ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় ২১ জনের মৃত্যু

ডেমু ট্রেনের ধাক্কায় ৮ অটো আরোহী নিহত

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ২৪ জুলাই ২০১৫

ডেমু ট্রেনের ধাক্কায় ৮ অটো আরোহী নিহত

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ ঈদের ছুটি শেষে অটোরিক্সায় বাসায় ফেরার পথে গাজীপুরের একটি অরক্ষিত রেলক্রসিংয়ে ডেমু ট্রেনের ধাক্কায় তিন শিশুসহ আটজনের মৃত্যু হয়েছে। ধীরাশ্রম স্টেশনের দক্ষিণ দিকে হায়দরাবাদ এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। এছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় কমপক্ষে ২১ জন নিহত এবং ৮০ জনেরও বেশি আহত হয়েছে। এর মধ্যে টাঙ্গাইলে মহিলাসহ আটজন, সিলেটে তিনজন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দুইজন, ময়মনসিংহের ভালুকায় দুইজন, কুমিল্লায় দুইজন, টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে একজন, চট্টগ্রামের সীতাকু-ে দুই ও পটিয়ায় একজন নিহত হয়। এছাড়া বগুড়া ও কুষ্টিয়ায় বাস উল্টে ৫০ জন আহত হয়। বুধবার রাত ও বৃহস্পতিবার এসব দুর্ঘটনা ঘটে। খবর স্টাফ রিপোর্টার ও নিজস্ব সংবাদদাতাদের। এলাকাবাসী, ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ জানায়, ঈদের ছুটি শেষে বৃহস্পতিবার দুপুরে নরসিংদীর গ্রামের বাড়ি থেকে স্ত্রী-সন্তান ও কয়েকজন আত্মীয়কে নিয়ে গার্মেন্টসকর্মী শাহ আলম সিএনজি অটোরিক্সাযোগে গাজীপুরের বোর্ডবাজারের খাইলকৈর এলাকার বাসায় ফিরছিল। বিকেল পৌনে তিনটার দিকে অটোরিক্সাটি জয়দেবপুরের ধীরাশ্রম স্টেশনের প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে হায়দরাবাদ এলাকায় অরক্ষিত লেবেল ক্রসিং দিয়ে ঢাকা-ময়মনসিংহ রেলরুট পার হওয়ার সময় অটোরিক্সার ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় ঢাকা থেকে জয়দেবপুরগামী ডেমু ট্রেন (জয়দেবপুর কমিউটার) অটোরিক্সাটিকে সজোরো ধাক্কা দেয়। এতে অটোরিক্সাটি ট্রেনের ইঞ্জিনের সঙ্গে আটকে যায় এবং অটোরিক্সাকে হেঁচড়ে প্রায় আধা কিলোমিটার উত্তরে দক্ষিণখান এলাকা গিয়ে থামে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। এতে অটোরিক্সাটি দুমড়েমুচড়ে যায় এবং ছড়িয়ে ছিটিয়ে বিভিন্নস্থানে পড়ে ঘটনাস্থলেই আট আরোহীর মৃত্যু হয়। জয়দেবপুর ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে নিহতদের লাশ উদ্ধার করে গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। খবর পেয়ে গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এস এম আলম হাসপাতালে ছুটে যান। খবর পেয়ে নিহতদের স্বজনরা হাসপাতালে ভিড় জমান। তাদের আহাজারিতে হাসপাতালের পরিবেশ ভারি হয়ে ওঠে। নিহতরা হলো- নরসিংদী সদর উপজেলার জিতরামপুর এলাকার ফরিদ মিয়ার ছেলে শাহ আলম (২৭), স্ত্রী পিয়ারা বেগম (২১), ছেলে ইয়াসিন (৪) ও মেয়ে সাদিয়া (৬), পিয়ারার বোন সফুরা বেগম (১২), শাহ আলমের ফুফাত ভাই আলামিন (২৭), প্রতিবেশী আবুল খায়েরের ছেলে লিটন মিয়া (২২) এবং অটোরিক্সার চালক নরসিংদীর বালাফুরের চর এলাকার আব্দুর রফিকের ছেলে মোঃ মোস্তাফা (২০)। শাহ আলম বোর্ডবাজার এলাকায় এমএম ফ্যাশনে চাকরি করতেন। জয়দেবপুর রেলওয়ে জংশন পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই দাদন মিয়া জানান, ওই ক্রসিংয়ে কোন প্রতিবন্ধক সংকেতের ব্যবস্থা ছিল না। এটি ছিল সম্পূর্ণ অবৈধ ও এলাকাবাসীর করা লেবেল ক্রসিং। কমলাপুর রেলওয়ে থানার ওসি আব্দুল মজিদ ঘটনাস্থলে পরিদর্শনে গিয়ে জানান, যেহেতু অবৈধ রেলগেট দিয়ে অটোচালক রেললাইন পার হওয়ার সময় ওই দুর্ঘটনা ঘটেছে, এজন্য তার বিরুদ্ধেই আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। টাঙ্গাইল ॥ টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী থেকে ঢাকাগামী বিনিময় পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাস বৃহস্পতিবার বিকেল চারটার দিকে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের বাসাইলের বাঐখোলার পাটখাগুড়ি এলাকায় পৌঁছায়। এ সময় বিনিময় পরিবহনের যাত্রীবাহী বাসের চালক ওভারটেকিং করার সময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে এবং বাসটি রাস্তার পাশে খাদে পড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই আটজন নিহত এবং আহত হয় অন্তত ২০ জন। নিহতদের লাশ টাঙ্গাইল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়েছে। আহতদের মির্জাপুরের কুমুদিনী ও টাঙ্গাইল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এদিকে সড়ক দুর্ঘটনার ফলে ঢাকা-টাঙ্গাইল ও বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। পরে এক ঘণ্টা চেষ্টার পর পুলিশ মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনে। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে টাঙ্গাইল ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট, বাসাইল, মির্জাপুর ও হাইওয়ে থানা পুলিশ উদ্ধার তৎপরতা চালায়। ঘটনাস্থলে জেলা প্রশাসক মাহবুব হোসেনসহ প্রশাসনের উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত হন। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহতদের দাফনের জন্য ২০ হাজার টাকা করে দেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়। সিলেট ॥ বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ওসমানীনগরের ব্রাহ্মণগ্রাম এলাকায় একটি যাত্রীবাহী বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই তিনজন নিহত হয়। নিহতদের দুজন নারী ও একজন পুরুষ। তাদের পরিচয় পাওয়া যায়নি। এ ঘটনায় আহত হয় কমপক্ষে ২৫ জন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া ॥ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলের ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ইসলামাবাদ এলাকায় সিএনজিচালিত অটোরিক্সা ও শ্যামলী পরিবহনের মুখোমুখি সংঘর্ষে কলেজছাত্রসহ দুইজন নিহত ও চারজন আহত হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন হবিগঞ্জের ধর্মঘর এলাকার এনামুল হকের ছেলে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারী কলেজের ছাত্র ইনজামামুল হক (২২) এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার ঘাটুরা এলাকার মৃত বজলুর রহমানের ছেলে দরবেশ আলী (৩৭)। ভালুকা, ময়মনসিংহ ॥ ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ভরাডোবা নতুন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় বৃহস্পতিবার সকালে মাহেন্দ্র ও পিকআপের মুখোমুখি সংঘর্ষে কমপক্ষে ১১ যাত্রী আহত হন। আহত রাকিব (২০) ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বিকেলে মারা যায়। এদিকে ভালুকা ডিগ্রী কলেজের সামনে বুধবার বিকেলে রাস্তা পার হওয়ার সময় ভা-াব গ্রামের আব্দুর রহিমের ছেলে জুয়েল (৩০) বাসচাপায় গুরুতর আহত হন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে রাতে তাঁর মৃত্যু হয়। পটিয়া ॥ চট্টগ্রামের পটিয়ায় ট্রাকের ধাক্কায় কাঞ্চন দাশ বাবু (২৪) নামে এক মোটরসাইকেল আরোহী ঘটনাস্থলেই নিহত হয়েছেন। তিনি কোলাগাঁও ইউনিয়নের শিবু দাশের ছেলে। বুধবার রাত সাড়ে নয়টার সময় পটিয়া আমজুর এবাদতখানা এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। সীতাকু- ॥ চট্টগ্রামের সীতাকু-ে বুধবার রাত আটটায় পৌর সদর বাজারে রাস্তা পার হওয়ার সময় মাইক্রোবাস চাপায় অমর কৃষ্ণ দেবনাথ (৫৮) নামে এক পথচারী গুরুতর আহত হয়। স্থানীয়রা তাঁকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এদিকে বুধবার রাত সাড়ে ১১টায় সোনাইছড়ি ইউনিয়নের হাফিজ জুট মিলস এলাকায় রাস্তা পার হওয়ার সময় সিএনজি অটোরিক্সা চাপায় মোঃ আব্দুল মজিদ (৪৫) নামে এক পথচারী গুরুতর আহত হয়। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে চমেক হাসপাতাল নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। মির্জাপুর ॥ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে মুনসুরা বেগম মোটরসাইকেলে স্বামীর সঙ্গে মির্জাপুর যাচ্ছিলেন। তারা ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাড়কের মির্জাপুরের কুর্নী এলাকায় পৌঁছলে একটি ট্রাক মোটরসাইকেলটিকে চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই মুনসুরার মৃত্যু হয়। বগুড়া ॥ বৃহস্পতিবার দুপুরে বগুড়া-নাটোর মহাসড়কে জামাদারপুকুর এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় ২০ জন আহত হয়েছে। একটি যাত্রীবাহী বাস উল্টে খাদে পড়ে গেলে এই দুর্ঘটনা ঘটে। আহত ১৫ জনকে বগুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কুষ্টিয়া ॥ কুষ্টিয়ায় যাত্রিবাহী বাস উল্টে অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছে। এদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাদের খোকসা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। গুরুতর আহত দুজনকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে খোকসার বিলজানি বাজারের কাছে পদ্মা-গড়াই বাস উল্টে এ দুর্ঘটনা ঘটে। হতাহতদের পরিচয় ॥ নিহতদের মধ্যে ৬ জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। এরা হলো- জামালপুরের সরিষাবাড়ীর বালিয়া গ্রামের রঞ্জু মিয়া (২৫), রফিকুল ইসলামের ছেলে জাকির হোসেন (২৩), শেরপুর জেলার লক্ষ্মীটেংরা শ্রীবদ্রী গ্রামের দুলাল মিয়ার স্ত্রী জরিনা বেগম (৪০), টাঙ্গাইলের মধুপুরের বেলাজ আলীর ছেলে খোয়াজ আলী (৪০), ধনবাড়ী বীরতারা গ্রামের শৌলেন বসাকের ছেলে শেখর বসাক (৪০), কদমতুলী গ্রামের সুরুজ আলীর ছেলে আবু বকর (২২)। নিহতদের লাশ টাঙ্গাইল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়েছে। দুর্ঘটনায় আহতরা হলো- আনোয়ার হোসেন, মোবারক হোসেন, জিয়া খান, জয়নাল হোসেন, চম্পা বেগম, কমলা রানী, ইউসুব আলী, রতন সূত্রধর, আলমগীর হোসেন, নীরব, মাহফুজা বেগম, রেহেনা আক্তার, শিশু সুমাইয়া। আহতদের প্রায় সকলের বাড়ী টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী উপজেলায় বলে পুলিশ জানিয়েছে। কুমিল্লায় ট্রেনের ধাক্কায় অটোচালকসহ নিহত ২ ॥ ঢাকাগামী কর্ণফুলী এক্সপ্রেস ট্রেনের ধাক্কায় সিএনজি অটোরিক্সা চালকসহ ২জন নিহত হয়েছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সদর দক্ষিণ উপজেলার জেলখানা বাড়ি রেল ক্রসিং এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। লাকসাম জংশন রেলওয়ে থানার পুলিশ জানায়, চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাগামী কর্ণফুলী এক্সপ্রেস ট্রেনের ধাক্কায় একটি সিএনজি অটোরিক্সা রাস্তার পাশে ছিটকে পড়ে যায়। ঘটনাস্থলে সদর দক্ষিণ উপজেলার টঙ্গিরপাড় গ্রামের মমিনুল ইসলামের ছেলে সিএনজি অটোরিক্সা চালক আবুল খায়ের (৩২) এবং হাসপাতালে নেয়ার পথে অটোরিক্সার যাত্রী একই গ্রামের আবদুর রশিদের ছেলে মাসুদ রানা (২৮) মারা যায়।
×