ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

জন্মদিনে অপার ভালবাসায় সিক্ত হলেন হাসান ইমাম

প্রকাশিত: ০৬:০২, ২৮ জুলাই ২০১৫

জন্মদিনে অপার ভালবাসায় সিক্ত হলেন হাসান ইমাম

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আশিতম জন্মবার্ষিকীতে অনুরাগীদের অপার ভালবাসায় সিক্ত হলেন সৈয়দ হাসান ইমাম। অকৃত্রিম অনুরাগে শুভাকাক্সক্ষীরা জানালেন শুভেচ্ছা। বিশিষ্টজনরা জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানানোর পাশাপাশি বললেন দেশের প্রতি নিবেদিত তাঁর বর্ণময় জীবনের কথা। পাঠ করা হলো তাঁকে নিবেদিত মফিদুল হক রচিত মানপত্র। জন্মদিনে রঙ ছড়াতে গাওয়া হলো গান, পাঠ করা হলো কবিতা, পরিবেশিত হলো নাচ। মোড়ক উন্মোচন করা হলো তাঁকে নিয়ে রচিত ‘নীল ছোঁয়া কিংবদন্তী’ শিরোনামের সম্মাননা গ্রন্থের। বইটিতে তাঁর জীবন ও কর্মের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে লিখেছেন দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে স্বমহিমায় উদ্ভাসিত ব্যক্তিবর্গ। প্রদর্শিত হলো সমাজের প্রতি দায়বদ্ধ এই শিল্পীকে নিয়ে নির্মিত তথ্যচিত্র। এভাবেই রকমারি আয়োজনে হৃদয়ের উষ্ণ আলিঙ্গনে উদ্্যাপিত হলো বরেণ্য এই অভিনয়শিল্পী ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বের আশিতম জন্মবার্ষিকী ও ৮১তম জন্মদিন। অনুষ্ঠানে যেন তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। বসার জায়গা না পেয়ে অনেকেই দাঁড়িয়ে থেকে প্রিয় মানুষটির জন্মদিন উদ্্যাপনের অনুষ্ঠান উপভোগ করেন। এক সময় অনুষ্ঠান প্রাঙ্গণটি হয়ে ওঠে লোকে-লোকারণ্য। সোমবার শ্রাবণ সন্ধ্যায় সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগারের শওকত ওসমান মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। শিল্প ও সংস্কৃতি অঙ্গনের এই উজ্জ্বল নক্ষত্রের জন্মদিনকেন্দ্রিক বর্ণিল এ অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করে দুই শতাধিক বিশিষ্ট নাগরিকের সমন্বয়ে গঠিত ‘শিল্পী সৈয়দ হাসান ইমামের ৮০তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন পর্ষদ’। অনুষ্ঠানের সূচনা হয় হাসান ইমামকে নিবেদিত নৃত্য পরিবেশনার মাধ্যমে। আজ এই সুন্দর সন্ধ্যায় তুমি অতিথি বেশে এসেছো গানের সুরে একঝাঁক শিল্পীর নাচের মাঝেই মঞ্চে আসেন সৈয়দ হাসান ইমাম। এরই মাঝে নাচের দলে যোগ দেন তাঁর সহধর্মিণী লায়লা হাসান ও মেয়ে সঙ্গীতা ইমাম। নৃত্যের ছন্দের মাঝেই হাসান ইমামের গলায় ফুলের মালা পরিয়ে দেন লায়লা হাসান। এরপর উপস্থাপকের দায়িত্ব নিয়ে মঞ্চে আসেন বিশিষ্ট সাংবাদিক ও প্রাবন্ধিক আবেদ খান। সাবলীল ভাষায় উপস্থাপনা করে পুরো অনুষ্ঠানটি। মঞ্চে এসেই বলেন, আজ (সোমবার) ৮০ বছরের এক তরুণ হাসান ইমামের জন্মদিন। চেতনার আলোকবর্তিকা বহনকারী এক মানুষের জন্মদিন। কথা শেষে তিনি মঞ্চে ডেকে নেন শিল্পীকে শুভেচ্ছা জানাতে আসা অতিথিদের। একে একে মঞ্চে উঠে আসেন অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, ব্যারিস্টার আমিরুল ইসলাম, সিপিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার, সৈয়দ হাসান ইমামের সহধর্মিণী লায়লা হাসান