ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বৃষ্টিতে ভেসে গেল চতুর্থ দিন, এগিয়ে থাকলেও ব্যাট-বলের লড়াইয়ে নামতে পারেনি টাইগাররা, ইনডোরে অনুশীলন, বিশ্রামে কাটাল প্রোটিয়ারা

সাগরিকা টেস্টে নাটকীয়তার অপমৃত্যু

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ২৫ জুলাই ২০১৫

সাগরিকা টেস্টে নাটকীয়তার অপমৃত্যু

মোঃ মামুন রশীদ, চট্টগ্রাম থেকে ॥ অনাহূত অতিথি হয়ে এলো বৃষ্টি। প্রথম দিন শেষভাগে এবং দ্বিতীয় দিন দুপুরে ও বিকেলে বৃষ্টির দাপটে সবমিলিয়ে প্রায় ৫০ ওভার খেলা হয়নি। এরপরও কিন্তু ক্রিকেট ভক্ত-সমর্থকরা আশাহত হননি এবং উভয় দলের ক্রিকেটাররা মাঠের যুদ্ধে দীর্ঘসময় ধরে অবতীর্ণ থাকতে পেরেছেন। তবে চতুর্থ দিনে সকাল থেকেই বৃষ্টির আক্রমণ এক মুহূর্তের জন্য থামেনি। এর শুরু অবশ্য আগের দিন বিকেলে হলেও মাঝে দীর্ঘসময় বিরতি দিয়েছিল। কিন্তু রাত থেকেই বৃষ্টি হয়েছে বন্দরনগরী চট্টগ্রামে। সে কারণেই দুপুর ১টা ২৫ মিনিটে ম্যাচ রেফারি ক্রিস ব্রড নিশ্চিত হয়ে গেলেন বৃহস্পতিবার আর কোন বল মাঠে গড়ানোর সুযোগ নেই বিন্দুমাত্র। চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে তাই বাংলাদেশ-দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যে চলমান প্রথম টেস্ট ম্যাচটির চতুর্থ দিন পরিত্যক্ত হয়ে গেল। বাকি থাকল আর একটিমাত্র দিন। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম ইনিংসে করা ২৪৮ রানের জবাবে টাইগাররা প্রথম ইনিংসে ৩২৬ রান তুলেছিল। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে সফরকারী প্রোটিয়ারা এখন পর্যন্ত বিনা উইকেটে ৬১ রান তুলতে পেরেছে; তাই ১৭ রানে এগিয়ে বাংলাদেশ। সেখানেই থেকে গেছে ম্যাচটা। ক্রিকেটবোধটা যার মধ্যে সামান্যতম আছে তিনিও বলছেন এ ম্যাচ ড্র ছাড়া আর কোন ফলাফল আসার বিকল্প রাস্তাটা একেবারেই দুরূহ। অতিকল্পিত এবং অতি বিস্ময়কর কিছু যদি চরম অনিশ্চয়তায় ভরপুর ক্রিকেটের প্রদর্শনী আজ পঞ্চম দিনে ঘটেই যায়, সেক্ষেত্রে হয়ত একটা ফলাফল আসতেই পারে। তৃতীয় দিন বিকেলে কাভার দিয়ে ঢাকতে হয়েছিল জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের উইকেট। সেই কাভারটা আর সরেনি। কারণ রাত থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টি অব্যাহত থেকেছে টেস্টের চতুর্থ দিন। আকাশের পরিস্থিতি দেখে দক্ষিণ আফ্রিকা দল আর হোটেল ছেড়েই বের হয়নি। বিশ্রাম নিয়ে কাটিয়ে দিয়েছে তারা। অপরদিকে, বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা সাগরিকার মাঠে আসেন কিছুটা বেলা বাড়লে। মুশফিকুর রহীমের দল মাঠে নামতে না পারলেও ইনডোরে অনুশীলন করে কাটিয়েছে কিছুটা সময়। পরে জুমার নামাজও আদায় করেন ক্রিকেটাররা স্টেডিয়ামসংলগ্ন মসজিদে। এরপর অনেকেই চলে গেলেও ইনডোরে তাইজুল ইসলাম, মোহাম্মদ শহীদ, মুস্তাফিজুর রহমান ও জুবায়ের হোসেনকে নিয়ে ঠিকই ব্যাটিং অনুশীলন চালিয়ে গেছেন অধিনায়ক মুশফিকুর রহীম। তার এমন দীর্ঘসময় ধরে অনুশীলনের অভ্যাসটা এখন আরও বেড়েছে। এর কারণ আগের ১০ ইনিংসে অর্ধশতকবঞ্চিত মুশফিক এখন পর্যন্ত নিজেকে ফিরে পাননি। চলমান চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম ইনিংসে মাত্র ২৮ রান করতে পেরেছেন তিনি। ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বাজে সময় পার করছেন বলেই বৃষ্টির দিনে বিশ্রাম নেয়া থেকে নিজেকে বিরত রেখে অনুশীলন অব্যাহত রেখেছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। সাগরিকা টেস্টের প্রথম তিন দিন বেশ ভালভাবেই এগিয়ে ছিল বাংলাদেশ। যদিও প্রোটিয়া শিবির দাবি করেছে পুরো সময় খেলা হলে ভিন্নচিত্র হতে পারত। সেই চিত্রটা হয়ত বাংলাদেশের জন্য সুখকর হতো নাÑ এমন ইঙ্গিতই দিয়েছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার অফস্পিনার সাইমন হারমার। তবে তিনি যাই বলুনÑ প্রথম ইনিংসে প্রোটিয়াদের মাত্র ২৪৮ রানে গুটিয়ে দেয়ার পর ৩২৬ রান করে নিয়ন্ত্রণটা নিজেদের কাছেই ধরে রেখেছিল স্বাগতিক বাংলাদেশ। ৭৮ রানে এগিয়ে ছিল বাংলাদেশ। তবে দ্বিতীয় ইনিংসে বেশ ভালভাবেই এগিয়ে যাচ্ছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। বিনা উইকেটে ৬১ রান তুলে শেষ করেছিল তৃতীয় দিন। ১৭ রানে এগিয়ে থাকার কারণে সংখ্যাতত্ত্বে তখনও ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ বাংলাদেশের। কিন্তু সেই নিয়ন্ত্রণটা এখন তেমন কার্যকর কিছু হবে না বলেই মনে হচ্ছে। কারণ চতুর্থ দিনটা পুরোপুরি নষ্ট হয়েছে বৃষ্টির দাপটে। চতুর্থ দিন অনেক নাটকীয়তার অপেক্ষায় ছিলেন ক্রিকেটপ্রেমীরা। ব্যাট-বলের যুদ্ধ দেখতে মুখিয়ে থাকা দর্শকরাও অবশ্য মাঠে আসতে পারেননি। এবার শুধু পঞ্চম দিনের খেলা বাকি। রোমাঞ্চের মৃত্যু হয়েছে, এখন শেষদিনে কী ঘটে সেটা দেখার অপেক্ষা। এর আগে বৃষ্টির কারণে ৭ টেস্ট ড্র করেছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে ঘরের মাঠেই ৬টি। চট্টগ্রামে টেস্ট ড্র হয়েছে দুটি। ২০০৭ সালের মে মাসে ভারত এবং ২০১১ সালের অক্টোবরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে সাগরিকায় টেস্ট ড্র করে বাংলাদেশ। এবার তৃতীয়বারের মতো মোটামুটি নিশ্চিত ড্রয়ের দিকেই এগিয়ে চলেছে সিরিজের প্রথম টেস্ট। এর আগে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে আট টেস্ট খেলে বাংলাদেশ সাতটিতেই ইনিংস ব্যবধানে এবং ২০০৮ সালে ঢাকা টেস্টে ৫ উইকেটে হেরে গিয়েছিল স্বাগতিকরা। এর মধ্যে ৬ টেস্টে চারদিনে এবং ২ টেস্টে তিন দিনেই নতিস্বীকার করেছিল বাংলাদেশ। তবে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে কোন টেস্টেই বাগড়া দেয়নি বৃষ্টি। এবার বৃষ্টির কল্যাণে হয়ত প্রথমবারের মতো প্রোটিয়াদের বিরুদ্ধে টেস্ট ড্রয়ের সম্ভাবনাই উজ্জ্বল হয়েছে টাইগারদের।
×