ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আগামী এক বছরে ভারত থেকে আসছে আরও ৬শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুত

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ২৭ জুলাই ২০১৫

আগামী এক বছরে ভারত থেকে আসছে আরও  ৬শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুত

রশিদ মামুন ॥ আগামী এক বছরের মধ্যে ভারত থেকে আরও ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত আমদানি করা হবে। এরমধ্যে ডিসেম্বরেই আসছে ত্রিপুরা থেকে ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত। এর মধ্যদিয়ে ভারত থেকে বিদ্যুত আমদানি এক হাজার ১০০ মেগাওয়াটে উন্নীত হবে। পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি সূত্র বলছে ত্রিপুরার সঙ্গে বিদ্যুত বিনিময়ের আন্তঃসংযোগ ডিসেম্বরের আগেই শেষ হবে। অন্যদিকে ডিসেম্বর থেকেই সিমেন্স ভেড়ামারায় নতুন সাবস্টেশন নির্মাণ শুরু করবে। ভারতের পাওয়ার সিস্টেম অপারেশন কর্পোরেশনের নির্বাহী ভি কে আগারওয়াল সম্প্রতি জানান, তারা বাংলাদেশে অতিরিক্ত ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত রপ্তানি করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। তিনি বলেন এখন বাংলাদেশে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত রপ্তানি করছে ভারত। ভারত-বাংলাদেশ দুই সরকারের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে বিদ্যুত রপ্তানির প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে বলে জানান তিনি। এজন্য ইতোমধ্যে বাংলাদেশ সাবস্টেশন নির্মাণের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। ভারত থেকে এখন ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের মধ্যে ভারতের রাষ্ট্রীয়খাত থেকে ২৫০ এবং বেসরকারী খাত থেকে আরও ২৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুত আমদানি হচ্ছে। কিন্তু ফুললোডে বিদ্যুত সরবরাহ করলেও সঞ্চালনক্ষতি এবং প্রাথমিক ব্যবহার বাদ দিয়ে বাংলাদেশ ৪৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুত পাওয়া যায়। কখনও কখনও সরবরাহ ৪৭০ মেগাওয়াটের কিছু হয়ে থাকে। বিদ্যুত বিভাগ সূত্র জানায়, আমাদের সঞ্চালন লাইনের ক্ষমতা এক হাজার মেগাওয়াট। আর ব্যাক টু ব্যাক সাবস্টেশনের ক্ষমতা ৫০০ মেগাওয়াট। নতুন করে বিদ্যুত আমদানি করতে হলে সাবস্টেশনের ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে। বিশ্বব্যাংকের গ্রুপ প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স কর্পোরেশন (আইএফসি) সাবস্টেশনের ক্ষমতা বৃদ্ধিতে অর্থায়ন করতে চায় এই প্রকল্পে। বাংলাদেশ ভারত বিদ্যুত সঞ্চালন লাইনে ভারতের বহরমপুর থেকে সে দেশের সীমান্ত প্রান্ত পর্যন্ত ১৯৫টি টাওয়ার স্থাপন করা হয়েছে। মোট ৭০ কিলোমিটার লম্বা এই সঞ্চালন লাইন। অন্যদিকে বাংলাদেশের ভেড়ামারা স্টেশন থেকে দৌলতপুর উপজেলার রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের প্রকটনগর সীমান্ত পর্যন্ত ৭৮টি টাওয়ার স্থাপন করা হয়েছে। যা ২৭ কিলোমিটার লম্বা বিদ্যুত সঞ্চালন লাইন। বাংলাদেশ ভারত মিলে পুরো ৯৭ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করা হয়েছে। যার বিদ্যুত পরিবহন ক্ষমতা এক হাজার মেগাওয়াট। এছাড়া ভেড়ামারাতে সাবস্টেশন