প্রমুখ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন পর্যদের আহ্বায়ক সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও উদীচীর সভাপতি কামাল লোহানী। এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন পর্যদের সদস্য সচিব গোলাম কুদ্দুছ। ‘৮০ বছরের তরুণকে’ শুভেচ্ছা জানিয়ে অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, ‘বহুমাত্রিক এক মানুষ হাসান ইমাম। তাকে আমরা জানি রঙ্গমঞ্চের আলোকিত মানুষ হিসেবে। তাকে আমরা চিনি রাজপথের লড়াকু সৈনিক হিসেবে। দেশের চলচ্চিত্র, নাটক, আবৃত্তিসহ সংস্কৃতির নানা ক্ষেত্রের উজ্জ্বল শিল্পী। এ পরিচয়ের বাইরে তিনি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার এক অগ্রণী। এদেশে যাঁরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছেন, তাঁদেরই একজন তিনি।’ সংক্ষিপ্ত আলোচনার ফাঁকে ফাঁকে চলে বরেণ্যকে ফুলেল শুভেচ্ছা। প্রথমেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে তাঁর প্রটোকল অফিসার খুরশিদুল আলম হাসান ইমামকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। এ ছাড়াও শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি ও রাজনীতিসহ নানা অঙ্গনের বিশিষ্ট ব্যক্তি ও সংগঠনের পক্ষ থেকে তাঁকে শুভেচ্ছা জানান। পর্ষদের পক্ষ থেকে শিল্পীকে উত্তরীয়, পাঞ্জাবি ও কিরীটি রঞ্জন বিশ্বাসের আঁকা একটি প্রতিকৃতি উপহার দেয়া হয়। অনুষ্ঠানে হাসান ইমামের সংক্ষিপ্ত জীবনী পাঠ করেন আবৃত্তিশিল্পী রফিকুল ইসলাম। মানপত্র পাঠ করেন নাট্যজন রামেন্দু মজুমদার। অতিথিরা হাসান ইমামকে নিয়ে লেখা ‘নীল ছোঁয়া কিংবদন্তি’ স্মারকগ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করেন। অনুষ্ঠানে একক সঙ্গীত পরিবেশন করেন সালমা আকবর, ফকির আলমগীর, মামুন জাহিদ খান। এ ছাড়াও ছিল সম্মেলক গান ‘আকাশভরা সূর্যতারা, বিশ্বভরা প্রাণ’। শিল্পীকে নিবেদিত আবৃত্তি পরিবেশন করেন আশরাফুল আলম, ডালিয়া আহমেদ ও মাহিদুল ইসলাম। এভাবেই কবিতা ছন্দে, গানের সুরে, নাচের নিক্কনে জন্মদিনের ভালবাসায় সিক্ত হন এই গুণী। সৈয়দ হাসান ইমাম এদেশের শিল্প-সংস্কৃতি অঙ্গনের এক অনন্য কিংবদন্তি। নানা চরিত্রের বাঁক ঘুরে একাধারে অভিনয় করেছেন মঞ্চ, টেলিভিশন ও চলচ্চিত্রে। শুধু অভিনয় নয়, নাটক ও চলচ্চিত্রের পরিচালনা এবং প্রযোজনাও করেছেন। রাষ্ট্র ও সমাজের দায়বদ্ধ এই শিল্পী মুক্তিযুদ্ধ পূর্ব সময় থেকেই সকল প্রগতিশীল আন্দোলনে রেখেছেন অনন্য ভূমিকা। ১৯৬১ সালে রবীন্দ্র জন্মশতবর্ষ উদ্যাপনে তাঁর অবদান আমাদের প্রাক-মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের এক অবিস্মরণীয় অধ্যায়। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি নানাভাবে কাজ করেছেন আমাদের স্বাধীনতার জন্য। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে সংবাদ পাঠ করতেন সালেহ আহাম্মেদ নামে। স্বাধীনতার পর যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে শহিদ জননী জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা আন্দোলনে তিনি পালন করেছেন মুখ্য ভূমিকা। বাংলাদেশের সকল প্রগতিশীল ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনে সৈয়দ হাসান ইমাম এক অনমনীয়, সাহসী যোদ্ধার নাম। আলিয়ঁসে টুটুলের চিত্রপ্রদর্শনী কালের বাহাস ॥ সমাজ ভাবনা তাড়িত তরুণ চিত্রশিল্পী হারুন অর রশীদ টুটুল। রঙের ওপর রঙ চাপিয়ে সৃজন করেছেন আপন ক্যানভাস। তবে সেই চিত্রপটে শুধুমাত্র সুখদৃশ্যের পরিবর্তে উদ্ভাসিত হয়েছে সমাজের চলমান বাস্তবতা। শিল্পী তার আবেগের তীব্রতায় সমাজের চারপাশের মানুষ, পরিস্থিতি ও বাস্তবতা, শহুরে জীবন, শহুরে গল্প, টুকরো টুকরো সময় কখনও স্পষ্ট আবার কখনও অস্পষ্টভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। অমানবিক সময়ের স্রোতে ভেসে যাওয়ার বিরুদ্ধে যেন প্রতিবাদী রঙের মিছিল রূপ নিয়েছে তাঁর ছবি। আর এমনই কিছু ছবি নিয়ে সোমবার থেকে ফরাসী সাংস্কৃতিক কেন্দ্র আলিয়ঁস ফ্রসেজে শুরু হলো এই শিল্পীর চিত্রকর্ম প্রদর্শনী। লা গ্যালারিতে অনুষ্ঠিত এ প্রদর্শনীর শিরোনাম কালের বাহাস। সন্ধ্যায় হারুন-অর-রশীদ টুটুলের কালের বাহাস শীর্ষক প্রদর্শনীর উদ্বোধন হয়। প্রধান অতিথি হিসেবে প্রদর্শনী উদ্বোধন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন সমন্বিত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়ক জাতীয় প্রকল্পের পরিচালক অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ আবদুল কাইয়ুম। সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন, বিশিষ্ট চিত্রশিল্পী অধ্যাপক মোহাম্মদ ইউনুস ও চিত্রসমালোচক মুস্তাফা জামান। অনুভূতি ব্যক্তি করে বক্তব্য রাখেন শিল্পী টুটুল। প্রদর্শনীর চিত্রকর্ম প্রসঙ্গে হারুন অর রশীদ টুটুল বলেন, অমানবিক এক সময়ের স্রোত বয়ে যাচ্ছে গ্রাম থেকে শহর কিংবা নগর থেকে বন্দরে। পাল্টে যাচ্ছে আমাদের চিরচেনা এই দেশটা। দেশের সমাজ-সংস্কৃতি-রাজনীতির ইতিহাসে আঁকা ছবি আর যাপিত জীবনের অভিজ্ঞতার ব্যবধান তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। মানবতা-বিবর্জিত রাজনীতি ক্রমশই কঠিন করে তুলছে মানুষের জীবনকে। শুধুমাত্র ক্ষমতার লোভে ঘটে চলেছে সংঘাত-হানাহানি। আর ক্ষমতাকেন্দ্রিক এসব ঘটনার বলি হচ্ছে রাষ্ট্রের নিচুতলার বিত্তহীন বাসিন্দারা। মুনাফার লোভে একদিকে বিরাজ করছে মূল্যবোধহীন রাজনীতি, লক্ষ্যহীন ও বাণিজ্যিক শিক্ষাব্যবস্থা, গলাটিপে ধরা চিকিৎসা ব্যবস্থা ও অপরিকল্পিত নগরায়ন। সেই সঙ্গে বিপর্যস্ত হচ্ছে পরিবেশ। আরেকদিকে রয়েছে মা-মাটি-মানুষ এবং প্রাণ ও প্রকৃতির চিরন্তন প্রবাহ। মনের গভীরে স্রোতস্বিনী নদীর মতো বইতে থাকা ভাষা আন্দোলন, স্বাধিকারের সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। কাক্সিক্ষত সমাজ আর দৃশ্যমান বাস্তবতার বাস্তবতার এই দুই বিপরতীমুখী ছবির সংঘাতে ক্ষতবিক্ষত মানুষের মুখচ্ছবি এবং তার পরিপার্শ্বের ছবিটাই আঁকার চেষ্টা করেছি আমি। তেমন কিছু চিত্রকর্ম নিয়েই অনুষ্ঠিত হবে কালের বাহাস শীর্ষক প্রদর্শনী। প্রদর্শনীতে ঠাঁই পেয়েছে এ্যাক্রিলিক মাধ্যমে চিত্রিত ২৫টি চিত্রকর্ম। দশ দিনব্যাপী এ প্রদর্শনী শেষ হবে ৫ আগস্ট। প্রতি সোম থেকে বৃহস্পতিবার বেলা ৩টা থেকে রাত নয়টা এবং শুক্র ও শনিবার সকাল ৯টা থেকে ১২টা ও বিকেল ৫টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। রবিবার সাপ্তাহিক বন্ধ।
×