ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

চট্টগ্রাম টেস্টের দ্বিতীয় দিন শেষে প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ ৪ উইকেটে ১৭৯, এখনও পিছিয়ে ৬৯ রানে

বৃষ্টিতে এগোতে পারল না টাইগাররা

প্রকাশিত: ০৬:০১, ২৩ জুলাই ২০১৫

বৃষ্টিতে এগোতে পারল না টাইগাররা

মোঃ মামুন রশীদ, চট্টগ্রাম থেকে ॥ অবশেষে বৃষ্টি এলো! সফরকারী দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে স্বাগতিক বাংলাদেশের চলমান প্রথম টেস্টের দ্বিতীয় দিনের ২৫ ওভার খেলা নষ্ট হলো। তবে এ বৃষ্টির জন্য কেউ অপেক্ষা করেনি, তবে সবসময়ই বৃষ্টির দাপটে খেলায় বিঘœ সৃষ্টির শঙ্কা লেগেই ছিল। প্রথম দিন থেকেই বৃষ্টি হওয়ার জোর সম্ভাবনা রয়েছে এমন কথাই জানিয়েছিল আবহাওয়াবিদরা। তবে সোমবার প্রথমদিন ঝলমলে রোদে এবং মঙ্গলবার চা বিরতি পর্যন্ত মেঘলা আকাশে ঢাকা জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে খেলা চলে নির্বিঘেœই। চা বিরতির কিছু পরেই বৃষ্টি নামলে আর খেলা হয়নি। তার আগে পর্যন্ত আগের দিনের বিনা উইকেটে ৭ রান নিয়ে খেলতে নেমে ভাল নৈপুণ্যই দেখিয়েছে টাইগাররা। দ্বিতীয় দিন ৪ উইকেট হারিয়ে আরও ১৭২ রান যোগ করেছে মুশফিকুর রহীমের দল। এর মধ্যে জোড়া অর্ধশতক হাঁকিয়েছেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ও তামিম ইকবাল। প্রোটিয়া উইকেটরক্ষক কুইন্টন ডি ককের সঙ্গে বচসা এবং তামিমকে ধাক্কা দেয়ার ঘটনাও ঘটে। সবকিছু মিলিয়ে ভাল একটা দিনই কাটিয়েছে বাংলাদেশ দিনশেষে প্রথম ইনিংসে ১৭৯ রান তুলে। সাগরিকায় মঙ্গলবার বৃষ্টির সম্ভাবনা সকাল থেকেই আকাশ দেখে বোঝা গেলেও বিপুল দর্শকও এসেছিলেন টেস্ট ক্রিকেট দেখতে। তাদের অন্তত নিরাশ হতে হয়নি। তবে এখনও ৬৯ রানে পিছিয়ে থাকার কারণে আজ তৃতীয় দিনেও বাংলাদেশী ব্যাটসম্যানদের জন্য ভাল করার চ্যালেঞ্জটা থেকেই যাচ্ছে। সকালের প্রথম ঘণ্টাটা নিয়ে দুশ্চিন্তা ছিল। টেস্ট সেশন বাই সেশনের খেলা। দিনের প্রথম একটা ঘণ্টা নিশ্চিতভাবেই ব্যাটসম্যানদের জন্য কঠিন। এরপর আবার বোলার যখন স্টেইন, মরকেল ও ফিল্যান্ডার তখন ব্যাটসম্যানদের জন্য অনেক বড় অগ্নিপরীক্ষাই বলা যায়। সেই পরীক্ষাটা ভালই দিচ্ছিলেন সহজ ও সাবলীলভাবে দুই ওপেনার। মেঘাচ্ছন্ন আবহাওয়াতে, আর্দ্র ও ভেজা পরিবেশে প্রথম সেই ঘণ্টা বেশ ভালভাবেই পাড়ি দিলেন তামিম-ইমরুল। তবে ঘণ্টা পেরোনোর পরই প্রথম ভুলটা করলেন ক্ল্যাসিক ইমরুল। গতির রাজারা ব্যর্থ হলেও