ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সরকারী চাকুরেদের নতুন বেতন কাঠামো;###;মন্ত্রিসভার আগামী বৈঠকে উপস্থাপন

টাইমস্কেল ও সিলেকশন গ্রেড বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন অর্থমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ২৮ জুলাই ২০১৫

টাইমস্কেল ও সিলেকশন গ্রেড বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন অর্থমন্ত্রী

এম শাহজাহান ॥ সরকারী চাকুরেদের নতুন পে-স্কেল বাস্তবায়ন নিয়ে সৃষ্ট সব ধরনের জটিলতা দূর হচ্ছে। নতুন এই বেতন কাঠামো ১ জুলাই থেকে কার্যকর করা হবে। আর আগামী সেপ্টেম্বর মাস থেকেই নতুন পে-স্কেলে অনুযায়ী বেতন প্রদানের প্রস্তুতি নিয়েছে সরকার। এ লক্ষ্যে আগামী সপ্তায় মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে প্রস্তাবিত বেতন কাঠামো অনুমোদনের আভাস দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। সোমবার সচিবালয়ে তিনি বলেন, আগামী সোমবারের মন্ত্রিসভায় এটি উপস্থাপন করা হতে পারে। জানা গেছে, বেতন স্কেল সংক্রান্ত সচিব কমিটির সুপারিশ বর্তমানে অর্থমন্ত্রণালয়ে রয়েছে। তবে পে-স্কেল চূড়ান্ত করার ক্ষেত্রে টাইমস্কেল ও সিলেকশন গ্রেড রাখা-না রাখা, বাংলাদেশ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহ এবং শিক্ষকদের স্বতন্ত্র বেতন স্কেলের বিষয়টি নিয়ে অর্থমন্ত্রী চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দিবেন। এজন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন আবুল মাল আবদুল মুহিত। শুধু তাই নয়, টাইমস্কেল ও সিলেকশন গ্রেড বিলুপ্তির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে প্রধানমন্ত্রীর শরণাপন্ন হয়েছেন অর্থমন্ত্রী। ইতোমধ্যে এ দু’ ইস্যুতে সরকারী কর্মচারীরা আন্দোলন পর্যন্ত করেছেন। তাদের মধ্যে অসন্তোষও বিরাজ করছে। এ বাস্তবতায় প্রধানমন্ত্রী সবার কথা মাথায় রেখে নতুন পে-স্কেল বাস্তবায়নের পরামর্শ দিয়েছেন বলে জানা গেছে। এদিকে, অষ্টম বেতন কাঠামোতে সিলেকশন গ্রেড ও টাইমস্কেল থাকবে কিনা এবং বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের গ্রেড কী হবে এসব বিষয় নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করছেন অর্থমন্ত্রী। টাইমস্কেল ও সিলেকশন গ্রেড বাদ দেয়া হলে কিভাবে তা সমন্বয় করা হবে তা নিয়েও কাজ করছে অর্থমন্ত্রণালয়। তবে সংশ্লিষ্ট অপর একটি সূত্র দাবি করেছে টাইমস্কেল ও সিলেকশন গ্রেড শেষ পর্যন্ত রাখার পক্ষে অর্থমন্ত্রণালয়। কারণ এটি বাদ দিলেই জটিলতা বেশি তৈরি হবে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে সব কিছুই নির্ভর করছে অর্থমন্ত্রীর ওপর। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অর্থমন্ত্রণালয়ের এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে বলেন, টাইমস্কেল ও সিলেকশন গ্রেড নিয়ে সবচেয়ে বেশি জটিলতা তৈরি হয়েছে। এছাড়া শিক্ষকদের দাবির বিষয়টিতো আছেই। এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রীই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দিবেন। এ দুই বিষয়ে সিদ্ধান্ত পেলে প্রতিবেদন চূড়ান্ত করা হবে। এরপর তা মন্ত্রিসভার বৈঠকে উপস্থাপন করা হবে। তিনি বলেন, অষ্টম পে-স্কেলটি সরকারী চাকুরেদের জন্য করা হলেও এটি আধা সরকারী, বিধিবদ্ধ সংস্থা, পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলো অনুসরণ করে থাকে। তাই টাইমস্কেল ও সিলেকশন গ্রেড বাদ দিলে নতুন জটিলতার সৃষ্টি হবে। এ অবস্থায় এটি বাদ নাও দিতে পারে সরকার। তবে এ বিষয়ে এখন অর্থমন্ত্রী নিজে সিদ্ধান্ত দিবেন। জানা গেছে, ইতোপূর্বে টাইমস্কেল ও সিলেকশন গ্রেড বাদ দিয়ে পে-স্কেল অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে ওঠানোর প্রস্তুতি নেয়া হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যস্ত তা আর হয়নি। টাইমস্কেল ও সিলেকশন গ্রেড দেয়া না হলে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। অর্থমন্ত্রণালয়ের আরেক কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে বলেন, সিলেকশন গ্রেডের মাধ্যমে উন্নীত হলে সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিজেদের সম্মানিত বোধ করতেন। এ ব্যবস্থা উঠিয়ে দেয়া হলে তাদের সে সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হবে। বিষয়টি সরকারের জন্য বিব্রতকর সিদ্ধান্ত হবে। পে-স্কেলে টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড থাকছে না, এমন সংবাদ প্রচার হওয়ার পর থেকেই কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে। যদিও প্রস্তাবিত কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছেÑ টাইমস্কেল ও সিলেকশন গ্রেড বাদ দিয়ে নতুন যে পদ্ধতি চালু হবে তাতে চাকরিজীবীদের কোন লোকসান হবে না। প্রতিবছর মূল বেতনের ৫ শতাংশ করে চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়বে। এতে পদোন্নতি না পেলেও ১৫ বছরের মধ্যেই দ্বিগুণ হয়ে যাবে তাদের বেতন-ভাতা। প্রথম বছর ইনক্রিমেন্ট পাওয়ার পর তা যোগ করে যে মূল বেতন হবে, পরের বছর তার ওপর ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট পাবেন। ইতোমধ্যে সচিব কমিটি দুই ধাপে নতুন বেতন কাঠামো বাস্তবায়নের সুপারিশ করেছে। চলতি ২০১৫Ñ১৬ অর্থবছরের বর্ধিত মূল বেতন এবং দ্বিতীয় ২০১৬Ñ১৭ অর্থবছরে বর্ধিত ভাতা দেয়ার কথা বলেছে এ কমিটি। প্রসঙ্গত, ড. ফরাসউদ্দিনের নেতৃত্বাধীন পে-কমিশনের রিপোর্টের ভিত্তিতে সর্বোচ্চ ৭৫ হাজার এবং সর্বনিম্ন ৮ হাজার ২৫০ টাকা মূল ধরে নতুন বেতন কাঠামো করার সুপারিশ করে সচিব কমিটি। কমিটির সুপারিশে আগের মতো ২০টি ধাপে বেতন কাঠামো রাখার জন্য কথা বলা হয়েছে। নতুন এ বেতন কাঠামোর বাস্তবায়ন হলে প্রায় সাড়ে ১৪ লাখ সরকারী চাকরিজীবীর বেতন ৮৭ থেকে ১০১ শতাংশ পর্যন্ত বাড়বে।
×