ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে টাইগারদের গৌরবময় ড্র

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ২৬ জুলাই ২০১৫

দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে টাইগারদের গৌরবময় ড্র

মোঃ মামুন রশীদ, চট্টগ্রাম থেকে ॥ মাঠে দুই প্রতিপক্ষ বাংলাদেশ-দক্ষিণ আফ্রিকা। কিন্তু বৈরী প্রকৃতি অদৃশ্য আততায়ীর মতো ওতপেতে ছিল হামলে পড়ার জন্য। শেষ দু’দিন বৃষ্টিই তৃতীয় প্রতিপক্ষ হিসেবে হামলে পড়ল, দু’দলই পরাজিত হলো অঝোর বর্ষার কাছে। চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে ময়দানি লড়াইয়ে হারজিত কোনটারই শিকার হয়নি টাইগার কিংবা প্রোটিয়া শিবির, জিতেছে টানা দু’দিন বল মাঠে গড়াতে না দেয়া প্রবল বৃষ্টি। এই প্রথম দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে কোন টেস্ট ড্র করল বাংলাদেশ দল। আগের আট টেস্টেই নির্মম পরাজয়ের রূঢ় থাবায় বেদনায় নীল হয়েছিল বাংলাদেশ, সাত টেস্টে ছিল ইনিংস ব্যবধান। তবে চতুর্থ দিনের মতোই পঞ্চম দিনেও বৃষ্টির জন্য খেলা না হওয়াতে দুই অধিনায়কের সম্মতিতে সাগরিকা টেস্ট ড্র ঘোষণা করলেন আম্পায়াররা। বৃষ্টির কারণে দু’দিন এবং সবমিলিয়ে ২৩০ ওভার খেলা না হওয়াতে অবশ্য অনেকেই কটাক্ষের দৃষ্টি হানবেন এই ড্র টেস্টের দিকে। কিন্তু প্রথমবার প্রথম দিনেই প্রোটিয়াদের গুটিয়ে দেয়া, প্রথম ইনিংসে ৭৮ রানের লিড নেয়া, প্রথমবার প্রোটিয়াদের বিরুদ্ধে তিন শতাধিক রান করা এবং তৃতীয় দিন পর্যন্ত ১৭ রানে এগিয়ে থাকাটা তো আর এমনি এমনি হয়নি। হিসেব কষলে যে আড়াই দিন খেলা হয়েছে তাতে ব্যাটিং-বোলিংয়ে দারুণ নৈপুণ্য দেখিয়ে সুস্পষ্টভাবেই এগিয়ে ছিল বাংলাদেশ। আর এটিকে দলগতভাবে ওয়ানডের নৈপুণ্য ধরে রাখার চ্যালেঞ্জটা সফলতার সঙ্গে সামাল দিতে পেরেছে টাইগাররাÑ এমন দাবিই করলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মুশফিকুর রহীম। এ নিয়ে ১৪ টেস্ট ড্র করল বাংলাদেশ। আর নতুন এ প্রাপ্তি দেশের মানুষের মনে ক্রিকেটের আবেগ আরও বাড়িয়ে দিল। দেশের মানুষের সঙ্গে এখন মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে টাইগার টিম এবং তাদের ক্রিকেট নৈপুণ্য। উপমহাদেশে সবসময়ই বিশাল আবেগের স্থান নিয়েছে ক্রিকেট। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষের জন্য আবেগে উদ্বেলিত হয়ে কাঁদার উপায়ও ছিল না। বিশেষ করে টেস্ট ক্রিকেটে নির্মম পরাজয়Ñ সেটাই যেন ছিল বাস্তব। স্বপ্নের কোন ঠাঁই ছিল না। এতদিন স্বপ্ন এবং বাস্তব ভিন্ন দুই মেরুর বাসিন্দা বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য। কারণ আবেগে ক্রিকেট হয় না। বাস্তবের নির্মম পরিহাস নীরবে হজম করে যাওয়া ছাড়া কোন গত্যন্তর ছিল না। এ কারণে আবেগের রাশটা টেনেই ধরে রেখেছিলেন বাংলাদেশের ক্রিকেট পাগল মানুষ। তবে পরিস্থিতি ক্রমেই পাল্টে যেতে শুরু করেছে। গত এপ্রিলে পাকিস্তান, জুনে ভারত এবং এবার দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে টি২০ এবং ওয়ানডে সিরিজে যে অভাবনীয় সাফল্য এনে দিয়েছেন ক্রিকেটাররা, ক্রিকেট বাংলার প্রতিটি ঘরে ঘরেই ঠাঁই করে নিয়েছে। এর কারণ টাইগারদের ক্রিকেট উন্নতির গ্রাফটা ক্রমান্বয়ে উর্ধমুখী হওয়াতে এখন সেটা অন্তরে ঠাঁই নিয়েছে বাংলাদেশের মানুষের। তবু ক্রিকেট বুঝে যাওয়া বাংলাদেশের মানুষ ধরেই নিয়েছিলেন বিশ্বের এক নম্বর টেস্ট দল দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে চিরাচরিতভাবে যা অতীতে ঘটেছিল সেটার পুনরাবৃত্তিই ঘটবে। কিন্তু ঘটল উল্টোটা। বাংলাদেশ দুর্দান্ত খেলল সাগরিকায় প্রথম টেস্টের প্রথম দিন থেকেই। প্রোটিয়া শিবির ২৪৮ রানেই গুটিয়ে গেল প্রথম ইনিংসে তরুণ পেসার মুস্তাফিজুর রহমানের ৪ বলে ৩ উইকেট শিকারের ভয়ঙ্কর এক স্পেলের জন্য। নায়ক হলেন তিনিই। সবমিলিয়ে চারটি উইকেট নিলেন। আর তাতেই এ নির্মম পরিণতি প্রোটিয়াদের। প্রথম ইনিংসে ৩২৬ রান তুলে ৭৮ রানে লিড নিয়েছিল বাংলাদেশ। সেখানে অনেকটাই অপ্রতিভ থাকলেন বিশ্বসেরা বোলার গতিময় ডেল স্টেইন, ৭ নম্বর র‌্যাঙ্কিংয়ে থাকা পেসার ভারনন ফিল্যান্ডার ও ৯ নম্বরে থাকা মরনে মরকেলরা। তাদের পেছনে ফেলে সে কারণেই সাগরিকা টেস্টে অভিষেকেই ম্যাচসেরা হলেন মুস্তাফিজ। অভিষেক ওয়ানডে ও অভিষেক টেস্টে ম্যাচসেরা হয়ে গড়লেন বিশ্বরেকর্ড। ক্রিকেটের ইতিহাসেই নেই এমন ঘটনা। টেস্ট ইতিহাসে অবশ্য অভিষেকেই মুস্তাফিজের আগে ম্যাচসেরা হয়েছেন আরও ৩৯ ক্রিকেটার। সবমিলিয়ে ৯২ টেস্ট খেলল বাংলাদেশ। এর মধ্যে ১৪ ড্র এবং ৭ জয়। বিপরীতে আছে ৭১ পরাজয়। এর মধ্যে অবশ্য আটটি ড্র-তেই আছে বৃষ্টির ভূমিকা। কিন্তু সাগরিকা টেস্টে বোঝা যায়নি এক নম্বর টেস্ট দলের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছিল ৯ নম্বরে থাকা বাংলাদেশ। এক আর দুইয়ের অবস্থানটা খুব নিকটে বলেই হয়ত তেমন কোন গরমিল নেই। হয়ত তিন নম্বর অবস্থানের সঙ্গেও পার্থক্যটা নেই। তবে এক আর নয়ের মধ্যে বিস্তর তফাতটা খালি চোখেই পরিষ্কার বোঝা যায়। বাংলাদেশ ক্রিকেট দল টেস্ট র‌্যাঙ্কিংয়ে ৯ নম্বরে এবং দক্ষিণ আফ্রিকা ১ নম্বরে। কিন্তু সেটা থাকল না সাগরিকা টেস্টের তিন দিন পর্যন্ত। নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখল বাংলাদেশ। আর এটাই আরেকবার বাংলাদেশ ক্রিকেটের এগিয়ে যাওয়ার নিদর্শন রাখল। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে আগের আট টেস্টে ৬টিতেই চার দিনে এবং দুটিতে মাত্র তিনদিনে নতিস্বীকার করেছিল বাংলাদেশ দল। এবার পুরো সময় খেলা হলে কী ঘটত, বোঝার উপায় নেই। তবে যেভাবে নিয়ন্ত্রণ টাইগারদের দখলে ছিল তাতে পঞ্চম দিন পর্যন্ত যাওয়াটাই স্বাভাবিক ছিল সাগরিকা টেস্ট। টেস্ট ক্রিকেটে কালেভদ্রে দুয়েকবার ভাল খেলতে পারলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বড় কোন প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে আহামরি ভাল সাফল্য দেখানোর ইতিহাস একেবারেই কম।
×