ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

এদের মুখে শেখ ফরিদ বগলে ইট

প্রকাশিত: ০৩:৪৯, ১৭ জুলাই ২০১৫

এদের মুখে শেখ ফরিদ বগলে ইট

বিএনপির বর্তমান হালদৃষ্টে এর অভ্যন্তরে এবং বাইরে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা চলছে দলটির ভবিষ্যত নিয়ে। এসব আলোচনা-সমালোচনায় স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে, দলটি এখন অস্তিত্বের সঙ্কটে পড়েছে। অবিশ্যি, সেই জন্মলগ্ন থেকেই দলটিতে যে মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতির সূচনা ঘটে, তাতে একদিন না একদিন একে আজকের এই সঙ্কটাপন্ন পরিস্থিতিতে পড়তেই হতো। সবচেয়ে বড় কথা দলটি যে অগণতান্ত্রিক ও চক্রান্তমূলক ধারায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তার মধ্যেই আদতে নিহিত ছিল এর সঙ্কটের বীজ। বাংলাদেশের মানুষ সাতচল্লিশের দেশ বিভাগের পর দীর্ঘ তেইশ বছর গণতন্ত্র ও অসাম্প্রদায়িক চেতনাসম্পন্ন একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য যে নিরবচ্ছিন্ন সংগ্রাম করে এসেছিল তা আমাদের জাতীয় ইতিহাসের অন্যতম গৌরবদীপ্ত অধ্যায়। ধর্মের নামে ও দ্বিজাতি-তত্ত্বের ভিত্তিতে ভারত বিভক্তির অব্যবহিত পরেই পাকিস্তান রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা এম এ জিন্নাহসহ অনেকেই রাষ্ট্রটিকে আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তুলতে সচেষ্ট ছিলেন। কিন্তু কায়েমি স্বার্থবাদী এক শ্রেণীর সামরিক-বেসামরিক আমলা, অসৎ ও মতলববাজ রাজনীতিক ও অসাধু ব্যবসায়ীদের চক্র-চক্রান্তে তথাকথিত ধর্মাশ্রিত এক কৃত্রিম ও শোষণবাদী সমাজ প্রতিষ্ঠাই হয়ে ওঠে এর লক্ষ্য। রাষ্ট্রটির সূচনালগ্নে এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা শহীদ সোহরাওয়ার্দীকে একেবারেই প্রথমদিন থেকে রাজনৈতিকভাবে ঘায়েলের জন্য শাসকগোষ্ঠীকে এক ভয়ঙ্কর অপচেষ্টায় মত্ত হতে দেখা যায়। পূর্ব পাকিস্তানের জনগোষ্ঠীর প্রতি বিমাতাসুলভ আচরণ আর ভারত বিদ্বেষ ছড়িয়ে রাষ্ট্র শাসনের এক অভিনব ধারার সূত্রপাত ঘটায় তারা। সত্য বটে, পূর্ব পাকিস্তানবাসীর প্রতি তো বটেই, এমনকি পশ্চিম-পাকিস্তানের অপেক্ষাকৃত পশ্চাদপদ প্রদেশ যেমন বেলুচিস্তান ও সীমান্ত প্রদেশের জনগণের প্রতিও বৈষম্যমূলক আচরণ এবং শোষণবাদী কার্যক্রম চলে নির্বিবাদে। যা হোক, সাতচল্লিশে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল মুসলিম লীগ নামক একটি প্লাটফর্মের নেতৃত্বে। মাত্র সাত বছরের মাথায় সেই মুসলিম লীগ (১৯৫৪ সালে) পূর্ব-পাকিস্তানে সম্পূর্ণভাবে উৎখাত হয় জনতার রুদ্ররোষে একটি প্রাদেশিক নির্বাচনে। আর এই অসাধ্য সাধন সম্ভব হয়েছিল শহীদ সোহরাওয়ার্দী, শেরে বাংলা ফজলুল হক, মাওলানা ভাসানী প্রমুখের ঐক্যবদ্ধ নেতৃত্বে। মোদ্দাকথা, মুসলিম লীগ শাসনকার্য পরিচালনায় গোড়া থেকেই যে বৈষম্য, মিথ্যা, চক্রান্ত ও হিংস্রতার আশ্রয় নিয়েছিল তাই অত্যল্পকালের মধ্যে বুমেরাং হয়ে দেখা দেয় এবং