ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

শুরু হলো ব্রিকস

প্রকাশিত: ০৩:৫৯, ২৬ জুলাই ২০১৫

শুরু হলো ব্রিকস

উদীয়মান অর্থনীতির দেশ ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকার সম্মিলিত জোট ব্রিকসের ‘নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক’ বা এনডিবির প্রধান কাজ হবে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে ঋণ বিতরণ করা। মূলত অবকাঠামো ও টেকসই উন্নয়ন খাতে এ ঋণ দেবে। ব্যাংক প্রতিষ্ঠার ঘোষণার এক বছর পর চলতি জুলাই মাসে ব্যাংকটি যাত্রা শুরু করেছে। ইতোমধ্যে ব্রিকসে যোগদানে আগ্রহ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া, মিসর, তুরস্ক, ইরান, আর্জেন্টিনা, নাইজিরিয়া, সিরিয়া, এমনকি গ্রীসও। বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের আদলে গড়ে ওঠা বলা হলেও ব্যাংকটি স্বতন্ত্র ধারার বলে দাবি করা হয়েছে। প্রচলিত পদ্ধতির উন্নয়ন ও পূর্ণতাদানই তাদের লক্ষ্য। মার্কিন অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ভবিষ্যত চ্যালেঞ্জ হিসেবেও দেখা হচ্ছে এই ব্যাংককে। বরং ওই সব প্রতিষ্ঠানের বিকল্প হিসেবে কাজ করার কথা বলেছে ব্যাংক। এর ‘অথরাইজড’ মূলধন (ক্যাপিটাল) হচ্ছে ১০০ বিলিয়ন ডলার। যাত্রা শুরু হয়েছে ৫০ বিলিয়ন ডলার নিয়ে। এর প্রধান কার্যালয় চীনের সাংহাইতে। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ অর্থনীতির দেশ চীন নিজেই ব্রিকস ব্যাংকের প্রধান পুঁজি বিনিয়োগকারী, যেটি কিছুদিন আগে এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেছে। ব্যাংকটি আগামী বছর থেকে পুরোদমে কাজ করবে। বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, এডিবি এই নয়া ব্যাংককে স্বাগত জানিয়ে যৌথভাবে কাজ করার আহ্বানও জানিয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, বিশ্বব্যাংকের একেবারে বিকল্প না হলেও প্রতিযোগিতা বাড়বে এখন। বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ এখন যেভাবে একচ্ছত্র ক্ষমতা ভোগ করে এবং শর্তারোপ করে, সেখানে এই ব্যাংকের অভ্যুদয় ইতিবাচক বৈকি। এর ফলে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অর্থনৈতিক শক্তির ভারসাম্য তৈরি হবে। নতুন অর্থনৈতিক কাঠামো দিয়ে চলমান অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে আরও কার্যকর করে গড়ে তুলতে পারে। ১৯৪৪ সালের জুলাই মাসে বহুজাতিক উন্নয়ন সংস্থা গঠনের ঘোষণা বিশ্ব অর্থনীতিতে এক বিরাট পরিবর্তনের সূচনা অবশ্য করেছিল। বিশ্বের ৪৪টি দেশের প্রতিনিধি সম্মেলনের মাধ্যমে গঠিত হয়েছিল আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল বা আইএমএফ এবং বিশ্বব্যাংক। আইএমএফের দায়িত্ব ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও বিশ্বব্যাংকের দায়িত্ব মার্কিনীরা নিয়ে ক্ষমতার ভাগ-বাটোয়ারার এক ফর্মুলা বের করেছিল। এই দুটি সংস্থার কার্যক্রম উন্নয়নশীল দেশে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে। বিশেষ করে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর অভ্যন্তরীণ রাজনীতি বিষয়েও এদের হস্তক্ষেপ নানা সময়ে সমালোচিত হয়েছে। বরং সংস্থা দুটো ধনী দেশগুলোর স্বার্থরক্ষায় সচেষ্ট এবং উদার। কিন্তু উন্নয়নশীল দেশের উন্নয়নে তেমন কোন ভূমিকা রাখতে পেরেছে, তা নয়। অবশ্য প্রতিষ্ঠার পর প্রথম ৩০ বছর এরা যে দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করত, পরবর্তী ৪১ বছরে তা থেকে সরে এসেছে। ব্রিকস ব্যাংক একটি উন্নয়ন ব্যাংক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করলেই হবে না, দীর্ঘমেয়াদে এর যৌক্তিক ও বাস্তবানুগ পদক্ষেপ দ্বারা উন্নয়নশীল দেশের উন্নয়ন কাঠামো গঠন এবং দারিদ্র্য বিমোচনে সক্রিয় ভূমিকা রাখা জরুরী। কর্মপন্থার মাধ্যমে ব্রিকস ব্যাংককে যেমন সম্প্রসারণ ঘটাতে হবে, তেমনি প্রমাণ করতে হবে উন্নয়নশীল দেশের ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের প্রতিক্রিয়াশীল এবং চাপিয়ে দেয়া ভুল সিদ্ধান্তের কারণে বিভিন্ন সময়ে ঋণগ্রহণকারী দেশের যে ক্ষতি হয়েছে, তা যেন আর অনুভূত না হয়। কোন বিশেষ রাজনৈতিক এজেন্ডা গ্রহণ করলে তা ব্যাংকটির জন্য হবে আত্মঘাতী। বাংলাদেশ ব্যাংকটির প্রারম্ভিক সদস্য হওয়ার আগ্রহ অনেক আগেই প্রকাশ করেছে। এর সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হওয়া গেলে লাভবান হবে বাংলাদেশ। এজন্য কূটনৈতিক পদক্ষেপসমূহ শক্তিশালী করা জরুরী। পদ্মা সেতু নিয়ে বিশ্বব্যাংক ও অন্য ঋণদাতাদের ভূমিকা বাংলাদেশ ভোলেনি। তাদের দুরভিসন্ধিমূলক তৎপরতা না থাকলে বাংলাদেশ অনেকদূর এগিয়ে যেত গত ছয় বছরে। তাই সরকারের উচিত সর্বাগ্রে ব্যাংকের সদস্যপদ অর্জন।
×