ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

স্মিথের ব্যাটে দুরমুশ ইংল্যান্ড

প্রকাশিত: ০৬:৫৩, ২১ জুলাই ২০১৫

স্মিথের ব্যাটে দুরমুশ ইংল্যান্ড

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ সম্প্রতি নৈপুণ্যের বিচারে এবার লড়াইটা ছিল ‘জো রুট বনাম স্টিভেন স্মিথ’ এবং ‘জেমস এ্যান্ডারসন ও মিচেল জনসনের’ মধ্যে। প্রথম টেস্ট ১৬৯ রানের জয়ে এগিয়ে যায় ইংলিশরা, স্বাগতিকদের হয়ে ১৩৪ ও ৬০ রানের ঝকঝকে দুটি ইনিংস খেলে কার্ডিফের ‘নায়ক’ রুট। লর্ডসে স্মিথ করলেন ২১৫ ও ৫৮- ৪০৫ রানের বিশাল জয়ে পাঁচ টেস্টের এ্যাশেজে ১-১এ সমতা ফেরাল মাইকেল ক্লার্ক বাহিনী! বাংলাদেশে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদের ছুটিতে ক্রিকেটমক্কা লর্ডসে ব্যাটে-বলে ঝড় তুললেন স্মিথ-জনসনরা, তাতে পুড়ে ছারখার এ্যালিস্টার কুকের দল। লর্ডসে আসলে ফুটে উঠল অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটের সেই চিরায়ত লড়াকু মনোভাবই। দ্বিতীয় টেস্টে এক কথায় কুকদের উড়িয়ে দিয়েছে অসিরা। ম্যাচসেরা স্টিভেন স্মিথের ডাবল সেঞ্চুরির (২১৫) ওপর ভর করে ৮ উইকেটে ৫৬৬ রানে প্রথম ইনিংস ঘোষণা করে অস্ট্রেলিয়া। জবাবে ৩১২ রানে অলআউট ইংলিশরা। এরপর ৪৯ ওভারে ২ উইকেটে ২৫৪ রানে দ্বিতীয় ইনিংস ঘোষণা করে সফরকারীরা। জয়ের জন্য ৫০৯ রানের অসম্ভব লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ৩৭ ওভারে ১০৩ রানে অলআউট কুকের দল, হার ৪০৫ রানে! লর্ডসে এর আগে অস্ট্রেলিয়ার কাছে ৪শ’ রানের ব্যবধানে একবারই হেরেছিল ইংলিশরা, সেটি ৬৭ বছর আগে, ৪০৯ রানে। এবার ব্যবধান ৪ কমÑ এই যা! আরও লজ্জায় পড়তে যাচ্ছিল স্বাগতিকরা। এত দীর্ঘ ইতিহাসে লর্ডসে ১০০-এর নিচে চারবার অলআউট হয়েছে তারা। ১০৩Ñ লর্ডসে ইংল্যান্ডের পঞ্চম সর্বনিম্ন স্কোর, গত ২০ বছরে একবারও হয়নি। গত ১২৭ বছরে দুইবার এমন লজ্জায় পড়া ইংল্যান্ড আরও একবার দুই অঙ্কের মধ্যে বাক্স গোটাতে বসেছিল। ৬৪ রানে হারিয়ে ফেলেছিল? ৭ উইকেট। রীতিমতো থরহরিকম্প! শেষ পর্যন্ত স্কোর ১শ’ পেরিয়েছে স্টুয়ার্ট ব্রডের কল্যাণে। নয় নম্বরে নেমে সর্বোচ্চ ২৫ রান করেছেন ইংলিশ পেসার। তাতে লাভ কিছু হয়নি। চারদিনেই খেল খতম। ইংলিশদের আসল সর্বনাশ করেছেন ‘চেনা শত্রু’ মিচেল জনসন, ২৭ রান দিয়ে নিয়েছেন ৩ উইকেট। দুটি করে শিকার অপর পেসার জশ হ্যাজেলউড আর স্পিনার নাথান লেয়নের। রানের হিসেবে টেস্ট ইতিহাসের নবম বৃহত্তম জয় দিয়ে প্রথম ম্যাচের বদলা নি?