যাবতীয় রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা সত্ত্বেও কালক্রমে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। চল্লিশের দশকের শেষ দিকে বা পঞ্চাশের একেবারে গোড়ার দিকে যে মুসলিম লীগের বিরুদ্ধে কোন প্রকার বাক্য উচ্চারণ ছিল প্রায় অকল্পনীয় ব্যাপার সেই মুসলিম লীগই সম্পূর্ণভাবে তলিয়ে গেলÑ ইতিহাসের আস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হলো কেবল মিথ্যার বেসাতী, ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত আর জনবিচ্ছিন্ন কর্মকা-ের কারণে। মুসলিম লীগ এবং অন্য সামরিক শাসকরা বরাবরই নির্বাচনকে পাশ কাটিয়ে বা দেশব্যাপী কোন নির্বাচনের আয়োজন না করে এবং সামরিক-বেসামরিক আমলাদের কর্তৃত্ববাদী শাসন প্রতিষ্ঠায় ইন্ধন জুগিয়ে নিজেদের তো বটেই এমনকি রাষ্ট্রটিরও ধ্বংস ডেকে এনেছিল। তাই মাত্র তেইশ বছরে পাকিস্তান ভেঙে দুই টুকরো হয়ে গেল। আগামীতে আরও কয়েক টুকরো হলেও বিস্ময়ের কিছু থাকবে না। কেননা, রাষ্ট্রটিতে সেই প্রথম থেকেই মিথ্যা গোঁজামিল আর ভ-ামিরই পরিচর্যা চলায় এর ভিত বরাবরই দুর্বল হয়ে পড়েছে বৈকি! যা হোক, সেদিনের পাকিস্তানে আজকের বাংলাদেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠী শহীদ সোহরাওয়ার্দী, শেরে বাংলা, ভাসানী, বঙ্গবন্ধুদের নেতৃত্বাধীনে মরণপণ রাজনৈতিক সংগ্রাম বা লড়াই করেছে। দাবি ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় এদেশের ছাত্র-যুবা, কৃষক-শ্রমিক-শিক্ষক-বুদ্ধিজীবীরা অকাতরে প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন তেইশ বছরের সংগ্রামের এক এক ধাপে। এই সংগ্রাম ছিল মিথ্যা ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে। ধর্মের নামে ব্যবসা ফেঁদে যারা গণমানুষের ওপর শোষণ ও কুশাসন চাপিয়ে দিয়েছিল তাদের বিরুদ্ধে ছিল এই অভূতপূর্ব সংগ্রাম-সাধনা। মুসলীম লীগ, জামায়াতে ইসলামী, নেজামে ইসলামী ইত্যাদি নানা ইসলাম-পছন্দ দল খাড়া করে একশ্রেণীর ধর্মব্যবসায়ী সেদিন মানুষকে অধিকারহারা রাখার এবং তাদের ওপর শোষণ-বঞ্চনা চাপিয়ে দেয়ার কাজ করে গেছে নিছক নিজেদের দুনিয়াবী স্বার্থোদ্ধারের উদ্দেশ্যে। বাঙলার সাধারণ ধর্মপ্রাণ মানুষকে বিভ্রান্ত করতে কোরআন-হাদিসের অপব্যাখ্যা করতে এরা সদাই ছিল তৎপর ও উন্মুখ। ধর্মকে এমনিভাবে ব্যবহার করে এবং আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের প্রতি শত্রুতামূলক প্রচার-প্রচারণার মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তানের সাধারণ জনগোষ্ঠীকে একটি কৃত্রিম ধারার জাতীয়তাবাদে উদ্বুদ্ধ করার অপচেষ্টা চলে সেদিন। বাংলাভাষা ও সংস্কৃতির ওপর এমনকি রবীন্দ্রনাথ-নজরুলের উপরও আক্রমণ চলে দেদার। হাজার বছরের ঐতিহ্যসমৃদ্ধ আমাদের ভাষা-সংস্কৃতিকে ‘ইসলামীকীকরণের’ এক অভিনব পাঁয়তারা শুরু হয় ঐ ধর্মব্যবসায়ীদের দ্বারা। পাকিস্তানে ‘তাহজিব-তমদ্দুন’ রক্ষার নামে বাংলাভাষা ও সংস্কৃতিকে কৃত্রিম জেওর পড়াবার অপচেষ্টা চলে। বাংলার মুসলমানদের ওপর ভারতের হিন্দু