করার জন্য আগে থেকে জমিও অধিগ্রহণ করা হয়েছে। বেশিরভাগ অবকাঠামো এবং জমি থাকায় এবার সাবস্টেশন স্থাপনে কম সময় প্রয়োজন হবে বলে পিজিসিবি জানিয়েছে। পিজিসিবি সূত্র জানায়, ভেড়ামারাতে আরও একটি ৫০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন সাবস্টেশন নির্মাণের জন্য একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেই তাদের দর কষাকষি চলছে। এর আগেও সিমেন্স ইন্ডিয়া নামের এই প্রতিষ্ঠানটি ভেড়ামারাতে অন্য সাবস্টেশনটি বসিয়েছে। যদিও একমাত্র দরদাতা এই প্রতিষ্ঠানটিকে কাজ দেয়ার বিষয়ে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। জানতে চাইলে পিজিসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুম আল বেরুনী জনকণ্ঠকে বলেন, সাবস্টেশন নির্মাণে আগ্রহী সিমেন্সের সঙ্গে আমাদের দর কষাকষি চলছে। আশা করছি আমরা ডিসেম্বরের মধ্যেই নতুন সাবস্টেশনটি নির্মাণ শুরু করতে পারব। প্রকল্পর ব্যয় ৮০০ কোটি টাকা হবে বলে জানান তিনি। বিদ্যুত বিভাগ সূত্র জানায়, ভারতের বেসরকারীখাতই এই বিদ্যুত বাংলাদেশে সরবরাহ করবে। দরপত্রের মাধ্যমে বাংলাদেশকে এই বিদ্যুত কিনে আনতে হবে। তবে বিদ্যুত বিভাগ সূত্র জানায়, ভারতীয় একটি প্রতিষ্ঠান নেপাল থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত বাংলাদেশের কাছে বিক্রি করতে আগ্রহ প্রকাশ করছে। যেহেতু নেপালের সঙ্গে আমাদের গ্রিড লাইন নেই। তাই ওই বিদ্যুত ভারতকে দিয়ে আমরা বিকল্প হিসেবে আমাদের গ্রিড লাইন দিয়ে ভারত থেকে বিদ্যুত নিতে পারি। আলোচনার সময় বিষয়গুলো বিবেচনায় নেয়া হতে পারে। অন্যদিকে ডিসেম্বরেই ত্রিপুরার পালাটানা বিদ্যুত কেন্দ্র থেকে ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত আসবে। ভারতের ত্রিপুরা থেকে ডিসেম্বর মাসেই ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত আসবে। এজন্য কুমিল্লা থেকে ত্রিপুরা পর্যন্ত উচ্চ ক্ষমতার বিদ্যুত সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করা হচ্ছে। কুমিল্লা ও ত্রিপুরা অংশে মোট ৫৪ কিলোমিটার সঞ্চালন লাইন করা হচ্ছে। এরমধ্যে বাংলাদেশ অংশে ২৮ কিলোমিটার এবং ভারত অংশে ২৬ কিলোমিটার। ভারতের পালাটানা বিদ্যুত কেন্দ্র থেকে এই ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত আমদানি করা হবে। ‘ত্রিপুরা (ভারত) কুমিল্লা দক্ষিণ (বাংলাদেশ) গ্রীড ইন্টারকানেকশন প্রজেক্ট’ প্রকল্পের আওতায় এই সঞ্চালন লাইন করা হচ্ছে। ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার পালাটানা থেকে বিদ্যুত বাংলাদেশকে দেয়ার অনুমতিও দিয়েছে। ভারতের পালাটানা বিদ্যুত কেন্দ্রের যন্ত্রাংশ পৌঁছে দিতে বাংলাদেশ সহায়তা করেছিল। তথনই ত্রিপুরা সরকার এখান থেকে ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত বাংলাদেশকে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। তবে কেন্দ্রীয় সরকারের অনুমোদনের জন্য বিদ্যুত সরবরাহে কিছুটা দেরি হয়। জানতে চাইলে পিজিসিবির নির্বাহী পরিচালক (পরিকল্পনা এবং উন্নয়ন) চৌধুরী মোঃ আলমগীর হোসেন জনকণ্ঠকে বলেন, ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ করার সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়েছে। আশা করছি তার আগেই কাজ শেষ করা সম্ভব হবে। এরপরই বিদ্যুত আমদানি শুরু করা যাবে।
×