ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

রাঙ্গামাটিতে ভূমি ধসে মারা গেছেন গৃহবধূ

কক্সবাজারে পাহাড় ধসে মা-মেয়েসহ পাঁচ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ২৮ জুলাই ২০১৫

কক্সবাজারে পাহাড় ধসে মা-মেয়েসহ পাঁচ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ কক্সবাজারে পাহাড় ধসে মাটিচাপা পড়ে মা-মেয়েসহ পাঁচ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। চারজনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। এদিকে পাহাড় ধস অব্যাহত রয়েছে রাঙ্গামাটিতেও। এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার থেকে জানান, রবিবার গভীর রাতে শহরের সাব রেজিস্ট্রি অফিসের পেছনে কবরস্থান পাড়া রাডার স্টেশন এলাকায় ভয়াবহ পাহাড় ধসের এ ঘটনা ঘটেছে। সোমবার ভোর থেকে সেনাবাহিনী, বিজিবি, ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয়রা উদ্ধার কাজ চালায়। পাহাড় ধসে মাটি চাপা পড়ে নিহতরা হলেন খায়রুল আমিনের স্ত্রী লুৎফুন নাহার জুনু (২৮), তার শিশু কন্যা নীহা মনি (৭), শাহ আলম (৪৫), তার স্ত্রী রোকেয়া আক্তার (৩৩) ও নিহত শাহ আলমের মেয়ে রিনা আক্তার (৯)। আহত ও জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে জহিরুল হকের মেয়ে শারমিন আকতার (২০), খাইরুল আমিনের ছেলে মোহাম্মদ আয়াত (১২), জাফর আলমের ছেলে মোহাম্মদ শেফায়েত (২০) ও জাকের হোসেনের ছেলে নূর নবী (২৮)। আহতদের কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। কক্সবাজার শহর আওয়ামী লীগ নেতা ও স্থানীয় বাসিন্দা পেটান আলী জানান, পাহাড় ধসে তার বসতবাড়ির ক্ষতি হলেও পরিবারের সবাই অক্ষত অবস্থায় বের হয়ে আসতে সক্ষম হন। প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রে জানায়, সোমবার রাত দুটোর দিকে বিকট শব্দে পাহাড় ধসে বাড়ি চাপা পড়ে। ওইসময় মাটি চাপা পড়া বাড়িগুলোতে ঘুমিয়েছিলেন নিহত নারী-পুরুষ ও শিশুরা। স্থানীয় লোকজন ও উদ্ধারকারী দল জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করেছে ৪ জনকে। পাহাড় ধসের খবর পেয়ে কক্সবাজার ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকারী দল দ্রুত ছুটে আসে এবং উদ্ধার কাজ শুরু করে। এরপরই উদ্ধার কাজে যোগ দেয় সেনাবাহিনীর একটি দল। সেনাবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস উদ্ধার দল ও পুলিশ ২ ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে নূর নবীকে জীবিত উদ্ধার করে। কক্সবাজার ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার আব্দুল মজিদ জানিয়েছেন, পাহাড় ধসে চারটি বাড়ি মাটি চাপা পড়েছে। রাতেই স্থানীয়দের সঙ্গে উদ্ধার কাজ চালাতে যোগ দেয় পেকুয়া ও চকরিয়া ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকারী দল। কক্সবাজারের ১৬ ইসিবির উপ-অধিনায়ক মেজর মাহবুবুর রহমান খান জানিয়েছেন, বৃষ্টির মধ্যেও নিরলসভাবে উদ্ধার কাজ চালিয়ে গেছে সৈনিকরা। এতে একটি শিশু ও এক মহিলার মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে সকালে। দুপুর একটায় স্বামী-স্ত্রীসহ ৩ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। ১৬ ইসিবি উদ্ধারকর্মী মোহাম্মদ শেফায়েত বলেন, উদ্ধারের সময় নিহত মা তার শিশু কন্যাকে বুকে জড়িয়ে ছিলেন। দৃশ্যটি খুবই হৃদয়বিদারক ছিল। ঘটনা পরবর্তী সময়ে ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক ড. অনুপম সাহা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তোফায়েল আহমদ, সদর থানার ওসি মতিউর রহমান ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তোফায়েল আহমদ জনকণ্ঠকে জানিয়েছেন, আহত নিহতদের উদ্ধার তৎপরতায় পুলিশ সহযোগিতা করেছে। ওদিকে প্রবল বর্ষণে কক্সবাজারে পাহাড় ধসের আশঙ্কা রয়েছে বলে সতর্ক বার্তা প্রচার করেছে জিওলজিক্যাল সার্ভে অব বাংলাদেশ। জিওলজিক্যাল সার্ভে অব বাংলাদেশের এ বিবরণীতে বলা হয়েছে কক্সবাজার, টেকনাফ ও চট্টগ্রামে যে কোন সময় অতি বর্ষণে ব্যাপক ভূমিধস হতে পারে। এ খবর পেয়ে রবিবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত কক্সবাজারের জেলা প্রশাসনের পক্ষে ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে বসবাসকারীদের নিরাপদে সরিয়ে নেয়ার তৎপরতা শুরু করে। জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্ব বাড়ি বাড়ি গিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসকারীদের নিরাপদে সরে যেতে নির্দেশও দেয়া হয়। নিজস্ব সংবাদদাতা, রাঙ্গামাটি থেকে জানান, রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলার বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ধস অব্যাহত রয়েছে। পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় বসবাসরত দেড় শতাধিক পরিবারের লোকজনকে আশ্রয় কেন্দ্রে রাখা হয়েছে। রাঙ্গামাটি জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা বিশ্বনাথ মজুমদার জানান গত কয়েকদিনের টানা প্রবল বর্ষণে রাঙ্গামাটি ও কাপ্তাই উপজেলার বিভিন্ন পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে বসবাসরত দেড় শতাধিক পরিবারের সদস্যদের প্রশাসনের উদ্যোগে চারটি আশ্রয় কেন্দ্রে এনে রাখা হয়েছে। এছাড়া জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে পুলিশ এবং দমকল বাহিনীর সদস্যদের সহায়তায় দুই শতাধিক পরিবারকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে আনা হয়েছে। সোমবার সকালে রাঙ্গামাটি সিনিয়র মাদ্রাসা সংলগ্ন এলাকায় ভূমিধস হয়েছে। এছাড়া শহরের বিভিন্ন এলাকাতেও নতুন করে ভূমিধসের ঘটনা ঘটেছে। জেলার বরকল উপজেলায় ভূমিধসে কয়েকটি পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
×