সংস্কৃতির ‘আছর’ বা ‘প্রভাব’ দূর করার জন্য কৃত্রিম উপায়ে এমনকি অনেক ক্ষেত্রেই জবরদস্তিমূলকভাবে বাংলা ভাষায় আরবি-ফার্সি শব্দের আমদানি চলতে থাকে। নজরুলের কবিতা বা প্রবন্ধ থেকেও তথাকথিত হিন্দুয়ানি শব্দ বাদ দেয়ার আয়োজন চলে। এই উর্বর-মস্তিস্ক তথাকথিত ধর্মব্যবসায়ী-বুদ্ধিজীবীর দল এ ধরনের কুপরামর্শ দিয়ে নিজেদের কায়েমি স্বার্থ প্রতিষ্ঠায় মগ্ন থাকে গোটা পাকিস্তান আমলে। আমাদের সাধারণ শান্তিপ্রিয় ধর্মপ্রাণ মুসলমান জনগোষ্ঠীর মনে এইভাবে সাম্প্রদায়িকতা ও হিন্দু বিদ্বেষ প্রবিষ্ট করা এবং সর্বোপরি তাদের ইসলামের উদারবাদী সহনশীল ধারা থেকে বিচ্যুত করার অপপ্রয়াস চলতে থাকে। এই রাষ্ট্রটিতে শাসকগোষ্ঠীর ভ-ামি এবং জনগণের সঙ্গে প্রতারণামূলক আচরণের বিরুদ্ধে বাংলার আপামর জনসাধারণ দীর্ঘ তেইশ বছরের রাজনৈতিক সংগ্রামের পর একাত্তরে সশস্ত্র যুদ্ধের বিজয় অর্জনের মধ্য দিয়ে একটি অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ভিত রচনা করে। কিন্তু পরাজিত প্রতিক্রিয়াশীল অপশক্তি তাদের দেশী-বিদেশী পৃষ্ঠপোষকদের সহায়তায় স্বাধীনতার অব্যবহিত পর থেকেই নানান চক্র-চক্রান্তের সূত্রপাত ঘটায়। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল নামক সংগঠনটির কার্যক্রম ঐ অপশক্তির দূরভিসন্ধি বাস্তবায়নে সর্বাপেক্ষা সহায়ক ভূমিকা পালন করে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে তাদের চক্রান্তের ষোলকলা পূর্ণ হয় এবং পরবর্তীকালে জেনারেল জিয়াউর রহমানের ক্ষমতারোহন, বিএনপি প্রতিষ্ঠা আর পাকিস্তানবাদী রাজনীতি চর্চার ইতিহাস কমবেশি সকলেরই জানা। জিয়াউর রহমানের রাজনীতি তথা তার শাসনকালের পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণে স্পষ্ট প্রতীয়মান হবে যে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিপরীতে সেই গণবিরোধী পাকিস্তানী ধারার সাম্প্রদায়িক ও বিভেদের রাজনীতিকে ফিরিয়ে আনাই ছিল এর উদ্দেশ্য। বিএনপি সেই ধারাটিই অত্যন্ত নিষ্ঠা ও যতেœর সঙ্গে অনুশীলন করে চলেছে। সুতরাং, জিয়াউর রহমানের রাজনীতি আর খালেদা জিয়ার রাজনীতির মধ্যে যারা আজ ফারাক (যেমনÑ ডাঃ বদরুদ্দোজা, মঈন খান প্রমুখ) আছে বলে দাবি করেন তারাও বিলক্ষণ জানেন যে, এ দুয়ের মধ্যে আসলে কোনই পার্থক্য নেই। জিয়াউর রহমান সেদিন সজ্ঞানে ও অত্যন্ত সচেতনার সঙ্গে যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযম গংদের পুনর্বাসন নিশ্চিত করে এবং মুক্তিযুদ্ধ-বিরোধী রাজনৈতিক দলসমূহের নেতাকর্মীদের বিএনপির ছাতার নিচে একত্রিত করে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বিজয়কে প্রশ্নবিদ্ধ ও নস্যাৎ করার সূচনা ঘটান। দলটি সেই ধারাবাহিকতাই বজায় রেখেছে তার নির্মম হত্যাকা-ের পরও। বদরুদ্দোজা চৌধুরী বা মঈন খান-মওদুদরা শিক্ষায়-দীক্ষায় যথেষ্ট প্রাগ্রসর হওয়ার পরও কেন অন্যায়কারী ও অপরাধীদের পক্ষাবলম্বন করে বিএনপির রাজনীতিকে সুপ্রতিষ্ঠিত করার কাজে ব্যাপৃত তা বুঝতে হলে এদের পারিবারিক