ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আইএসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কৌশল নিয়ে মতৈক্য

কুর্দী নেতাদের সঙ্গে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রীর বৈঠক

প্রকাশিত: ০৪:০৫, ২৬ জুলাই ২০১৫

কুর্দী নেতাদের সঙ্গে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রীর বৈঠক

ইসলামিক স্টেটের (আইএস) বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কৌশল গড়ে তুলতে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী এ্যাশটন কার্টার শুক্রবার কুর্দী নেতাদের সঙ্গে তাদের আঞ্চলিক রাজধানী আরবিলে আলোচনায় মিলিত হন। তিনি আইএসের বিরুদ্ধে কুর্দীদের সামরিক সাফল্যের খোঁজখবরও নেন। এদিকে তুরস্ক শুক্রবার রাতে সিরিয়া ও ইরাকে আইএস ও কুর্দী উভয়পক্ষের অবস্থানগুলোর ওপর বিমান হামলা চালায়। এর আগে এক সপ্তাহের সহিংসতায় আঞ্চলিক সংঘর্ষ তুরস্কের দক্ষিণ সীমান্ত জুড়ে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দেয়। খবর বিবিসি, গার্ডিয়ান ও টেলিগ্রাফের। আরবিলের বৈঠক শেষে এ্যাশটন মার্কিন ও কোয়ালিশন সৈন্যদের বলেন, কুর্দী সশস্ত্র বাহিনীই আমরা আইএসের বিরুদ্ধে গড়ে তুলতে চাই এমন এক বাহিনীর মডেল। এ বাহিনী পেশমার্গা নামে পরিচিত। তিনি বলেন, অবশ্যই স্থানীয় লোকজনেরই আইএসকে পরাজিত করতে হবে। উত্তর ও পশ্চিম ইরাকে এক সমর্থ ও উদ্বুদ্ধ স্থানীয় বাহিনী স্থলযুদ্ধে যাতে নেতৃত্ব দিতে পারে, আমরা সেজন্য তাদের সহায়তা করার কৌশল গ্রহণ করছি। তিনি বলেন, মার্কিন স্থল ও বিমান বাহিনী নিজেদের শক্তি দিয়ে আইএসকে পরাজিত করতে পারে, কিন্তু সেই সাফল্য স্থায়ী হবে না। তিনি এক সৈন্যদলের উদ্দেশে বলেন, আমরা আইএসকে স্থায়ীভাবে পরাজিত করার চেষ্টা করছি। আর এখানে বাস করে এমন লোকজনই কেবল সেটি করতে পারে। এটিই আসল কৌশল। আরবিলে কার্টার কুর্দী আঞ্চলিক সরকারের প্রেসিডেন্ট মাসুদ বারজানি এবং অন্যান্য সরকারী ও সামরিক কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করেন। যুক্তরাষ্ট্র আইএস যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কুর্দী সশস্ত্র বাহিনীকে প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র সহায়তা দিচ্ছে। কুর্দী বাহিনী ইরাকের উত্তর-পূর্বাঞ্চল আইএসকে প্রতিহত করতে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। কুর্দীরা রণক্ষেত্রে ইরাকি সৈন্যদের তুলনায় সাধারণত আরও বেশি অভিজ্ঞতা ও কার্যকরের পরিচয় দেয়। কুর্দিরা ইরাকের উত্তরাঞ্চলের বড় বড় অংশ জুড়ে অধিকাংশ প্রতিরক্ষামূলক অবস্থানগুলো নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখছে। তারা মসুল শহর পুনর্দখলের ইরাকি অভিযানে এক বড় ভূমিকা রাখবে বলে মনে করা হয়। ২০১৪-এর জুনে আইএসের হাতে মসুলের পতন ঘটে। এদিকে, তুরস্কের দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলের দিয়ারবাকির শহরের কাছে পিরিচক্লিক ঘাঁটিতে অবস্থানরত জঙ্গী বিমানগুলো শুক্রবার রাতে দ্বিতীয়বারের মতো আইএসের ওপর হামলা চালায়। এর আগে ওইদিন সকালের দিকে বিমান বাহিনী সিরীয় সীমান্তে জঙ্গী দলটির এক ঘাঁটিতেও অস্ত্রভা-ারে আঘাত হানে। কিন্তু শুক্রবার রাতেই কুর্দী গেরিলা দল কুর্দীস্তান ওয়ার্কার্স পার্টি (পিপিকে) জানায় যে, তুর্কি বিমানগুলো উত্তর ইরাকের সীমান্তবর্তী এলাকায় দলটির পশ্চাদভাগের ঘাঁটিগুলোর ওপর বোমাবর্ষণ করে। পিপিকে তুরস্কের কাছ থেকে স্বায়ত্তশাসন লাভের জন্য চার দশক ধরে লড়াই করে এসেছে কিন্তু এখন আইএসের বিরুদ্ধেও যুদ্ধ করছে। আল জাজিরার খবরে বলা হয়, ইরাকের আধাস্বায়ত্তশাসিত কুর্দী অঞ্চলের অংশ দাহুক প্রদেশের উত্তর এলাকায় পার্বত্য অবস্থানগুলোর ওপর ঐসব হামলা চালানো হয়। পিপিকের এক মুখপাত্র বলেন, তুর্কি যুদ্ধবিমান সীমান্তের কাছে আমাদের অবস্থানগুলোর ওপর বোমাবর্ষণ শুরু করে এবং সেই সঙ্গে ভারি গোলাবর্ষণ করা হয়। এক তুর্কি কর্মকর্তা ডেইলি সারাহ পত্রিকাকে নিশ্চিত করেন যে, সিরিয়ার আইএস লক্ষ্যবস্তু এবং ইরাকের পিকেকে শিবিরগুলোর ওপর হামলা চালানো হয়। হামলা শুক্রবার রাত এবং শনিবার ভোরেও অব্যাহত থাকে। ২০১৩ সালে পিপিকে সঙ্গে অস্ত্রবিরতি হওয়ার ঘোষণা দেয়ার পর এ প্রথম তুরস্ক উত্তর ইরাকে কুর্দীদের ওপর হামলা চালালো। বেসামরিক লোকজনের ওপর আত্মঘাতী বোমা হামলা চালানোর মতো তৎপরতা আইএসকে খুবই বিপজ্জনক এক দলে পরিণত করেছে। অপর দিকে তুরস্ক ও সিরিয়ার কুর্দী অঞ্চলগুলোকে ব্যাপক জনসমর্থনপুষ্ট পিকেকে সম্পূর্ণভাবেই ভিন্ন এক সংগঠন। তুরস্কের সরকার বিরোধী কুর্দী দল পিপলস ডেমোক্র্যাসি পার্টি জুনের সাধারণ নির্বাচনে শতকরা ১৩ ভাগ ভোট পায়। দলটির সঙ্গে পিপিকের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে বলে দেখা যায়।
×