ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কম খরচে পণ্য পরিবহনের কথা মাথায় রেখে পানগাঁও বন্দর করা হলেও প্রকৃতপক্ষে খরচ বেশি হচ্ছে

পূর্ণাঙ্গ বন্দরের মর্যাদা পাচ্ছে না পানগাঁও বন্দর

প্রকাশিত: ০৪:১৩, ২৮ জুলাই ২০১৫

পূর্ণাঙ্গ বন্দরের মর্যাদা পাচ্ছে না পানগাঁও বন্দর

অর্থনৈতিক রিপোর্টার॥ অত্যাধুনিক সরঞ্জাম ও অবকাঠামো সুবিধা থাকার পরও পূর্ণাঙ্গ বন্দরের মর্যাদা পাচ্ছে না পানগাঁও বন্দর। বন্দরের কন্টেনার হ্যান্ডলিংয়ের চিত্র হতাশাজানক। এর প্রধান কারণ বাড়তি জাহাজ ভাড়া। পণ্য পরিবহন ব্যয় কমলাপুর আইসিডির চেয়ে বেশি হওয়ায় বন্দর ব্যবহারে আগ্রহ হারাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, কম খরচে পণ্য পরিবহনের কথা মাথায় রেখে পানগাঁও বন্দর করা হলেও প্রকৃতপক্ষে খরচ বেশি হচ্ছে। তা ছাড়া শিপিং এজেন্টগুলোও পুরোদমে কাজ শুরু করেনি। তাই বাধ্য হয়েই চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে পণ্য আনা-নেয়া করতে হচ্ছে। জাহাজ ভাড়া কমানোসহ লজিস্টিক সাপোর্ট বৃদ্ধি এবং ভারি যানবাহন চলাচলের উপযোগী রাস্তা তৈরি করলে ব্যবসায়ীরা বন্দর ব্যবহারে উৎসাহিত হবেন। ২০১৩ সালের ৭ নবেম্বর মাসে পানগাঁও বন্দর ও কাস্টমস হাউসের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ৬৯ একর জায়গায় প্রায় ৪শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয় বন্দরটি। স্থাপন করা হয় কন্টেনার হ্যান্ডলিংয়ের আধুনিক যন্ত্রপাতি। ওই সময় বলা হয়েছিল, পানগাঁও বন্দর ব্যবহার করলে ব্যবসায়ীদের খরচ কমবে। বছরে ১ লাখ ১৬ হাজার কন্টেনার হ্যান্ডলিং করা হবে। কোটি টাকা রাজস্ব আয় হবে। অথচ এতদিন যত হ্যান্ডলিং করা হয়েছে তার বেশিরভাগই ছিল খালি কন্টেনার। তা ছাড়া রাজস্ব আদায়ের চিত্রও হতাশাজনক। পণ্য পরিবহন ব্যয় আইসিডির চেয়ে বেশি হওয়ার কারণে বন্দর ব্যবহার থেকে বিরত থাকছেন ব্যবসায়ীরা। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান সরকারের উচ্চমহলের নির্দেশে পানগঁাঁও বন্দরের গতিশীলতা আনতে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। ৩ জুলাই সরেজমিন পরিদর্শন করে বন্দরের সুযোগ-সুবিধা ও সমস্যা চিহ্নিত করেছেন। পানগাঁও বন্দরকে সচল করতে শীঘ্রই স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করা হবে। স্টেকহোল্ডারদের মতামতের ভিত্তিতে এ্যাকশন প্ল্যান তৈরি করা হবে। পরিদর্শনকালে কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, পানগাঁও বন্দরকে বাংলাদেশের নিউজার্সি বা এ্যান্টওয়ার্প বন্দরে রূপান্তর করার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া হবে। এ জন্য কৃষি, নৌ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, টেলিযোগাযোগ এবং অর্থ মন্ত্রণালয়কে