ইতিহাস এবং এদের ব্যক্তি জীবনের প্রারম্ভকাল থেকে বর্তমান তরক্কি পর্যায় পর্যন্ত তারা কিরূপে পৌঁছেছেন তার তত্ত্ব-তালাশ নেয়া দরকার। ডাঃ বদরুদ্দোজার পিতা আওয়ামী লীগ নেতা এবং যুক্তফ্রন্টের মন্ত্রী ছিলেন। কিন্তু তার বা চৌধুরী সাহেবের মনের মধ্যে পাকিস্তান ঠিকই গভীরভাবে প্রোথিত ছিল। ফলে আওয়ামী লীগের সুদীর্ঘ নিরবচ্ছিন্ন সংগ্রামের যে ফসল তিনি লাভ করেছিলেন তারই নেশায় বুঁদ ছিলেন তিনি এবং এখনও আছেন। তাই বিএনপির নেতারা রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজাকে যখন অন্যায়ভাবে ইমপিচ করতে চায় বা পদচ্যুত করতে বাধ্য করে কিংবা জিয়ার আদর্শের সৈনিকরা যখন তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছনার জন্য রেল-লাইনের ওপর দিয়ে ধাওয়া করে তখনও তার বিএনপি প্রীতিতে ঘাটতি পড়ে না। যদিও ক্ষোভে-দুঃখে বিকল্পধারা নামক দল তিনি গঠন করেন কিন্তু তার দেহ ও আত্মা সত্যের পক্ষে নয়, বিএনপির পক্ষেই পড়ে থাকে। রাষ্ট্রপতি থাকাকালে জিয়ার কবরে গিয়ে ‘শ্রদ্ধা’ না জানানোর কারণে তার প্রতি দল যখন ক্ষুব্ধ হয়েছিল তখন তিনি ঐ কবরে না যাওয়ার পক্ষে যে যুক্তি দেখিয়েছিলেন তা কেউই মানেনি। আজ আবার জিয়ার ১৯ দফার বরকন্দাজ হতে চাইছেন তিনি। খালেদা জিয়া যখন জামায়াতকে নিয়ে পেট্রোল বোমায় শত শত নিরীহ মানুষের জীবননাশ ঘটায়, তখন তিনি, মওদুদ বা মঈন খানরা মুখে কুলুপ এঁটে বসেছিলেন। সত্য বা ন্যায়ের খাতিরে এই দুষ্কর্মের প্রতিবাদ করেননি। আজ বিএনপির ভগ্নদশা এবং বেগম জিয়ার দুরবস্থা দেখে তারা যেন এক একজন প্রচ- ত্যেজী শার্দুল হয়ে উঠেছেন। সুবিধাবাদের রাজনীতির পরাকাষ্ঠা আর কাকে বলে! বিএনপির গঠনতন্ত্রে দলীয় প্রধানকে যে স্বেচ্ছাচারী বা স্বৈরাচারী ভূমিকা পালনের ক্ষমতা দেয়া হয়েছে, সে গঠনতন্ত্রকে গণতান্ত্রিক গঠনতন্ত্রে রূপান্তরের কোন চেষ্টাই এরা নেননি। বরং বরাবরই খালেদা জিয়া ও তাঁর পুত্র অর্বাচীন তারেকের তাঁবেদার করার মধ্যেই রাজনৈতিক সাফল্য খুঁজে ফিরেছেন। সুতরাং, এসব তথাকথিত শিক্ষিত লোক মুখে যতই গণতন্ত্র আর বাংলাদেশের স্বাধীনতা কিংবা গণমানুষের পক্ষে কথা বলুুন না কেন এরা ‘দোদেল বান্দা কলমা চোরের’ ভূমিকায় অবতীর্ণ। খালেদা জিয়া যখন বলেন, আওয়ামী লীগকে ভারত চালায় তখন পাকিস্তানের আইএসআইর সঙ্গে বিএনপির কি সম্পর্ক তা তারা পরিপূর্ণভাবে জানা সত্ত্বেও সে সত্য জনসমক্ষে মেলে ধরেন না নিছক নিজ নিজ মতলবি স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে। আবার খালেদা যখন বলেন যে, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে মসজিদে মসজিদে উলুধ্বনি হবে, ফেনীসহ বাংলাদেশের এক দশমাংশ ভারতের দখলে চলে যাবে তখন এসব কথা যে সারাসার মিথ্যা তা জানা থাকা সত্ত্বেও এইসব নেতা এর প্রতিবাদের সাহস দেখান না। আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা কিংবা শাহ এ এম এস কিবরিয়া, সাংসদ আহসানউল্লাহ মাস্টার, মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী আইভি