ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বিকল্পধারা ও এলডিপি দল বিলুপ্ত করে একীভূত হতে চায়

প্রকাশিত: ০৬:৩৯, ২৪ জুলাই ২০১৫

বিকল্পধারা ও এলডিপি দল বিলুপ্ত করে একীভূত হতে চায়

রাজন ভট্টাচার্য ॥ দল বিলুপ্ত করে এক হয়ে পথচলা শুরু করতে বিকল্প ধারা বাংলাদেশ ও লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির (এলডিপি) পক্ষ থেকে বিএনপিকে তিন দফা শর্ত দেয়া হচ্ছে। প্রথম শর্তের মধ্যে রয়েছে, যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত রাজনৈতিক দল জামায়াতকে জোট থেকে বাদ দেয়া। অন্যান্য শর্তে -দলের শীর্ষ নেতাদের সম্মানজনক পদে বসানো, নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন ও অহিংস রাজনৈতিক কর্মসূচী। শর্ত মানলে আগামী সেপ্টেম্বরের প্রথমদিকে বিএনপির সঙ্গে একীভূত হবে এই দুই দল। অন্যথায় তিনদল মিলে একদল হওয়ার সম্ভাবনা কম। দলীয় সূত্র বলছে, জামায়াতের সঙ্গ ত্যাগের ইস্যুতে দোদুল্যমান অবস্থায় বিএনপি। জামায়াত ছাড়া রাজনৈতিক কর্মসূচী বাস্তবায়ন ও টিকে থাকা কতটুকু সহজ হবে এ নিয়ে দলটির শীর্ষ নেতারাই সন্দিহান। দুই দলের নেতারা জানিয়েছেন, বিএনপির সঙ্গে বিকল্প ধারার এক হওয়ার বিষয়টি বেশ এগিয়েছে। তবে বিষয়টিকে ইতিবাচক দৃষ্টিকোন থেকে দেখছে না এলডিপির অনেক নেতাই। আবার এলডিপির কেউ কেউ বলছেন, জোটে থাকলেও এক হওয়ার বিষয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব আসেনি। যদি আসে তখন বিবেচনা করা যাবে। আওয়ামী লীগ তথা ১৪ দলীয় জোটের পক্ষ থেকে এক হওয়া কিংবা শরিক হিসেবে যোগ দেয়ার প্রস্তাব এলেও বিবেচনা করবে দলটি। বিকল্প ধারা নেতৃবৃন্দ জানিয়েছেন, বিএনপিতে এক হওয়া প্রশ্নে দলের বেশিরভাগ নেতাই একমত। আবার কেউ কেউ এমন সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছেন। সার্বিক বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বৃহস্পতিবার রাতে বি চৌধুরী দলের শীর্ষ নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেছেন। এতে অনেক নেতাই মতামত প্রকাশ করতে গিয়ে বলেছেন, বিকল্প ধারার রাজনৈতিক সফলতা বলতে কিছু নেই। বিএনপির সঙ্গ ত্যাগ করার পর থেকে কোন নির্বাচনেই দলের কেউ বিজয়ী হতে পারেননি। সঙ্গত কারণেই এককভাবে বিকল্প ধারার রাজনীতিতে টিকে থাকা কঠিন হবে। এছাড়া এরশাদের জাতীয় পার্টি, ড. কামাল হোসেনের গণফোরাম, কাদের সিদ্দিকীর কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ ও মাহামুদুর রহমান মান্নার নেতৃত্বাধীন দল নাগরিক ঐক্যের সঙ্গে বিভিন্ন সময়ে জোট গঠনের চেষ্টাতেও সফল হননি বি চৌধুরী। এই প্রেক্ষাপটে সম্মানজনক অবস্থানে থেকে বিএনপিতে যোগ দিলে তেমন একটা ক্ষতির মুখে পড়বে না বিকল্প ধারা। দলের মহাসচিব মেজর অব. এম এ মান্নান বিএনপিতে যোগ দেয়ার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন বলে জানা গেছে। ডাঃ বি চৌধুরী ও কর্নেল অলি আহমেদ দু’জনই বিএনপির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। রাজনৈতিক টানাপোড়ের কারণে তারা পৃথক দল গঠন করেছেন। অপমান করে বিএনপি থেকে দুই দলের এই দুই নেতাকে বাদ দেয়া হয়েছিল। তবুও বিএনপি জোটের সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে আছে বিকল্প ধারা। অলির দল বিএনপি জোটের অন্যতম শরিক। যদিও মেয়র নির্বাচনে বিকল্প ধারার পক্ষ থেকে মাহি বি চৌধুরীকে মনোনয়ন দিতে খালেদা জিয়ার সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক করেন বি চৌধুরী। তাতে কাজ হয়নি। সম্পর্কের অবনতিও হয়নি। বিকল্প ধারার ইফতার পার্টিতে আসেন বিএনপি চেয়ারপার্সন। সরকারবিরোধী বক্তব্য ও মন্ত্রী-সাংসদদের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সম্প্রতি বি চৌধুরী ও অলি কঠোর সমালোচনা করায় দলছুট নেতাদের প্রতি আস্থা বেড়েছে বিএনপির। তাছাড়া সাংগঠনিক অবস্থা পুনর্গঠনেরও উদ্যোগ নিয়েছেন খালেদা জিয়া। এরই ধারাবাহিকতায় দলছুট নেতাদের ফিরিয়ে আনতে গোপনে দূতিয়ালী চালিয়ে যাচ্ছেন বিএনপির একাধিক শীর্ষ নেতা। বিএনপির নেতৃত্বাধীন চার দলীয় জোট ২০০১ সালের এক অক্টোবর সরকার গঠন করলে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব অধ্যাপক ডাঃ একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে রাষ্ট্রপতি বানানো হয়। কিছুদিন না যেতেই দলের হাইকমান্ডের সঙ্গে বিরোধ দেখা দেয় তার। যার রেশ ধরে এক বছরেরও কম সময়ে রাষ্ট্রপতি পদ থেকে বিদায় নেন অধ্যাপক ডাঃ বদরুদ্দোজা চৌধুরী। রাষ্ট্রপতি পদ থেকে সরে দাঁড়িয়ে কিছুদিন নীরব থাকেন বি চৌধুরী। প্রায় এক বছর অপেক্ষায় থাকার পর সমমনাদের নিয়ে গঠন করেন নতুন রাজনৈতিক দল বিকল্প ধারা বাংলাদেশ। একইভাবে বিএনপি সরকারের শেষদিকে এসে দুর্নীতি-দুঃশাসনের অভিযোগ এনে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য কর্নেল (অব) অলি আহমদ। বিএনপির ডাকসাইটের ও প্রভাবশালী কিছু মন্ত্রী এবং সংসদ সদস্যকে নিয়ে তিনি গঠন করেন লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি। পরবর্তী রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় বি. চৌধুরী এবং কর্নেল (অব) অলি আহমেদ একসঙ্গে পথ চলার সিদ্ধান্ত নেন। সেই সিদ্ধান্তের আলোকে ২০০৬ সালের ২৬ অক্টোবর বিকল্প ধারা বাংলাদেশ একীভূত হয় এলডিপিতে। বি. চৌধুরী চেয়ারম্যান এবং কর্নেল (অব) অলি আহমেদ কো-চেয়ারম্যান হন দলটির। যদিও তাদের এ মধুচন্দ্রিমা সুখের হয়নি। কিছুদিন না যেতেই আলাদা হয়ে যান দুই নেতা। বি. চৌধুরী তার প্রতিষ্ঠিত দল বিকল্প ধারা বাংলাদেশকে নিয়ে নতুন করে পথ চলা শুরু করেন। অন্যদিকে কর্নেল (অব) অলি আহমদ পথ চলতে