ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

শ্রাবণে বৃষ্টিবন্দী সময়

ওগো, আজ তোরা যাস নে ঘরের বাহিরে...

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ২৬ জুলাই ২০১৫

ওগো, আজ তোরা যাস নে ঘরের বাহিরে...

মোরসালিন মিজান ॥ শ্রাবণ বরাবরই বৃষ্টির। বর্ষণের। তাই বলে এতো? এত্তো? আকাশ সেই কবে কাঁদতে শুরু করেছিল, এখনও থামার নাম নেই। টানা বৃষ্টিতে জগৎ সংসার ধুয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। কত কত কাজ। ভেসে যাচ্ছে। তবু ষড়ঋতুর বাংলাদেশে বর্ষার রাজত্ব। ঘর থেকে বের হতে পারছে না মানুষ। একরকম গৃহবন্দী সময় কাটাচ্ছে। আর যারা বের হচ্ছেন, ভিজে জবুথবু। শুধু কী মানুষ? একপায়ে দাঁড়িয়ে থাকা তালগাছটা বৃষ্টিতে ভিজে ক্লান্ত এখন। রোদ চাই তার। নীড় হারা পাখির চাই নতুন আশ্রয়। খুঁজে নেয়ার সময়টুকুও দিচ্ছে না বৃষ্টি। সারাদেশের মতো রাজধানী শহরের প্রকৃতি পরিবেশও বদলে গেছে। শ্রাবণ মেঘের দিনে শহর ঢাকাকে মনে হচ্ছে জলে ভাসা পদ্ম। এবার বর্ষার একেবারে গোড়া থেকেই বৃষ্টি। এমনকি আষাঢ়ের প্রথম দিনটি এর বাইরে ছিল না! সকালে চারুকলা ও বাংলা একাডেমিতে প্রিয় ঋতু বরণে উৎসব আয়োজন করা হয়েছিল। বর্ণাঢ্য আয়োজন। কিন্তু বেশি দূর এগোনো যায়নি। মাঝপথে সব ভ-ুল করে দিয়েছিল বেরসিক বৃষ্টি। যেন সেদিন আভাসটা দিয়েছিল। তারপর থেকে বাস্তবায়ন। অল্পস্বল্প বৃষ্টির আষাঢ় মাস এবার বর্ষার পূর্ণ রূপ পরিগ্রহ করেছিল। নবধারা জল উস্কে দিয়েছিল বটে গান কবিতাকে। তবে তা কিছুদিনের জন্য। অচিরেই কবিতা থেকে বিস্মৃত হতে হয় বাঙালীকে। মুখ্য হয়ে ওঠে কাঁদাজল! বিশেষ করে এই শ্রাবণে যে বৃষ্টি, খুব রোম্যান্টিক মানুষও একে ‘বাড়াবাড়ি’ বলে দিচ্ছেন! বলবেন-ই বা না কেন? বৃষ্টির বাধায় সবই যে গোল্লায় যাচ্ছে। কত শত প্রস্তুতি পরিকল্পনার ঈদ! আনন্দে ভেসে যাওয়ার কথা ছিল। অথচ সব ভাসিয়ে নিয়ে গেল শ্রাবণধারা। ঈদ আনন্দের অনেকটাই ধুয়ে গেছে। নতুন পাঞ্জাবি খুলে রেখে ছেলেরা এমনকি টি-শার্ট পরে ঘর থেকে বের হয়েছেন। মেয়েদের একাধিক নতুন জামা। শাড়ি। কী সুন্দর সাজুগুজু। এভাবে ধুয়ে দিতে আছে? অথচ তাই হলো। ঈদের দিন তাঁদের ঘরে বসে কাটাতে হলো। পরের দিনটা নিশ্চয়ই পাওয়া যাবে। না, এদিনও বৃষ্টি। এভাবে শেষ হলো ঈদের তিনদিনের ছুটি। এখনও চলছে ভারি বর্ষণ। ঈদ আনন্দের সঙ্গে মিলেমিশে গিয়েছিল ক্রিকেট। গৃহবন্দী ভক্তরা ক্রিকেটে খুঁজে নিচ্ছিলেন সান্ত¡না। চট্টগ্রামে সাউথ আফ্রিকার বিরুদ্ধে টেস্ট জয়ের নেশাও পেয়ে বসেছিল বাংলাদেশী সমর্থকদের। এই যখন অবস্থা তখন আবারও আলোচনায় বৃষ্টি। তুমুল বর্ষণে ভেসে যায় জহুর আহমেদ স্টেডিয়াম। ফলে প্রথম টেস্টের চতুর্থ ও পঞ্চম দিন মাঠেই গড়াতে পারেনি খেলা। শনিবার তাই টেস্ট ড্র হওয়ার ঘোষণা দেয়া হয়। ঈদের ছুটি শেষে যারা ঢাকায় ফিরছেন তাদের অবস্থা আরও বেগতিক। বাস ট্রেন লঞ্চ থেকে নামতে না নামতেই ভিজে যাচ্ছে গা। ছোট্ট বাবুটাকে রক্ষা করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। কাপড় জামা ভর্তি ব্যাগ বাঁচাতে হচ্ছে যুদ্ধ করে। টানা বর্ষণের কারণে এবার সড়ক দুর্ঘটনাও বেড়েছে। বিয়োগান্তক ঘটনা ঘটেছে অনেকগুলো। অনেকের ঢাকায় ফেরা বিলম্বিত হচ্ছে। আর যারা এরই মাঝে চলে এসেছেন কর্মস্থলে, বৃষ্টি মাথায় নিয়ে অফিস করছেন। অনেকে ছাতা ব্যবহারে অভ্যস্ত নন। সেই তাঁরাও সঙ্গে ছাতা বহন করছেন। রাজধানী ঢাকার প্রধান সড়কগুলো ধুয়ে পরিষ্কার হয়েছে। তবে অপেক্ষাকৃত নিচু এলাকা ডুবে আছে জলে। পাড়ায় প্রবেশের রাস্তায় গর্ত। যখন তখন উল্টে পড়ছে রিক্সা। আরও কতো রকমের দুর্ভোগ যে সৃষ্টি করে রেখেছে বৃষ্টি! শ্রাবণের টানা বৃষ্টিতে বিপুল ক্ষতির মুখে পড়েছে সবজি ফুল এবং বীজতলা। যারপর নাই শঙ্কিত কৃষক। ঢাকার রমনা পার্ক, সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানের সবুজ গাছগুলোর দিকে তাকিয়েও বোঝা যায়, এবার একটু রোদ চাই তাদের। ভোটানিক্যাল গার্ডেন নামে পরিচিত মিরপুরের জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানে বহু পাখি নীড় হারা। তুমুল বর্ষণে গাছের ডালে বাধা বাসা খসে পড়েছে। বৃষ্টির ছন্দে পাখা দোলানো পাখি আছে। তবে নীড়হারা পাখিগুলো ছিল বিষন্ন। বৃষ্টিতে টানা ভিজে কিছু পাখি যেন ক্লান্ত। জবুথবু শরীর। এই পাখা মেলে ওড়ার তেমন সুযোগ নেই। ফলে পাতার আড়ালে চুপটি করে বসে আছে। পথিককে দেখেও নড়ছে না। উল্টো যেন সতর্ক করছে। নিজের ভাষায় বলার চেষ্টা করছেÑ ওগো, আজ তোরা যাস নে ঘরের বাহিরে...।
×