স্বল্প গতির অনিয়মিত সিমার স্টিয়ান ভ্যান জাইল সফল হয়েছেন। তার বলে আগ বাড়িয়ে মারতে গিয় লাইন হারালেন বলের এবং উইকেটরক্ষক কুইন্টন ডি কক বিন্দুমাত্র ভুল করলেন না তাকে স্টাম্পিং করতে। অভিষেকের পর থেকেই রানের স্রোত যার ব্যাটে, সেই মুমিনুল হক সৌরভ গত মাসে ভারতের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টে দীর্ঘ ১১ টেস্ট পর ছিলেন অর্ধশতক বঞ্চিত। এবারও ব্যর্থ হলেন তিনি। ২৬ বছর বয়সী তরুণ অফস্পিনার সাইমন হারমারের সাদামাটা একটি বলে লাইনে না গিয়ে মারতে গিয়ে সরাসরি বোল্ড হন তিনি। তবে এরপর অবশ্য বিপদ ঘনীভূত হতে দেননি সাগরিকায় ব্যাট হাতে সফল ‘লোকাল হিরো’ তামিম এবং মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। দু’জনে তৃতীয় উইকেটে গড়ে তোলেন ৮৯ রানের জুটি। এটি দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তৃতীয় উইকেটে বাংলাদেশের সেরা এবং যে কোন উইকেটের সেরা জুটি। চট্টগ্রামেই ২০০৩ সালে দ্বিতীয় উইকেটে ১৩১ রানের জুটি গড়েছিলেন জাভেদ ওমর ও হাবিবুল বাশার। আর তৃতীয় উইকেটে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সেরা জুটি ছিল ৬৬ রানের। সেটা ইস্ট লন্ডনে ২০০২ সালের অক্টোবরে হাবিবুল ও সানোয়ার করেছিলেন। এর আগেই প্রথমদিনের বিনা উইকেটে ৭ রান নিয়ে খেলতে নেমে প্রথম সেশনে আরও ৭৩ রান যোগ করে ফেলে মোটামুটি স্বস্তি নিয়েই মধ্যাহ্ন বিরতিতে যায় বাংলাদেশ দল। সাগরিকা টেস্টের প্রথম দিনে তেমন দর্শক আসেনি, বৃষ্টির সম্ভাবনা এবং পরবর্তীতে দক্ষিণ আফ্রিকা ব্যাটিংয়ে নামার কারণে। তবে বুধবার দ্বিতীয় দিনের শুরু থেকেই কালো মেঘের ঘনঘটা থাকলেও বিপুল দর্শক সমাগম ঘটে। বাংলাদেশের মানুষ এখন ক্রিকেট বোঝেন, হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করেন। দিনের শুরুতে অনেক কিছুই হতে পারে। তাছাড়া দক্ষিণ আফ্রিকার মতো শক্ত ব্যাটিং বিভাগের দল যেভাবে প্রথমদিনের রৌদ্রোজ্জ্বল পরিবেশেও বিপর্যস্ত হয়েছে সবাই অজানা এক শঙ্কা নিয়ে ঢিপঢিপ করা বুক নিয়ে অপেক্ষা ছিলেন। সে কারণেই দিনের শুরুতে তেমন উত্তেজনা কিংবা উদ্দীপনা দেখা যায়নি তাদের মধ্যে। তবে তাদের উত্তেজনা এবং উল্লাসে মাতার যথেষ্ট উপজীব্য এনে দেন তামিম। এ বাঁহাতি ওপেনার প্রথম থেকেই সাবলীল ছন্দেই ব্যাট চালিয়েছেন এবং ক্যারিয়ারের ১৮তম অর্ধশতক পেয়ে যান তিনি। তবে এরপর আর বেশি দূর এগোতে পারেননি তিনি। দারুণ ধৈর্যশীল একটি ইনিংস খেলে ১২৯ বলে ৩ চারে ৫৭ রান করেন। সাজঘরে ফেরেন মূলত ব্যাটসম্যান হলেও কালেভদ্রে স্পিন করা ডিন এলগারের বলে বোল্ড হয়ে। দ্বিতীয় সেশনে এই একটি উইকেট হারায় বাংলাদেশ। রান আসে আরও ৭৩। চা বিরতির পর ৩ উইকেটে ১৫৩ রান নিয়ে আবার খেলতে নামে বাংলাদেশ দল। সকাল থেকেই মেঘমালা ছিল জহুর আহমেদ চৌধুরীর স্টেডিয়ামে। তবে মাঝেমাঝে সূর্য্যটাও উঁকিঝুঁকি দিয়েছে। তবে চা বিরতির পরে ৯.৫ ওভার খেলার পরই বৃষ্টি নামে। মাঝ মাঠ প্রস্তুত করে ফেললেও আবার বৃষ্টির বেগ বাড়লে সবমিলিয়ে ৫২ মিনিট খেলা বন্ধ থাকে। কিন্তু খেলা আবার শুরুর পর শুধু ফিল্যান্ডারের ওভারের বাকি থাকা একটা বলই হয়েছে। ওভার শেষ করতে পেরেছেন তিনি। আবারও তুমুল বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ হয়ে যায়। তবে এর আগ পর্যন্ত মাহমুদুল্লাহ বিদায় নিয়ে সাজঘরে ফেরেন। ইনজুরি কাটিয়ে এক টেস্ট পরেই ফেরা মাহমুদুল্লাহ দারুণ ব্যাট করছিলেন। তার আগে পর্যন্ত ওয়ানডেতে দারুণ ছন্দে ছিলেন তিনি। তবে টেস্ট ক্রিকেটে বড় ইনিংস পাচ্ছিলেন না। গত ৬ ইনিংসে কোন অর্ধশতকের দেখা পাননি মাহমুদুল্লাহ। এবার ফিরতি টেস্টেই ব্যাট হাতে রান পেলেন এ মিডলঅর্ডার। ক্যারিয়ারের ১২তম ফিফটি হাঁকান দারুণ স্বাচ্ছন্দ্যে ব্যাট চালিয়ে। মাহমুদুল্লাহ-মুশফিকুর রহীম জুটি বেশ জমাট বাঁধছিল এবং অনেকেই আশায় ছিলেন মাহমুদুল্লাহর সেঞ্চুরি দেখার। কিন্তু হঠাৎ ছন্দপতন ঘটল তার। ফিল্যান্ডারের ফুল লেন্থে ফেলা সেøায়ারটি বুঝতে না পেরে এলবিডব্লিউর শিকার হন। ১৩৮ বলে ১০ চারে ৬৭ রান করেছিলেন তিনি। আর অধিনায়ক মুশফিকের দিকে নজর ছিল সবারই। বাংলাদেশের মিডলঅর্ডারের স্তম্ভ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন তিনি। কিন্তু গত ১০ ইনিংস থেকে কোন অর্ধশতকও পাননি। ব্যাটে রানখরা কাটাতে পারেন কিনা সেটাই ছিল সবার চোখ। তবে এদিন ব্যাট হাতে নামার পর থেকেই বেশ সতর্ক থেকে ভালই খেলেছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। বৃষ্টির আগ পর্যন্ত ৪৪ বল খেলে ২ চার ও ১ ছক্কায় ১৬ রান করেছেন। পরবর্তীতে আর খেলা হয়নি। দিনের ২৫ ওভারই নষ্ট হয়েছে বৃষ্টির কারণে। দিনশেষে প্রথম ইনিংসে ৪ উইকেটে ১৭৯ রান তুলেছে বাংলাদেশ। এখনও দক্ষিণ আফ্রিকা এগিয়ে ৬৯ রানে। মুশফিকের সঙ্গে ব্যাট করছেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান ১ রান নিয়ে। সেখান থেকে আজ ম্যাচের তৃতীয় দিন বড় একটি ইনিংস গড়ার চ্যালেঞ্জ নিয়ে নামবেন এ দুই ব্যাটসম্যান।
×