ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বৃহস্পতিবার মিরপুর শেরেবাংলায় সিরিজ নির্ধারণী দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টে মুখোমুখি বাংলাদেশ-দক্ষিণ আফ্রিকা, চট্টগ্রাম থেকে ফিরেছে দু’দল

সাগরিকার উজ্জ্বল নৈপুণ্যে ঢাকায় আত্মবিশ্বাস

প্রকাশিত: ০৬:৫৫, ২৭ জুলাই ২০১৫

সাগরিকার উজ্জ্বল নৈপুণ্যে ঢাকায় আত্মবিশ্বাস

মোঃ মামুন রশীদ ॥ চট্টগ্রাম টেস্টে শেষ দু’দিন খেলেছে বৃষ্টি। বল মাঠেই গড়াতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত ড্র মেনে নিতে বাধ্য হয়েছে উভয় দল। প্রথমবারের মতো দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে টেস্ট ড্র করার গৌরব দেখিয়েছে বাংলাদেশ দল। বৃষ্টির কারণেই ড্র হয়েছে এমন কথায় বাংলাদেশের এ অর্জনকে খাটো করার সুযোগ নেই। কারণ তৃতীয় দিন পর্যন্ত ম্যাচের নিয়ন্ত্রণে ছিল বাংলাদেশ। এবার ঢাকার পালা। আগামী বৃহস্পতিবার দেশের ‘হোম অব ক্রিকেট’ মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টে সফরকারী দক্ষিণ আফ্রিকার মুখোমুখি হবে স্বাগতিক বাংলাদেশ। রবিবার দুপুরে একই ফ্লাইটে ঢাকায় এসে পৌঁছেছে উভয় দল। এ দিন হোটেলে বিশ্রাম নিয়ে কাটালেও আজ থেকেই অনুশীলনে নামবে উভয় দল। আর এর মাধ্যমেই শুরু হয়ে যাবে দ্বিতীয় টেস্টে লড়াইয়ে নামার প্রস্তুতি। প্রথম টেস্টে যতটুকু খেলা হয়েছে সেটা নিয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মুশফিকুর রহীম। তিনি দাবি করেছেন ঢাকায় দ্বিতীয় টেস্টের অনুপ্রেরণা পেয়ে গেছে দল এবং ক্রিকেটাররা এখন আত্মবিশ্বাসী। সেই আত্মবিশ্বাস এবার কাজে লাগবে টাইগারদের। সাগরিকায় ওয়ানডে সিরিজের শেষ ম্যাচ জিতে সিরিজ জয়ের মাধ্যমে জাতিকে ঈদ উপহার দিয়েছিল টাইগাররা। তারপর থেকে উভয় দল বন্দরনগরীতেই অবস্থান করেছে। ঈদের পর সিরিজের প্রথম টেস্ট দিয়ে আবার ময়দানি লড়াইয়ের মাধ্যমে কেটে গেছে ঈদের রেশ। যদিও এ টেস্টে ছিল বৃষ্টির হানা। চট্টগ্রামে সিরিজের প্রথম টেস্ট শেষ। আগের ৮ টেস্টে প্রোটিয়াদের কাছে বাজেভাবে হেরে গেলেও এবার ড্রয়ের মাধ্যমে প্রথম বড় কোন সাফল্য পেয়েছে টাইগাররা দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে। দেশের মাটিতে এ নিয়ে ৫০ টেস্ট খেলল বাংলাদেশ দল। সেই টেস্টে বিশ্বের এক নম্বর দলের বিরুদ্ধে ড্র নিয়ে শেষ করার কারণে এখন বেশ উজ্জীবিত টাইগাররা। দেশের মাটিতে খেলা টেস্টগুলোর পরিসংখ্যানটা অবশ্য তেমন সুখকর নয় বাংলাদেশের জন্য। মাত্র ৪ জয় ও ১১ ড্রয়ের বিপরীতে ৩৫ টেস্টেই শিকার করতে হয়েছে পরাজয়। চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে খেলেছে ১৪ টেস্ট। আছে একটি মাত্র জয় এবং ৮ পরাজয়ের সঙ্গে ৫ ড্র। এবার