নিয়ে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। পানগাঁও বন্দর পরিদর্শন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম থেকে নদীপথে পানগাঁওয়ে কন্টেনার পৌঁছানোর ভাড়া অত্যধিক। তুলনামূলক কম খরচে রেলপথে কমলাপুর আইসিডিতে কন্টেনার পৌঁছানো যায় বলে আমদানিকারকরা নৌপথে পণ্য পরিবহনে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। সে কারণে জাহাজ ভাড়া রেল ভাড়ার সমান অথবা তার চেয়ে কম হওয়া প্রয়োজন। এ ছাড়া কমলাপুর আইসিডির চেয়ে পানগাঁও কন্টেনার ইয়ার্ডের ট্যারিফ বেশি। পোর্ট ট্যারিফ সামঞ্জস্যপূর্ণ না হলে আমদানিকারকরা পানগাঁও বন্দর ব্যবহারে আগ্রহী হবেন না। এর পাশাপাশি খালি কন্টেনার ১০ দিন বন্দরে বিনা ভাড়ায় রাখার সুযোগ দিলে শিপিং কোম্পানিগুলো জাহাজ আনতে উৎসাহিত হবে। জুরাইনের রাস্তা প্রশস্তকরণের কথা উল্লেখ করে পরিদর্শন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পানগাঁওয়ের রাস্তায় ঢোকার মুখে রাস্তা অপ্রশস্ত এবং সব সময় যানজট লেগে থাকে। এ কারণে ঢাকা থেকে আগত বা ঢাকামুখী যানবাহনের গন্তব্যে পৌঁছাতে সময় লাগে। রাস্তার এ অংশে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদসহ রাস্তা প্রশস্ত করা হলে যানজট হ্রাস পাবে এবং আমদানিকারকরা বন্দর ব্যবহারে উৎসাহিত হবেন। এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জে পোশাক কারখানা ও এর সঙ্গে জড়িত পশ্চাৎপদ শিল্প থাকায় চট্টগ্রাম বন্দরে আসা পণ্যের ৭৫ থেকে ৮০ শতাংশই এ সব এলাকার। এ সব পণ্যের মধ্যে ৮ থেকে ১০ শতাংশ কন্টেনার রেলপথে কমলাপুর আইসিডিতে আসে। বাকিটা সড়কপথে কন্টেনার ট্রেইলর ও ট্রাকে আনা হয়। পানগাঁও বন্দর দিয়ে পণ্য এসব পণ্য আনা সম্ভব। এতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানজট হ্রাস পাবে। এ প্রসঙ্গে বিজিএমইএর সহ-সভাপতি শহীদুল্লাহ আজিম বলেন, রফতানিমুখী পোশাকশিল্পের জন্য পানগাঁও বন্দর এখনও প্রস্তুত নয়। বন্দরে লাইটারেজ জাহাজের আসা-যাওয়া নির্বিঘœসহ কন্টেনার ইয়ার্ডের উভয় পাশে নিরাপত্তা জোরদার ও অবকাঠামো উন্নত করতে হবে। তিনি আরও বলেন, সবচেয়ে বেশি জরুরী হচ্ছে জাহাজ ভাড়া নির্ধারণ। কমলাপুর আইসিডির চেয়ে কম খরচে পণ্য আনতে পারলেই ব্যবসায়ীরা বন্দর ব্যবহারে উৎসাহিত হবেন। জাহাজ ভাড়া বেশি হওয়ার কারণে পোশাক খাতের ব্যবসায়ীরা বন্দর ব্যবহার করতে চান না। এক্সপোর্টার্স এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ইএবি) সভাপতি সালাম মুর্শেদী বলেন, পানগাঁও বন্দর সচল করতে হলে সবার আগে জাহাজ ভাড়া কমাতে হবে। প্রয়োজনে ইনসেনটিভ দিতে হবে। পাশাপাশি আমদানি-রফতানির সঙ্গে জড়িত সব পক্ষকে বন্দর ব্যবহারে উৎসাহিত করতে হবে। ব্যবসায়ীদের নিশ্চয়তা দিতে হবে যাতে সঠিক সময়ে পণ্য গন্তব্যে পৌঁছনো সম্ভব হয়।
×