ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সেরা ওপেনিং জুটি তামিম-সৌম্য!

প্রকাশিত: ০৪:০৯, ১৭ জুলাই ২০১৫

সেরা ওপেনিং জুটি তামিম-সৌম্য!

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ইমরুল কায়েস, এনামুল হক বিজয়, জুনায়েদ সিদ্দিকী, শাহরিয়ার নাফীস, নাজিমুদ্দিন, শামসুর রহমান শুভ ওপেনিংয়ে খেলেছেন। সবাই তামিম ইকবালের সঙ্গী ছিলেন। কিন্তু দীর্ঘ সময় ধরে কেউই তামিম ইকবালের যোগ্য সঙ্গী হতে পারেননি। তাহলে কী সৌম্য সরকার সেই সঙ্গী হয়ে গেলেন? সেরা ওপেনিং জুটিই হয়ে গেল তামিম-সৌম্য? তাই মনে হচ্ছে। ১০ ম্যাচে এক সঙ্গে ইনিংস শুরু করেছেন তামিম ইকবাল ও সৌম্য সরকার। কিন্তু একটি জায়গায় এর মধ্যেই তারা ছাড়িয়ে গেছেন সবাইকে। বাংলাদেশের হয়ে ওয়ানডেতে সবচেয়ে বেশি শতরানের উদ্বোধনী জুটি এই দুজনের। বুধবার চট্টগ্রামে জয়ের জন্য ১৭০ রান জয়ের লক্ষ্যে শতরানের জুটি গড়েন এই দুজন। ওয়ানডেতে এই দুজনের এটি তৃতীয় শতরানের জুটি। বাংলাদেশের হয়ে ওয়ানডেতে একাধিক শতরানের উদ্বোধনী জুটি আছে আর একটি জুটিরই। সেই জুটিতে ছিলেন তামিম সঙ্গে এনামুল হক। ১৯ ইনিংস একসঙ্গে উদ্বোধন করে দুটি শতরানের জুটি তামিম-এনামুলের। সৌম্যকে সঙ্গী করে তামিম সেটা ছাড়িয়ে গেলেন ১০ ইনিংসেই। গত বিশ্বকাপে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম একসঙ্গে ওপেন করেছেন এই দুজন। সেই থেকে ১০ ইনিংসে দুজনের জুটি ৫, ৪৮, ২২, ১৪৫, ১০২, ৩৪, ৮, ১৭, ৫ আর এই ম্যাচে ১৫৪ রানের জুটি। শুধু উদ্বোধনীতেই নয়, সব উইকেট জুটি মিলিয়ে তামিম-সৌম্য জুটি এখন বাংলাদেশের ইতিহাসে দ্বিতীয়। এই জুটির চেয়ে বেশি শতরানের জুটি আছে শুধু সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহীমের, ৪টি। তবে সাকিব-মুশফিক একসঙ্গে উইকেটে জুটি বেঁধেছেন ৫৫ বার। উদ্বোধনী ও দ্বিতীয় উইকেট জুটি মিলিয়ে ১২ ইনিংস একসঙ্গে ব্যাট করে ৩ শতকের জুটি হয়ে গেল তামিম-সৌম্যর! ওয়ানডেতে বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি ওপেনিংয়ে জুটি বেঁধেছেন তামিম ও ইমরুল কায়েস। কিন্তু ৪৫ বার একসঙ্গে শুরু করেও একটি শতরানের জুটি নেই তাদের! তামিম ইকবাল এখন ওয়ানডেতে বাংলাদেশের সেরা রান সংগ্রাহক ব্যাটসম্যান। নিজেকে আর প্রমাণ করার কিছু নেই। তবে সৌম্য সরকারকে অনেক পথ এখনও পাড়ি দিতে হবে। শুরুটা অবশ্য দুর্দান্ত হয়েছে সৌম্যের। ভয়ডরহীন ক্রিকেট খেলে এরই মধ্যে সুনাম কুড়িয়েছেন সৌম্য সরকার। বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়া নিউজিল্যান্ডের মতো কন্ডিশনে দারুণ পারফর্মেন্স করেছেন তিনি। এরই ধারাবাহিকতায় ঘরের মাঠে পাকিস্তান, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ছিল সৌম্যর দুর্দান্ত পারফর্মেন্স। