ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সাকার ফাঁসি বহাল রাখার দাবিতে গণজাগরণ মঞ্চের অবস্থান শুরু

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ২৫ জুলাই ২০১৫

সাকার ফাঁসি বহাল রাখার দাবিতে গণজাগরণ মঞ্চের অবস্থান শুরু

বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার ॥ প্রচ- বৃষ্টিকে উপেক্ষা করেই একাত্তরের ঘাতক যুদ্ধাপরাধী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর (সাকাচৌ) সর্বোচ্চ সাজা ফাঁসি বহাল রাখার দাবিতে শাহবাগে অবস্থান নিয়েছে গণজাগরণ মঞ্চ। পূর্ব ঘোষণা অনুসারে শুক্রবার বিকেল ৪টায় বৃষ্টির মধ্যে গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকারের নেতৃত্বে নেতাকর্মীরা জাতীয় জাদুঘরের মূল ফটকের সামনে অবস্থান নিয়েছে। ‘কুখ্যাত রাজাকার সাকার সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসির দাবিতে গণঅবস্থান’ এ ব্যানারে চলা কর্মসূচী থেকে গণজাগরণ মঞ্চের নেতৃবৃন্দ দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত অবস্থান নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করে তারা বলেছেন, ঝড়-বৃষ্টি-তুফান যাই আসুক না কেন কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী সাকার ফাঁসির রায় নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত রাজপথে আমাদের অবস্থান চলবে। মৃত্যুদ-ে দ-িত বিএনপি নেতা সাকার আপীলের রায় আগামী ২৯ জুলাই দেবেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত। এটিই চূড়ান্ত রায়। গণজাগরণ মঞ্চ নেতৃবৃন্দসহ দেশবাসীকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, চলমান অবস্থান কর্মসূচী চলবে আগামী ২৯ অক্টোবর আপীলের রায় পর্যন্ত। আমরা ইতোপূর্বেও দেখেছি কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী সালাউদ্দিন কাদের নানা কূটচালের আশ্রয় নিয়ে বিচার প্রক্রিয়াকে বিলম্বিত করতে চেয়েছে। কখনও বা বিচার প্রক্রিয়াকে বিতর্কিত করার অপপ্রয়াস চালিয়েছে। এই রায়কে কেন্দ্র করে স্বাধীনতাবিরোধী গোষ্ঠীর সব ষড়যন্ত্র রুখে দিতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সকল মানুষকে রাজপথে নেমে আসার আহ্বান জানাচ্ছি। আমাদের ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধই হবে স্বাধীনতাবিরোধীদের ষড়যন্ত্রের দাঁতভাঙা জবাব। বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের এই নেতার মৃত্যুদ-ের রায় যেন কোনভাবে ঘুরে না যায়, সেই লক্ষ্যে যে কোন পরিস্থিতে ধারাবাহিক কর্মসূচী চলবে বলে শুক্রবারের জমায়েত থেকে ঘোষণা দিয়েছেন গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার। জমায়েত শুরুর আগেই প্রচ- বৃষ্টি শুরু হয়। বিকেল পৌনে পাঁচটার সময় অনুষ্ঠিত ওই সমাবেশ থেকে মঞ্চের মুখপাত্র ডাঃ ইমরান এইচ সরকার বক্তব্য রাখছিলেন। তিনি বলেন, রায়কে প্রভাবিত করার জন্য ইতোমধ্যে নানা ধরনের ষড়যন্ত্রের চেষ্টা আমরা দেখেছি। রায়কে প্রভাবিত করার চেষ্টা বার বার করা হয়েছে। সাকা চৌধুরী এবং তার পরিবারের ধৃষ্টতা দেশের সবাই দেখেছে। রায় এবং বিচার প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য নানা ধরনের দেশী ও বিদেশী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। যা তার প্রাথমিক রায় প্রকাশের পর প্রতীয়মান হয়েছে। জামায়াত-বিএনপি ও জঙ্গিবাদী শক্তি দেশের বিভিন্ন স্থানে তা-ব চালিয়েছে। