স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতা-বিরোধী অপরাধের অভিযোগে জাতীয় পার্টির নেতা সাবেক সংসদ সদস্য সাখাওয়াত হোসেনসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নেয়া হবে কি না, সে বিষয়ে আদেশ দেয়া হবে ৮ সেপ্টেম্বর। মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে নেত্রকোনার জেলার দুই রাজাকার মুসলিম লীগ নেতা আতাউর রহমান ননি ও নেজামে ইসলামের ওবায়দুল হক তাহেরের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের ১২তম সাক্ষী আব্দুল হান্নান চৌধুরী জবানবন্দী প্রদান করেছেন। আজ সোমবার ১৩তম সাক্ষীর জন্য দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। অন্যদিকে ট্রাইব্যুনালের জরিমানার বিরুদ্ধে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরীর দায়ের করা আপীলের শুনানির জন্য আজ সোমবার দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। রবিবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ও আপীল বিভাগ এসব আদেশ প্রদান করেছে। যশোরের রাজাকার সাখাওয়াত হোসেনসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নেয়ার বিষয়ে ৮ সেপ্টেম্বর আদেশ দেবে ট্রাইব্যুনাল। রবিবার চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ আদেশের এই দিন ঠিক করে দেয়। ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই সদস্য হলেন বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি আনোয়ারুল হক। অভিযোগ আমলে নেয়ার বিষয়ে এদিন প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন জেয়াদ আল মালুম। আসামি পক্ষে ছিলেন সাত্তার পাহলোয়ান।
প্রসিকিউটর রেজিয়া সুলতানা চমন জনকণ্ঠকে বলেন, এ মামলার ১২ আসামির বিরুদ্ধে পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়েছে। এর মধ্যে ধর্ষণের একটি; অপহরণ করে হত্যার দুটি; অপহরণ, আটক, নির্যাতন ও অগ্নিসংযোগের দুটি অভিযোগ রয়েছে। সাখাওয়াত ছাড়া বাকি আসামিরা হলেন মোঃ বিল্লাল হোসেন বিশ্বাস, মোঃ আকরাম হোসেন, অজিহার মোড়ল, মোঃ ইব্রাহিম হোসাইন, শেখ মোঃ মজিবুর রহমান, এম এ আজিজ সরদার, আব্দুল আজিজ সরদার, কাজী ওহিদুল ইসলাম, মোঃ লুৎফর মোড়ল, মোঃ আব্দুল খালেক এবং মশিউর রহমান। আসামিদের মধ্যে সাখাওয়াত, বিল্লাল, আকরাম ও অজিহার মোড়ল গ্রেফতার হয়ে কারাগারে রয়েছেন। ২০১২ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি এই ১২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্ত শুরু করে তদন্ত সংস্থা। গত ১৮ জুন তদন্ত প্রতিবেদন ট্রাইব্যুনালে দাখিল করা হয়।
বর্তমানে জাতীয় পার্টির ধর্ম বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্বে থাকা সাখাওয়াত এক সময় ছিলেন জামায়াত নেতা। ১৯৯১ সালে জামায়াতে ইসলামীর পক্ষে নির্বাচনে দাঁড়িয়ে যশোর-৬ আসন থেকে তিনি সাংসদ নির্বাচিত হন। কিন্তু মেয়াদপূর্তির আগেই জামায়াত ছেড়ে বিএনপিতে যোগ দেন। মাওলানা সাখাওয়াত নামে বেশি পরিচিত এই রাজনীতিবিদ বিভিন্ন সময়ে এলডিপি ও পিডিপিতেও ঘুরে এসেছেন। গত সংসদ নির্বাচনে যশোর-৬ আসন থেকে তিনি জাতীয় পার্টির মনোনয়নও পেয়েছিলেন।
পাঁচ অভিযোগ ॥ অভিযোগ ১ যশোরের কেশবপুর উপজেলার বোগা গ্রামে এক নারীকে অপহরণ, আটক, নির্যাতন এবং ধর্ষণ। অভিযোগ ২ : একই উপজেলার চিংড়া গ্রামের চান্দতুল্লা গাজী ও তার ছেলে আতিয়ারকে অপহরণ, আটক, নির্যাতন ও হত্যা। অভিযোগ ৩ : কেশবপুরের চিংড়া মোঃ নুরুদ্দিন মোড়লকে অপহরণ, আটক, নির্যাতন। অভিযোগ ৪ : কেশবপুরের হিজলডাঙ্গার আঃ মালেক সরদারকে অপহরণ, আটক, নির্যাতন ও খুন। অভিযোগ ৫ : কেশবপুরের মহাদেবপুর গ্রামের মিরন শেখকে অপহরণ, আটক, নির্যাতন এবং ওই গ্রামে অগ্নিসংযোগ ও লুণ্ঠন।
ডা ঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরী ॥ ট্রাইব্যুনালের জরিমানার বিরুদ্ধে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরীর দায়ের করা আপীলের শুনানির জন্য আজ সোমবার নির্ধারণ করা হয়েছে। এক আবেদনের প্রেক্ষিতে রবিবার প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপীল বেঞ্চ এই দিন ধার্য করে।
রবিবার আদালতে জাফরুল্লাহর পক্ষে সময়ের আবেদন করেন ব্যারিস্টার আব্দুল্লাহ আল মামুন।
উল্লেখ্য, ট্রাইব্যুনালের সাজার বিষয়ে বিবৃতি দেয়ায় গত ১০ জুন ট্রাইব্যুনাল জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে এক ঘণ্টার কারাদ- ও পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করেন। চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল-২ তাকে এই সাজা ও জরিমানা করে আদেশ দেয়। ওদিন আদেশে ট্রাইব্যুনাল বলেন, এই এক ঘণ্টা জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে আসামির কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে কাটাতে হবে। আর পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে তাকে আরও এক মাসের কারাদ-াদেশ ভোগ করতে হবে। ওই জরিমানার বিরুদ্ধে তিনি আপীল করেছেন।
নেত্রকোনার দুই রাজাকার ॥ একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত নেত্রকোনার মোঃ ওবায়দুর হক তাহের ও আতাউর রহমান ননীর বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের ১২তম সাক্ষী মোঃ আব্দুল হান্নান চৌধুরী জবানবন্দী প্রদান করেছেন। জবানবন্দী শেষে আসামি পক্ষের আইনজীবী তাকে জেরা করেছেন। সোমবার প্রসিকিউশনের ১৩তম সাক্ষীর জবানবন্দীর জন্য দিন নির্ধারণ করা হয়েছে।