ঢাকায় প্রতিদ্বন্দ্বিতার পালা। শেষবার মিরপুরে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ মুখোমুখি হয়েছিল ২০০৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে। সেবারই প্রথম প্রোটিয়াদের বিরুদ্ধে কিছুটা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে সক্ষম হয়েছিল টাইগাররা। প্রথমবারের মতো দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে প্রথম ইনিংসে লিড নিয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দ্বিতীয় ইনিংসের ব্যর্থতায় ৫ উইকেটে হেরে গিয়েছিল। ৭ বছর পর আবারও সেই মিরপুরে টেস্ট ক্রিকেটে মুখোমুখি হবে দু’দল। আগের আট টেস্টে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে ৬ ম্যাচে চার দিনে এবং ২ ম্যাচে তিন দিনে নতিস্বীকার করেছিল বাংলাদেশ। তবে এবার সাগরিকা টেস্টে নিজেদের ভিন্নরূপে আবির্ভূত করতে পেরেছিল মুশফিকুর রহীমের দল। প্রথম ইনিংসেই ৭৮ রানের লিড নিতে পেরেছে এবং প্রথমবারের মতো প্রোটিয়াদের বিরুদ্ধে তিন শতাধিক রানের ইনিংস গড়তে সক্ষম হয়েছে। অভিষেক হওয়া ১৯ বছর বয়সী তরুণ পেসার মুস্তাফিজুর রহমান দারুণ ঝলক দেখিয়েছেন। তিনি চার বলে তিন উইকেট নিয়ে অসামান্য কৃতিত্ব দেখান। শেষ পর্যন্ত ৩৭ রানে ৪ উইকেট নিয়ে ম্যাচের সেরা বোলিং নৈপুণ্য দেখানোয় ম্যান অব দ্য ম্যাচ হন। ওয়ানডে অভিষেকেও ৫ উইকেট শিকার করে হয়েছিলেন ম্যাচসেরা। একই সঙ্গে ওয়ানডে ও টেস্ট অভিষেকে কোন ক্রিকেটারের ম্যাচসেরা হওয়ার এটিই প্রথম ঘটনা। এছাড়া ব্যাটে-বলে দুর্দান্ত নৈপুণ্য দেখিয়েছেন ক্রিকেটাররা। সে কারণে অধিনায়ক মুশফিক দারুণ সন্তুষ্টি জানিয়ে ঢাকা টেস্টে আরও ভাল করার প্রত্যয় জানিয়েছেন। ড্র যেভাবেই আসুক আত্মবিশ্বাসী হওয়ার মতো যথেষ্ট উপাদান চট্টগ্রাম টেস্ট থেকে পেয়ে গেছে বাংলাদেশ দল। এ বিষয়টি নিয়ে অধিনায়ক মুশফিক নিজেই বলেছেন, ‘এই প্রথম তাদের বিপক্ষে তিন শ’ রান করা, ওদের কম রানে অলআউট করা, প্রথম ইনিংসে লিড নেয়া, টপ ও লেট অর্ডাররাও ভাল খেলেছে। বড় রান না করলেও যার যার পজিশন থেকে অবদান রেখেছে। তরুণরা সিনিয়র ক্রিকেটারদের সঙ্গে ভাল খেলেছে। সার্বিকভাবে দলগত পারফর্মেন্স হয়েছে। ঢাকা টেস্টে এ আত্মবিশ্বাস কাজে দেবে।’ মিরপুরে অবশ্য এর আগে খেলা ১৩ টেস্টে অনুপ্রাণিত হওয়ার মতো আহামরি কোন সাফল্য নেই বাংলাদেশ দলের। ১০ হারের বিপরীতে ১ জয় আর একটি ড্র। একমাত্র সে জয়টি এসেছে গত বছর অক্টোবরে জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে মাত্র ৩ উইকেটের ব্যবধানে। কিন্তু এরপরই পাকিস্তানের কাছে আবার ৩২৮ রানের বড় ব্যবধানে হেরেছে টাইগাররা। সেদিক থেকে অনুপ্রেরণা বলতে শুধু এবার সাগরিকায় দারুণ নৈপুণ্য দেখানোটাই হতে পারে বাংলাদেশ দলের জন্য।
×