শুরু করেন এলডিপি নিয়েই। বিকল্প ধারা বাংলাদেশের সহ-সভাপতি কার্তিক ঠাকুর জনকণ্ঠকে বলেন, অতীতের সব ভুল বোঝাবুঝির অবসান ঘটিয়ে বিকল্প ধারা এখন বিএনপিতে একীভূত হতে যাচ্ছে। দু’পক্ষের মধ্যে সকল অনিশ্চয়তা কেটেছে। আগামী সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম দিকে বিকল্প ধারা বিলুপ্ত ঘোষণা করা হতে পারে। তিনি জানান, বিকল্প ধারা ও এলডিপি বিএনপিতে একীভূত হওয়া এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে পুরো বিষয়টি চূড়ান্ত হবে। বিকল্প ধারার এই শীর্ষ নেতা আরও বলেন, আমাদের পক্ষ থেকে বিএনপিকে কিছু শর্ত দেয়া হবে। এর মধ্যে রয়েছে- জামায়াতকে জোট থেকে বাদ দেয়া। দলটি ছাড়া বিএনপির সঙ্গে পথ চলতে কোন আপত্তি নেই। তিনি বলেন, বি চৌধুরী, মেজর মান্নান, মাহী বি. চৌধুরীসহ দলের শীর্ষ নেতাদের বিএনপিতে সম্মানজনক পদ দেয়া, নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন ও নির্বাচন প্রক্রিয়াকে পক্ষপাতিত্ব না করে সঠিক পথে পরিচালনা করতে আমাদের দাবির প্রতি সমর্থন জানিয়ে কর্মসূচী দেয়া। তিনি বলেন, দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরামের বৈঠকে আমাদের দাবিদাওয়া চূড়ান্ত করে বিএনপির কাছে দেয়া হবে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এলডিপির যুগ্ম মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম জনকণ্ঠকে বলেন, বিএনপির সঙ্গে এলডিপির ঐক্যের সময় এসেছে। এতে কোন সন্দেহ নেই। এই সুযোগ কাজে লাগানো উচিত। তবে বিএনপির পক্ষ থেকে ঐক্যের আনুষ্ঠানিক কোন প্রস্তাব এখনও আসেনি বলে জানান তিনি। সেলিম জানান, বিএনপি মনে করে বৃহত্তর ঐক্যের মধ্য দিয়ে রাজনৈতিকভাবে চলার পথ আরও মসৃণ করতে হবে। ঐক্য চাইলে আমাদের চাওয়া-পাওয়ার হিসাব আছে। প্রস্তাব পেলে সামনের রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে এলডিপি দলীয় ফোরামের আলোচনার পর এক হওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। তিনি বলেন, সরকার চাইলে আমরা তাদের সঙ্গেও যেতে প্রস্তুত। তাছাড়া আমরা তো এখন ২০ দলীয় জোটের সঙ্গে আছি। জামায়াতের নিবন্ধন নেই। এই মুহূর্তে জোটের মধ্যে দ্বিতীয় বৃহত্তম রাজনৈতিক দল এলডিপি। ছোটখাটো রাজনৈতিক দল বিএনপিতে এক হয়ে আমাদের সমকক্ষ হওয়ার চেষ্টা করবে তা হয়ত অনেকেই মেনে নেবে না। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি সপ্তাহে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসবে এলডিপি ও বিকল্প ধারার নেতারা। নয় সেপ্টেম্বর বিএনপির ৩৭ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিন তিন দল একদলে পরিণত হওয়ার ঘোষণা দেয়ার লক্ষ্য নিয়ে কাজ চলছে। বিএনপি চায় দু’দলের পক্ষ থেকে কিছু শর্ত শিথিল করা হবে। বিএনপিও এক্ষেত্রে ছাড় দিতে রাজি।
×