ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বৃষ্টির আশীর্বাদে যেসব ড্র বাংলাদেশের...

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ২৫ জুলাই ২০১৫

বৃষ্টির আশীর্বাদে যেসব ড্র বাংলাদেশের...

স্পোর্টস রিপোর্টার, চট্টগ্রাম থেকে ॥ ভদ্রলোকের খেলা ক্রিকেট। খেলাটির প্রচলনের সময় থেকেই এ কথাটি প্রতিষ্ঠা পেয়ে গেছে। ক্রিকেটে কোন রূঢ়তা, মূঢ়তা, বিশৃঙ্খলতা কিংবা অশোভন কিছুর ঠাঁই নেই। সেজন্য আইনও আছে। দুয়েকটি অযাচিত ঘটনা হয়ত ধূমকেতুর মতো কাঁপিয়ে দিয়ে কিছুটা কালি ছিটিয়ে দেয় নির্ভেজাল পরিষ্কার ক্রিকেটে। সেসব সাময়িক শত্রু ক্রিকেটের। কিন্তু সবসময়ের একটি শত্রু কিন্তু আছে, যাকে কোন আইন দিয়ে এবং কোন ধরনের নীতিমালার শৃঙ্খলে আবদ্ধ করে রাখার উপায় নেই। সেই শত্রুর নাম প্রকৃতি! প্রাকৃতিক বৈরিতায় ক্রিকেট ইতিহাসে অনেকবারই ক্রিকেটপ্রেমী ভক্ত-সমর্থকরা বঞ্চিত হয়েছেন উপভোগ্য ক্রিকেট দেখা থেকে। সেটা আলোর স্বল্পতা এবং বৃষ্টি! এ কারণে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশও টেস্ট ম্যাচে পুরোটা সময় প্রতিপক্ষের সঙ্গে ময়দানি লড়াই স্বস্তির সঙ্গে করতে পারেনি। এখন পর্যন্ত ৯১ টেস্ট খেলা বাংলাদেশ ৬ বার বৃষ্টিকে সবচেয়ে রূঢ় হয়ে উঠতে দেখেছে। সেজন্য বাধাগ্রস্ত হয়েছে ময়দানি খেলা এবং সেজন্য লাভবান হয়েছে বাংলাদেশই, প্রতিপক্ষের সঙ্গে ড্র করতে পেরেছে। এ কারণে অনেকেই বলেন, তাহলে তো ভালই হয়েছে। কারণ টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের সাফল্যের এত অভাব যে বৃষ্টিকে উল্টো আশীর্বাদ হিসেবেই মনে করেন ক্রিকেটপ্রেমীরা। তবে ময়দানের লড়াইটা হয়নি এবং ক্রিকেটের সৌন্দর্য যেন একটু নষ্টই হয়েছে। ক্রিকেট বিশ্বের কাছে সেসব ড্রয়ের জন্য কোন কৃতিত্ব আদায় করতে পারেনি বাংলাদেশ। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের চলমান চট্টগ্রাম টেস্টেও বড় শত্রু হয়ে উঠেছে বৃষ্টি। এটাও দারুণ ময়দানি লড়াইয়ে একটি সুন্দর ক্রিকেট নষ্ট করে ফেলার জন্য হুমকি হয়ে উঠেছে। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ ১৩ টেস্ট ড্র করেছে, যার মধ্যে ৭টিতেই সরাসরি ভূমিকা ছিল বৃষ্টির। কারণ টেস্ট ক্রিকেটে কালেভদ্রে দুয়েকবার ভাল খেলতে পারলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বড় কোন প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে আহামরি ভাল সাফল্য দেখানোর ইতিহাস একেবারেই কম। সর্বশেষ গত মাসে সফরকারী ভারতের বিরুদ্ধে ফতুল্লায় অনুষ্ঠিত একমাত্র টেস্টেও বড় ভূমিকা রেখেছে বৃষ্টি। কারণ বেশ চাপেই ছিল বাংলাদেশ এবং পাঁচ সেশন