ল ওয়ানডের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া। আর চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী অসিদের বিপক্ষে এটি ইংল্যান্ডের তৃতীয় বৃহত্তম পরাজয়, এই তিন হারের দুটিই লর্ডসে। রানের দিক দিয়ে ১৮টি বৃহত্তম পরাজয়ের ১০টিই ইংল্যান্ডের! স্মিথের কথা আলাদা করে না বললেই নয়। ঠিক এক মাস আগে লঙ্কান লিজেন্ড কুমার সাঙ্গাকারাকে সরিয়ে প্রথমবারের মতো আইসিসির টেস্ট র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে উঠে আসেন অসি-সেনসেশন। এ্যাশেজেরই প্রস্তুতি স্বরূপ ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে জ্যামাইকা টেস্টের প্রথম ইনিংসে ১ রানের জন্য ডাবল সেঞ্চুরি পাননি, ১৯৯ রানের অন্যবদ ইনিংস খেলে হয়েছেন ম্যাচসেরা। সেই ক্ষতে সান্ত¡না হয়ে এসেছিল র‌্যাঙ্কিং। এবার আর সান্ত¡না নয়, বাস্তবতা। ৩০তম টেস্টে ক্যারিয়ারের দশম সেঞ্চুরিটাকে কাক্সিক্ষত ডাবল সেঞ্চুরিতে রূপ দিলেন ২৬ বছর বয়সী নিউসাউথওয়েলস হিরো। তাও আবার ক্রিকেটমক্ক লর্ডসে। ২৫ চার ও ১ ছক্কায় খেললেন ২১৫ রানের ক্যারিয়ারসেরা ইনিংস। যাতে ম্লান সতীর্থ ওপেনার ক্রিস রজার্সের ১৭৩। মূলত প্রথম ইনিংসে অস্ট্রেলিয়ার ৫৬৬ রানের পাহাড়সম স্কোরই লডর্স টেস্টের ভাগ্য গড়ে দেয়। সাবেক ইংল্যান্ড অধিনায়ক নাসের হুসেইনের ব্যাখ্যা, ‘চাপের মুখে ভেঙ্গে পড়ার রোগটা আর কিছুতেই সারল না ইংল্যান্ডের!’ আরেক গ্রেট ইয়ান বোথামের মতে, ‘এই নিষ্প্রাণ উইকেটেও কিভাবে ফয়দা তুলতে হয়, তা অস্ট্রেলিয়ানদের কাছ থেকেই শেখা উচিত। জনসন-স্টার্কের চোখের আগুনে আমাদের ব্যাটসম্যানরা পুড়ে ছাই হয়ে গেল।’ স্কোর ॥ অস্ট্রেলিয়া প্রথম ইনিংস ৫৬৬/৮ (১৪৯ ওভার; স্মিথ ২১৫, রজার্স ১৭৩, নেভিল ৪৫, ওয়ার্নার ৩৮, ভোগস ২৫; ব্রড ৪/৮৩, রুট ২/৫৫, উড ১/৯২) ও দ্বিতীয় ইনিংস ২৫৪/২ (৪৯ ওভার; ওয়ার্নার ৮৩, স্মিথ ৫৮, রজার্স ৪৯, ক্লার্ক ৩২*, মার্শ ২৭*) ইংল্যান্ড প্রথম ইনিংস ৩১২/১০ (৯০.১ ওভার; কুক ৯৬, স্টোকস ৮৭, মঈন ৩৯, ব্যালান্স ২৩, ব্রড ২১; হ্যাজলউড ৩/৬৮, জনসন ৩/৫৩, মিচেল মার্শ ২/২৩, লেয়ন ১/৫৩) ও দ্বিতীয় ইনিংস ১০৩/১০ (৩৭ ওভার; ব্রড ২৫, রুট ১৭, ব্যালান্স ১৪; জনসন ৩/২৭, হ্যাজলউড ২/২০, লেয়ন ২/২৭)। ফল ॥ অস্ট্রেলিয়া ৪০৫ রানে জয়ী, ম্যাচসেরা ॥ স্মিথ (অস্ট্রেলিয়া) সিরিজ ॥ পাঁচ টেস্টের এ্যাশেজ ১-১এ চলমান
×