ছাঁয়া ঘনাইছে বনে বনে’সহ বেশকিছু গান আমার পরিবেশনায় থাকবে। বর্ষায় প্রেমের গভীর এক আবহ থাকে। এ আবহ কিন্তু রবীন্দ্রনাথের মনোজগৎ এড়িয়ে যায়নি। তিনি লিখেছেন ‘শ্রাবণের পবনে আকুল বিষণœ সন্ধ্যায়’ ও ‘আমার প্রিয়ার ছাঁয়া আকাশে আজ ভাসে’। আমার পরিবেশনায় এ গানগুলোও থাকবে। পুজা পর্যায় থেকে ‘আমার প্রাণের মানুষ আছে প্রাণে’, ‘ক্লান্তি আমায় ক্ষমা করো প্রভু’সহ কিছু গান করার ইচ্ছা রয়েছে।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে রবীন্দ্রনাথের প্রয়োজন কতটা সময়োপযোগী ?
বুলবুল ইসলাম : রবীন্দ্রনাথের প্রয়োজন সব সময়ই। তবে এখন আরও যেন বেশি গভীরভাবে প্রয়োজন মনে হয়। রবীন্দ্রনাথ শিক্ষা নিয়ে যেভাবে ভেবেছেন, এটা যদি আমাদের দেশের শিক্ষার ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা যেত, তাহলে ছেলে-মেয়েদের মানুষ হওয়া আরও স্বতঃস্ফূর্ত হতো। এখন রবীন্দ্রনাথ ভীষণভাবে প্রাসঙ্গিক। রবীন্দ্রনাথের সৃষ্টিকর্ম দুরবস্থা থেকে পরিত্রাণের পথকে আরও সুগম করে তোলে। তাঁর গান আমাদের শান্তি দিতে পারে।
আমাদের দেশে রবীন্দ্রসঙ্গীতচর্চা নিয়ে কিছু বলুন
বুলবুল ইসলাম : খুব যতœ নিয়েই আমাদের দেশে রবীন্দ্রসঙ্গীত চর্চা হচ্ছে। আমরা যখন জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলনের পক্ষ থেকে জেলা, উপজেলা সদরে যাই, তখন দেখি সবাই মূল ধারার সঙ্গীতচর্চা করছে।
রবীন্দ্রনাথের গান কোন্ কোন্ ক্ষেত্রে কিছুটা হলেও বিকৃতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে এটাকে কিভাবে দেখবেন?
বুলবুল ইসলাম : এ বিকৃতি যুগে যুগে হবে। রবীন্দ্রনাথের জীবিত অবস্থায়ও ছিল। কিন্তু কোন বিকৃতিই টিকে থাকেনি। মানুষ এগুলো গ্রহণ করে না। আমার কথা হলো রিমেক্স করতে হলে রবীন্দ্রনাথের চেয়ে আরও প্রতিভাধর বেরিয়ে আসতে হবে। এখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষার কোন প্রয়োজন নেই। গান নিজে লিখে যত ইচ্ছে রিমেক্স করুন কিন্তু রবীন্দ্রনাথের গানে নয়। এ ক্ষেত্রে রবীন্দ্রনাথ স্বয়ং তাঁর গুরুদেবকেও ছাড় দেননি।
নতুন প্রজন্মের শিল্পীরা কেমন গাইছেন?
বুলবুল ইসলাম : অনেকেই খুব ট্যালেন্ট এবং তাঁরা মূল ধারার গানই করছেন। তবে খুব কম সংখ্যক আছেন যাঁরা এই ধারা থেকে সরে যাচ্ছেন। তাছাড়া বেশিরভাগ শিল্পীরা খুব ভাল গান করছেন এবং তাঁরা অনেক শিক্ষিত। আমার কথা হচ্ছে সঠিকভাবে সঙ্গীতচর্চা এবং সঠিক গুরুর কাছে তালিম নিতে হবে। -গৌতম পাণ্ডে