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে প্রশ্ন তুলে তার পক্ষে সাফাই গেয়েছে। গণমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে আমরা জানতে পেরেছি যে সাকা চৌধুরীর পরিবার প্রধান বিচারপতির সঙ্গে সাক্ষাত করেছে। সম্প্রতি একটি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম এ নিয়ে প্রতিবেদনও প্রকাশ করেছে। এ ধরনের তথ্যে আমরা শঙ্কিত। সাকা দেশের একটি রাজনৈতিক দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতা। তার জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক লবিংও যথেষ্ট শক্তিশালী। এ বিষয়গুলো রায়ের ক্ষেত্রে আদৌ কোন প্রভাব ফেলবে কি নাÑ এ বিষয়ে যথেষ্ট সন্দেহ ও শঙ্কার অবকাশ আছে। পরিস্থিতি যাই হোক দেশের সব মানুষকে সঙ্গে নিয়ে গণজাগরণ মঞ্চ এই যুদ্ধাপরাধীর যে কোন ষড়যন্ত্র রুখে দিবে। ঝড়-বৃষ্টি-তুফান যাই আসুক না কেন কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী সাকার ফাঁসির রায় নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত রাজপথে আমাদের অবস্থান চলবে। তিনি বলেন, এ পর্যন্ত যতগুলো যুদ্ধাপরাধীর বিচার এবং সাজা হয়েছে, তাদের মধ্যে সাকা চৌধুরীই সবচেয়ে ভয়াবহ ও নৃশংস। সাকা চৌধুরীর নেতৃত্বেই একাত্তরে চট্টগ্রামে গণহত্যার মহোৎসব চলে। একাত্তরে চট্টগ্রামে যত মানবতাবিরোধী অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধ হয়েছে সে সবের সঙ্গে তার সংশ্লিষ্টতা ইতোমধ্যে প্রমাণিত হয়েছে। ইমরান এইচ সরকার আরও বলেন, আমরা আশা করছি যে, সর্বোচ্চ আদালতে সাকা চৌধুরীর আপীলের রায় অপরিবর্তিত থাকবে। এমন কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধীকে সর্বোচ্চ শাস্তি দেয়া না গেলে মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযোদ্ধা, স্বাধীনতা এবং এর স্বপক্ষের শক্তির জন্য তা বড় অবমাননাকর। কোনভাবেই যেন যুদ্ধাপরাধীদের কোন ষড়যন্ত্রে এ বিচার প্রক্রিয়া প্রভাবিত না হয় সেদিকে দেশের সবাইকে লক্ষ্য রাখতে হবে। যে কোন ধরনের প্রতিবন্ধকতাকে রুখে দিয়ে আমরা যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাবো। তবে অতীতের মতো আর টানা কর্মসূচীতে থাকবেন না তারা। এ বিষয়ে তিনি বলেন, প্রতিদিন বিকেল চারটা থেকে শুরু করে রাত আটটা-দশটা পর্যন্ত অবস্থান, মিছিল, সমাবেশসহ বিভিন্ন কর্মসূচী চালিয়ে যাবো। আবহাওয়ার কারণে এসব কর্মসূচীতে কিছুটা পরিবর্তন আনা হতে পারে। সমাবেশ থেকে যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে বিভিন্ন ধরনের স্লোগান ও প্রতিবাদী গান পরিবেশ করা হয়। সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে দলমত নির্বিশেষে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সকল রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ছাত্র, যুব, নারী ও শ্রমিক সংগঠনের নেতাকর্মীর পাশাপাশি সর্বস্তরের সাধারণ মানুষকে রাজপথে নেমে এসে ফাঁসির দাবিতে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, গণজাগরণের মাধ্যমে জনগণ দেখিয়েছে জনতার চেয়ে বড় কোন শক্তি নেই। এ প্রতিবাদী জনতাই যুদ্ধাপরাধীমুক্ত মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ গড়বে। কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী সালাউদ্দিন কাদেরের সর্বোচ্চ শাস্তিই হবে; সেই আলোকোজ্জ্বল বাংলাদেশের পথে এক প্রত্যয়ী পদক্ষেপ। এর আগে ট্রাইব্যুনালের দেয়া মৃত্যুদ-াদেশ আপীলের রায়ে আমৃত্যু কারাদ-ে নেমে এসেছিল জামায়াতে ইসলামীর নায়েব আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ক্ষেত্রে। একাত্তরে চট্টগ্রামের রাউজানে কুন্ডেশ্বরী ঔষধালয়ের মালিক নূতন চন্দ্র সিংহকে হত্যা, সুলতানপুর ও ঊনসত্তরপাড়ায় হিন্দু বসতিতে গণহত্যা এবং হাটহাজারীর এক আওয়ামী লীগ নেতা ও তার ছেলেকে অপহরণ করে খুনের দায়ে ২০১৩ সালের ১ অক্টোবর সালাউদ্দিন কাদেরকে মৃত্যুদ- দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। ২০১০ সালের ১৬ ডিসেম্বর গ্রেফতারের পর প্রায় তিন বছর বিচারের পরিক্রমায় এ রায় হয়। তার ওই রায় আগেই ফাঁস করার অভিযোগেও একটি মামলা রয়েছে, যাতে তার স্ত্রী ফারহাত কাদের চৌধুরী এবং ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরী আসামি।
×