ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আল বিদা মাহে রমজান

প্রকাশিত: ০৬:১৯, ১৭ জুলাই ২০১৫

আল বিদা মাহে রমজান

অধ্যাপক মনিরুল ইসলাম রফিক ॥ আজ পবিত্র জুমাতুল বিদা। মাহে রমজানের সমাপনী জুমাবার। জুমার দিন, জুমার নামাজ ও মাহে রমজানের জুমাতুল বিদার অফুরন্ত কল্যাণ ও সাওয়াবের কথা কুরআন ও হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে। হুজুর করীম (স) বলেন, শেষ জামানায় জুমা তরককারী একদল লোক বের হবে, আল্লাহতয়ালা তাদের অন্তরে মোহর করে দেবে। অতঃপর তারা আল্লাহকে ভুলে যাবে।’ মুসলিম শরীফ। হুজুর (স) ইরশাদ করেন, বিনা ওযরে যদি কোন ব্যক্তি জুমা তরক করে সেই ব্যক্তি স্থায়ী এবং অপরিবর্তনীয় কিতাবে অর্থাৎ আমলনামায় মোনাফিক বলে লিখিত হয়।’ -ইমাম শাফেয়ী (রহ)। নবী করীম (স) আরও বলেছেন, জুমার নামাজ গরিব মুসলিমের হজের সমতুল্য। জুমার দিনে ফেরেশতাগণ মসজিদের দ্বারে দাঁড়িয়ে থাকেন এবং কে সর্বপ্রথম এলো, তারপর কে এলো এভাবে লিখতে থাকেন। যে ব্যক্তি সর্বপ্রথম আসে সে যেন একটি উট সাদকা করে। এরপর যে ব্যক্তি এলো সে যেন একটি গরু সাদকা করল, তারপর যে মুসল্লি মসজিদে প্রবেশ করে সে যেন একটি বকরী সাদকা করল, পরবর্তীজন যেন মুরগি ও তৎপরবর্তীজন একটি ডিম সাদকা করল, অতঃপর যখন ইমাম খুৎবা দিতে বের হয় ফেশেতাগণ তাদের দফতর বন্ধ করে খুতবা শুনতে থাকে।’ Ñ(বুখারী, মুসলিম)। আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা জুমার নামাজের ফজিলত ও আদব শিক্ষা দিতে গিয়ে পূর্ণাঙ্গ একটি সূরা নাজিল করেছেন। এর একটি আয়াতে বলা হয়েছে, হে ঈমানদারগণ! জুমার দিনে যখন জুমার নামাজের জন্য তোমাদের ডাকা হয় তখন নামাজের দিকে ধাবিত হও, বেচা কেনা (দুনিয়াবী কাজ-কর্ম) পরিত্যাগ কর। এটিই তোমাদের জন্য ভালÑ যদি তোমরা জ্ঞানী হও (তবে বুঝবে)।’ পবিত্র জু’মাতুল বিদা’ বা পবিত্র রমজান মাসের বিদায়ের বার্তাবাহী জুমা। মু’মিন মুসলমানগণ পরম আহলাদ ও বিশেষ মর্যাদায় পালন করে থাকেন এ দিবসটি। রমজানুল মুবারক ক্রমাগত শেষ হয়ে এলে এ দিবসের প্রতি তারা বিশেষ আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে থাকে। ইসলাম ধর্মে জুমা বা জুমা দিনের গুরুত্ব অনেক বেশি। দুনিয়ার অনেক উত্থান-পতন ও ঘটনার কালসাক্ষী এটি। পৃথিবী সৃষ্টি হয় এদিনে। কিয়ামতও এদিনে সংঘটিত হবে বলে বিখ্যাত তাফসীর ‘ইবনে কাসীর’ থেকে জানা যায়। এদিনের জুমার সালাত ও খুতবাকে গরিবের হজ বলা হয়ে থাকে। হাদীস শরীফে এসেছে, এদিন এমন একটি মুহূর্ত আছে, যাতে মানুষ যে দোয়াই করে কবুল হয়।’ আমরা সারাদিন পূতঃপবিত্র থেকে ইবাদত-বন্দেগী আন্জাম দেয়ার মাধ্যমে সে মুহূর্তটি লাভ করতে পারি। রহমত বরকত মাগফিরাতের মাস রমজানে জুমার দিবসের গুরুত্ব বহুগুণে বেড়ে যায়। কারণ, এ মাসের প্রতিটি নেক কাজের সাওয়াব অন্য এগারো মাসের তুলনায় অত্যধিক। বিশেষ করে এ মাসের সমাপনী জুমার আবেদন যে কোন জুমার তুলনায় মুমিন মনে দাগ কাটে বেশি। এ জন্য দেখা যায়, এদিন জুমার সালাতে প্রধান প্রধান মসজিদসমূহে মুসল্লিদের ঢল নামে; রাজপথ হয় লাখো মু’মিনের জায়নামাজ। মাহে রমজানের সামাজিক ও ধর্মীয় প্রেক্ষাপটে এ এক মনোমুগ্ধকর সংস্কৃতি। পবিত্র জুমা’তুল বিদার মর্যাদা ও গুরুত্ব বৃদ্ধির পেছনে তিনটি কারণ মুখ্য বলে ওলামাগণ মনে করেন। প্রথমত, এদিন পবিত্র রমজানুল মুবারককে আনুষ্ঠানিক বিদায় জানানোর একটি হৃদয় কাড়া ঐতিহ্য রয়েছে। দ্বিতীয়ত, এদিন বিভিন্ন স্থান ও পরিস্থিতি ভেদে সাদকাতুল ফিতরের পরিমাণ ঘোষণা করা হয় এবং তৃতীয়ত, এদিন মসজিদে মসজিদে আসন্ন পবিত্র ঈদুল ফিতরের করণীয় ও কর্তব্য সম্পর্কে ওয়াজ-নসিহত করা হয় আর এ দিবসের আমল, তাৎপর্য সম্পর্কে ধারণা দেয়া হয়। এবার জুমাতুল বিদা ও ঈদ-উল-ফিতর ক্রমিকভাবেই অবস্থান করছে। জুমাতুল বিদার পরবর্তীতে হেলালে শাওয়াল আমাদের জন্য একরাশ নির্মল আনন্দ বার্তা নিয়ে অপেক্ষমাণ। এ সময় তওবা ও ইস্তিগফারের মানসিকতায় উজ্জীবিত হয়ে একজন মুমিনের পবিত্র জুমাতুল বিদা পালনের মাহাত্ম্যই আলাদা।
×