বৃষ্টিতে ভেসে গিয়েছিল। পুরোটা সময় খেলা হলে হয়ত বিপদটা বাংলাদেশেরই হতো। শেষ পর্যন্ত ওই টেস্ট ড্র করেছে বাংলাদেশ। সেই টেস্টের আগে আরও ৬ টেস্টে বৃষ্টির দাপটে ড্র করেছে বাংলাদেশ। বৃষ্টির দাপটে বাংলাদেশ দল প্রথমবার ড্র করেছিল ২০০১ সালে। ২০০০ সালে টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার পর ততদিনে ৫ টেস্ট খেলে ফেলেছিল টাইগাররা। ব্যক্তিগত কিছু উদ্ভাসিত নৈপুণ্য থাকলেও সমশক্তির জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধেও বিন্দুমাত্র দাঁড়াতে পারেনি। কিন্তু জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধে প্রথমবার বলার মতো কোন সাফল্য পেয়েছিল বাংলাদেশ ২০০১ সালের নবেম্বরে ঘরের মাটিতে অনুষ্ঠিত টেস্টে। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত সেই টেস্টের শেষ দু’দিন টানা বৃষ্টির কারণে একটি বলও মাঠে গড়ায়নি। পরে ম্যাচ রেফারি ভানুমাত সিং ম্যাচটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করেন। প্রথমবারের মতো কোন টেস্ট ড্রয়ের স্বাদ পায় বাংলাদেশ দল। প্রথম ইনিংসে মাত্র ১০৭ রানেই অলআউট হয়ে গিয়েছিল স্বাগতিকরা। জবাবে জিম্বাবুইয়ে তাদের প্রথম ইনিংস শেষ করে ৪৩১ রানে। ৩২৪ রানে পিছিয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে ৩ উইকেটে ১২৫ রান তোলার পর বৃষ্টির আক্রমণে আর খেলা হয়নি। শেষ পর্যন্ত ম্যাচ ড্র। দ্বিতীয়বার বাংলাদেশ বৃষ্টির কারণে ড্র করে ২০০৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে জিম্বাবুইয়ের বিরুদ্ধেই। এবার বুলাওয়েতে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টের তিন দিনই ছিল বৃষ্টির দখলে। প্রথম, দ্বিতীয় ও চতুর্থ দিনে একটি বলও মাঠে গড়ায়নি বুলাওয়ে টেস্টের। তৃতীয় দিন ব্যাট করতে নেমে প্রথম ইনিংসে মাত্র ১৬৮ রানেই গুটিয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ। বৃষ্টির আক্রমণ শেষে পঞ্চম দিনে খেলা মাঠে গড়ালেও এদিনও ছিল বৃষ্টির আক্রমণ। এর আগ পর্যন্ত জিম্বাবুইয়ে ২ উইকেটে ২১০ রান তুলেছিল। আর সে কারণেই বিদেশের মাটিতে প্রথমবার কোন টেস্ট ড্রয়ের স্বাদ নেয় বাংলাদেশ। বৃষ্টির কারণে এরপর বাংলাদেশের সঙ্গে ড্রয়ের জালে আটকা পড়ে প্রবল ক্রিকেট পরাক্রমশালী ভারতীয় দল। এবার ২০০৭ সালের মে মাসে চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত সিরিজের প্রথম টেস্টে বৃষ্টি হামলে পড়েছিল। সেটা ছিল ভারতীয় দলের দ্বিতীয়বারের মতো বাংলাদেশ সফর। ওই ম্যাচে ম্যাচের তৃতীয় দিন একটি বলও মাঠে গড়ায়নি। ভারত তাদের প্রথম ইনিংসে ৩৮৭ রান সংগ্রহ করার পর বাংলাদেশ ২৩৮ রানেই প্রথম ইনিংসে অলআউট হয়ে যায়। ১৪৯ রানে এগিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করে ভারত ৬ উইকেটে ১০০ করলে পঞ্চম দিনের খেলা শেষ হয়। তাতেই ভারতের বিপক্ষে প্রথম ড্র পায় বাংলাদেশ। চতুর্থবারের মতো বাংলাদেশ বৃষ্টির কারণে ড্র করেছিল ২০০৮ সালের অক্টোবরে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে। সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে টানা তিন দিন বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ ছিল। এরপর চতুর্থ দিনে ৬ উইকেট হারিয়ে ২৬২ রান করে ইনিংস ঘোষণা করে সফরকারীরা। জবাবে বাংলাদেশ ৯ উইকেট হারিয়ে ১৬৯ রান করে তাদের প্রথম ইনিংস ঘোষণা দেয়। ৯৩ রানে এগিয়ে থেকে নিউজিল্যান্ড ১ উইকেট হারিয়ে ৭৯ রান করে ড্র মেনে নিয়ে মাঠ ছাড়ে। ২০১১ সালে আরেকটি টেস্ট ড্র করে বাংলাদেশ বৃষ্টির আশীর্বাদে। অক্টোবরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে সেবার জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে ম্যাচের দ্বিতীয় ও তৃতীয় দিনে একটি বলও মাঠে গড়ায়নি। বাংলাদেশ প্রথম দিনে ২৫৫ রান সংগ্রহ করে ৪ উইকেট হারিয়ে। এরপর টানা দুই দিন বৃষ্টি হওয়ায় চতুর্থ দিন ৯ উইকেটে ৩৫০ রান করে ইনিংস ঘোষণা করে। জবাবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২৪৪ রানে অলআউট হয়ে যায়। বাংলাদেশ তাদের দ্বিতীয় ইনিংসে ৩ উইকেটে ১১৯ রান করে ইনিংস ঘোষণা করলে ২২ ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে ১০০ রান তোলে ক্যারিবীয়রা দ্বিতীয় ইনিংসে। সেটাই প্রথমবার বৃষ্টির কারণে ড্র টেস্টে বাংলাদেশই নিয়ন্ত্রণে ছিল। ষষ্ঠবারের মতো বৃষ্টির কারণে ড্র হওয়া টেস্ট ছিল একই প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে ২০১৩ সালের অক্টোবরে। মিরপুরে দ্বিতীয় টেস্টের শেষদিনে একটি বলও মাঠে গড়ায়নি। ওই টেস্টে বাংলাদেশ তাদের প্রথম ইনিংসে ২৮২ রান সংগ্রহ করেছিল। জবাবে ৪৩৭ রানে অলআউট হয় নিউজিল্যান্ড তাদের প্রথম ইনিংসে। ১৫৫ রানে পিছিয়ে থেকে বাংলাদেশ তাদের দ্বিতীয় ইনিংসে ৩ উইকেট হারিয়ে সংগ্রহ করে ২৬৯ রান। ওই ম্যাচে মুমিনুল হক ১২৬ রানে অপরাজিত ছিলেন। শেষ পর্যন্ত ম্যাচটি ড্র হয়। আর বৃষ্টিতে ড্র সপ্তমটি গত মাসে ভারতের বিরুদ্ধে ফতুল্লায়। এবারও আরেকটি টেস্ট বৃষ্টির কারণে ড্রয়ের দিকেই এগিয়ে যাচ্ছে। দ্বিতীয় দিন ও তৃতীয় দিন বৃষ্টির কারণে ৫০ ওভার নষ্ট হওয়ার পর চতুর্থ দিন একটি বলও মাঠে গড়ায়নি। একটি করে ইনিংস শেষ করেছে উভয় দল এবং সফরকারী দক্ষিণ আফ্রিকা দ্বিতীয় ইনিংসের গোড়ার দিকে আছে সবেমাত্র।
×