স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ চোটের কারণে বছরটা মোটেও ভাল যাচ্ছিল না উসাইন বোল্টের। মেরুদন্ডের চোট কাটিয়ে প্রায় দেড় মাস পর ফেরেন প্রিয় ট্র্যাকে। ফিরেই বিশ্বের দ্রুততম মানব জানিয়ে দিয়েছেন তিনি ফুরিয়ে যাননি। লন্ডন ডায়মন্ড লীগের ১০০ মিটার স্প্রিন্ট ৯.৮৭ সেকেন্ড সময় নিয়ে স্বর্ণপদক জিতেছেন জ্যামাইকান এই গতিদানব। আর স্বগর্বে জানিয়ে দিয়েছেন, তিনিই এখনও নাম্বার ওয়ান। অলিম্পিকে ছয় স্বর্ণজয়ী বোল্ট আরেকবার লন্ডন জয় করে উচ্ছ্বাসে ভাসছেন। ২০১২ অলিম্পিকের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত গেমসে সেরা হন তারকা এই অ্যাথলেট। গত কয়েক মাস ধরেই ফিটনেস সমস্যায় ভুগতে থাকা বোল্ট এই দৌড় জিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের আগে ফর্মে ফেরার ইঙ্গিত দিয়েছেন। লন্ডনের অলিম্পিক স্টেডিয়ামে ভেজা আবহাওয়ার মধ্যেও মৌসুমে নিজের সেরা টাইমিং করেন বোল্ট। বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে ১০০ ও ২০০ মিটার স্প্রিন্টের স্বর্ণজয়ী জ্যামাইকার এই স্প্রিন্টার যেন মুকুট ধরে রাখতে স্বরূপে ফিরছেন। ১০০ ও ২০০ মিটারে বিশ্ব রেকর্ডের মালিক বোল্ট শুক্রবার দৌড় শেষ করেন ৯.৮৭ সেকেন্ডে। এটা এ বছরের ষষ্ঠ সেরা টাইমিং। বছরের প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ সেরা টাইমিং করেন যুক্তরাষ্ট্রের জাস্টিন গ্যাটলিন। হাঁটু ও পেলভিসের সমস্যার কারণে বোল্ট অবশ্য এর আগে এ বছর মাত্র একবারই ১০০ মিটার দৌড়ে অংশ নিয়েছিলেন। গত এপ্রিলে সেই দৌড়ে তিনি সময় নেন ১০.১২ সেকেন্ড।
ডায়মন্ড লীগে দৌড়ের শুরুটা অবশ্য ভাল করতে পারেননি বোল্ট। তবে শেষ ১০ মিটারে প্রতিপক্ষদের ছিটকে ফেলেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের মাইকেল রজার্সের চেয়ে ০.০৩ সেকেন্ড কম সময় নিয়ে ফিনিশিং লাইন পার করেন ২৮ বছর বয়সী এই গতির বিস্ময়। জ্যামাইকার কেমার বেইলি-কোল ৯.৯২ সেকেন্ড সময় নিয়ে তৃতীয় হন। লন্ডনের এই আসরে গ্যাটলিন আর আসাফা পাওয়েল ছিলেন না। আগামী মাসে বেজিংয়ে বসতে যাচ্ছে বিশ্ব এ্যাথলেটিকস চ্যাম্পিয়নশিপের আসর। এ আসরে ৮টি স্বর্ণজয়ী বোল্ট তার ১০০ ও ২০০ মিটার স্প্রিন্টের মুকুট ধরে রাখার মিশনে নামার আগে বেশ আত্মবিশ্বাসী। লন্ডন জয়ের পর গতির সম্রাট বলেন, আমি এখনও এক নম্বর। কখনই দুই নম্বরে ছিলাম না। আর এক নম্বর হিসেবেই চালিয়ে যাব। অবসর নেয়া পর্যন্ত এটাই আমার পরিকল্পনা। ২২ আগস্ট থেকে বেজিংয়ে শুরু হবে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ। সাত বছর আগে যে বার্ড’স নেস্ট স্টেডিয়ামে ১০০ ও ২০০ মিটার এবং ৪ গুণিতক ১০০ মিটার রিলের অলিম্পিক ‘ট্রিপল’ জিতেছিলেন। সেখানে ভাল করতে মুখিয়ে আছেন বোল্ট। বলেন, বেজিংয়ে ট্র্যাকে নামার আগে আমাকে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। আমাকে আরও তুলে ধরতে হবে নিজেকে। এখন ভালই বোধ করছি। তবে আরও ধারাবাহিক হতে হবে। এমনিতেই আমুদে স্বভাবের। তার আবভাবে মনে হয়, অসম্ভব বলে কিছু নেই! যখন যা ইচ্ছে করে তাই করে বসেন। বোল্ট আসলে এমনই। জ্যামাইকান এই কালোমানিক ট্র্যাক এ্যান্ড ফিল্ডে যা করে চলেছেন তা রীতিমতো অবিশ্বাস্য। লন্ডন অলিম্পিকে ১০০ মিটার স্প্রিন্টে রেকর্ড গড়ে দ্রুততম মানব হওয়ার পরই তাকে তুল্য করা হচ্ছিল অতিমানব বলে। লন্ডনেই দৌড়ের দুনিয়ায় একমাত্র ব্যক্তি হিসেবে স্প্রিন্টে ডাবল জয়েরও কৃতিত্ব দেখিয়েছিলেন। অনেকটা অলৌকিক কা-ের পর অনেকেই বোল্টকে ভিনগ্রহের মানুষের সঙ্গে তুলনা করেন। কেউ কেউ তো বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না, বোল্ট রক্ত-মাংসের মানুষ কিনা!