রহমানসহ বিএনপি আমলে যে হাজার হাজার রাজনৈতিক নেতাকর্মী হত্যা করা হয় তার প্রতিবাদ করেন না। খালেদা জিয়ার সর্বশেষ শাসনকালে বাংলাদেশকে হুজি, লস্করে তৈয়বা, জেএমবি, উলফাসহ বিভিন্ন জঙ্গী সংগঠনের অভয়ারণ্য বানানো হয় তা এসব রাজনীতিকদের জানা ছিল না এ কথা পাগলেও বিশ্বাস করবে না। তখন কিন্তু এরা খালেদা বা তার প্রশাসনকে এসব দুর্বৃত্তপনা থেকে বিরত রাখতে প্রভাব বিস্তার করেননি। দশ ট্রাক অবৈধ অস্ত্র ধরা পড়ার পরও এরা নিশ্চুপ। খালেদা জিয়ার জনসভায় যুদ্ধাপরাধীদের মুক্তির দাবিতে পোস্টার ও সেøাগান উঠলেও এরা কিন্তু খালেদা বা তারেককে সেদিন সতর্ক বা ভর্ৎসনা করার কোন প্রয়োজনই বোধ করেননি। হেফাজতিদের আস্ফালন, পবিত্র কোরআন শরীফ পোড়ানো, শত শত গাছ কর্তন এবং ধর্মীয় মিথ্যা অহমিকায় ফেটে পড়া মাদ্রাসার শিক্ষক-ছাত্রদের উন্মাদনা রোধে এরা কোন ভূমিকাই নেননি। বরং এসব গণবিরোধী ও রাষ্ট্রবিরোধী তৎপরতাকে উস্কে দিতে এরা কেউই ভোলেননি। ব্যক্তিজীবনে ধর্মের অনুশীলন না করলেও হেফাজতি বা জামায়াতিদের ইসলাম রক্ষার নামে পরিচালিত যাবতীয় দুষ্কর্মের সহায়ক ও সমর্থক হিসেবে তাদের পাশে দাঁড়াতে কখনই ভুল করেননি। বিএনপি আমলে শহীদ জিয়ার অনুসারীরা কিভাবে পূর্ণিমা রানীসহ শত শত সংখ্যালঘু নারীকে ধর্ষণ করেছে এবং যাবতীয় মানবতাবিরোধী কর্মকা-ে নিয়োজিত থেকেছে তা আজ সকলেরই জানা। বিএনপি মুক্তিযুদ্ধের নামে জামায়াতিদের ধর্মব্যবসার মতোই একপ্রকার ব্যবসা করে থাকে। লক্ষণীয়, উল্লিখিত বিএনপি নেতাদের মুখে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার স্বপক্ষে যা দু-এক কথা শোনা যায় তা সর্বোতভাবে ও সূক্ষ্মভাবে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ, মূল্যবোধ ও চেতনাবিরোধী বক্তব্য এবং তাদের বিদেশী মুরব্বিদের শেখানো বুলি মাত্র। তাই জামায়াতি বা অন্যরা যখন মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী তৎপরতায় মেতে ওঠে তখন মনে মনে এরা আহ্লাদে ফেটে পড়ে। এসব রাজনীতিক সত্যকে কিভাবে মিথ্যা বানায় তার অন্যতম প্রধান নিদর্শন ডাঃ বদরুদ্দোজা চৌধুরীর সেসব টিভি অনুষ্ঠান যার মাধ্যমে তিনি মিথ্যার বেসাতি করে বার বার প্রমাণ করতে চেয়েছেন বা জনগণকে বিভ্রান্ত করেছেন আওয়ামী লীগকে ইসলামবিরোধী সংগঠনরূপে চিহ্নিত করে। জনগণ আসলে কিন্তু কখনই বোকা ছিল না আর এখনও যে নেই এই সত্যটি বরাবরই তাদের দৃষ্টি এড়িয়ে যায়। তাই তারা বার বার ডিগবাজি খেতে পরান্মুখ নয়। ডাঃ বদরুদ্দোজা চৌধুরী, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ, জেনারেল (অব) মাহবুবুর রহমান, ডাঃ মঈন খান, এ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেনসহ বিএনপির নেতারা বেগম জিয়া ও তারেক জিয়ার মিথ্যাশ্রয়ী রাজনীতির খয়ের খাঁ মাত্র! অন্য কথায়, বেগম জিয়াদের অনুগ্রহ লাভের জন্য সদা তৎপর, যা কিনা কোন সৎ ও সত্যাশ্রয়ী মানসিকতার পরিচয় বহন করে না। আসলে সকলেই এখন বোঝে যে, ‘এদের মুখে শেখ ফরিদ বগলে ইট।’ লেখক : সাংবাদিক
×