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দ্বিতীয় ও তৃতীয় ম্যাচে ম্যাচসেরার পুরস্কার উঠেছে তার হাতে। শুধু তাই নয়, সিরিজসেরাও হয়েছেন সাতক্ষীরার ছেলে সৌম্য। ওয়ানডে ক্রিকেটে ১৬ ম্যাচে সৌম্য সরকার ৪ হাফসেঞ্চুরি ও ১ সেঞ্চুরি করেছেন (রান ৬৯২)। প্রত্যেক ম্যাচেই খেলে চলেছেন দুর্দান্ত কিছু শট। বুধবার তৃতীয় ও শেষ ম্যাচে এমনই কিছু দুর্দান্ত শট খেলেছিলেন সৌম্য। তার এই শট দেখে বিমোহিত সাবেক ক্রিকেটার ও বর্তমান ধারাভাষ্যকার ফারুক আহমেদ। বলেছেন, ‘সৌম্য অসাধারণ ক্রিকেট খেলছে। বিশেষ করে তার কিছু দুর্দান্ত শট দেখার মতো। আমি বিশ্বাস করি সৌম্য অনেক দূর যাবে। বাংলাদেশের ক্রিকেটের নতুন নক্ষত্র সৌম্যকে ভাবা যেতেই পারে।’ একমাত্র ক্রিকেটার ভারতের রোহিত শর্মা, যিনি ওয়ানডে ক্রিকেটে ডাবল সেঞ্চুরি করেছেন দুইবার। ব্যাট হাতে বোলারদের সামনে সাক্ষাত যমদূত তিনি। তবে সেই রোহিত শর্মাকে পরাস্ত করেছেন বাংলাদেশের উদীয়মান তারকা ব্যাটসম্যান সৌম্য সরকার। না সেটা মাঠে নয়, আইসিসির র‌্যাঙ্কিংয়ে রোহিতকে পেছনে ফেলেছেন সৌম্য। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশী ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সেরা র‌্যাঙ্কিং এখন সৌম্যের। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ঐতিহাসিক সিরিজ জয়ে সৌম্যের অবদান অনেক। দ্বিতীয় ওয়ানডে তিনি করেন অপরাজিত ৮৮। তৃতীয় ম্যাচে করেন ইনিংস সর্বোচ্চ ৯০। সব মিলিয়ে সিরিজ সেরার পুরস্কার পাওয়া সৌম্য র‌্যাঙ্কিংয়ে এগিয়েছেন কয়েক ধাপ। প্রোটিয়াদের বিপক্ষে তৃতীয় ওয়ানডের পর ওডিআই র‌্যাঙ্কিং হালনাগাদ করে আইসিসি। নতুন র‌্যাঙ্কিংয়ে ব্যাটসম্যানদের মধ্যে ১৫ নম্বরে উঠে এসেছেন সৌম্য। ঠিক তার পেছনেই রয়েছেন রোহিত শর্মা। এমন পারফর্মেন্স ধরে রাখতে পারলে অচিরেই প্রথমবারের মতো সেরা দশে উঠে আসতেও পারেন সৌম্য। সেই দিন খুব বেশি দূরে নয়। সৌম্য যেমন বলেই দিয়েছেন, ‘দোয়া করবেন যেন এভাবেই নৈপুণ্য দেখাতে পারি।’ সেই দোয়া সবার আছে। এখন মাঠে সৌম্যকে এই ধারাবাহিকতা বজায় রাখার পালা। তাতে করে তামিম-সৌম্যই বাংলাদেশের সেরা ওপেনিং জুটি হয়ে উঠবে। তামিম ইকবাল বলেছেন, ‘সিরিজ জয়ে দুর্দান্ত লাগছে। সেই জয়ে অবদান রাখতে পেরে (তৃতীয় ওয়ানডেতে অপরাজিত ৬১ রান) খুবই ভাল লাগছে।’ তামিমের এ ভাল লাগা আরও বেড়ে যাওয়ার কথা। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে যে তামিম-সৌম্য মিলেই সবচেয়ে বড় জুটিটা গড়েছেন। তাতেই বোঝা যাচ্ছে, এ দুইজন সেরা জুটির হওয়ার দিকেই এগিয়ে চলেছে।
×