ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সমাজ-ভাবনা ॥ এবারের বিষয় ॥ আনন্দ ভাগাভাগির ঈদ

প্রকাশিত: ২১:২৫, ১৭ জুলাই ২০১৫

সমাজ-ভাবনা ॥ এবারের বিষয় ॥ আনন্দ ভাগাভাগির ঈদ

ঈদ মুসলমানের প্রধান উৎসব। ঈদের আনন্দ সর্বজনীন। বিশ্বের সব দেশের ও সব পেশার মুসলমানের সমান অধিকার আছে ঈদের আনন্দ উপভোগের। নির্দিষ্ট কোন গোষ্ঠী বা সম্প্রদায়ের জন্য ঈদের আনন্দ সীমাবদ্ধ নয়। কিছু লোকের একক আধিপত্যও নেই ঈদের আনন্দ-উৎসবে। জেলে-কুমার, তাঁতী-কৃষক, ধোপা-মুচি, চাকরিজীবী-ব্যবসায়ী কোন ভেদাভেদ নেই এ মহানন্দে। তাই ধনী-গরিব, রাজা-প্রজা সব মুসলমান ঈদের আনন্দ উপভোগ করে থাকেন নিজস্বভাবে। ধনীর অট্টালিকায় ও দরিদ্রের জীর্ণ কুটিরে ঈদের আনন্দ প্রবাহিত হয় সমভাবে। পারস্পরিক সহমর্মিতা-সহানুভূতি জাগ্রত করা ঈদের বিশেষ শিক্ষা। ভ্রাতৃত্ববোধ ও জাতীয় ঐক্য সুসংহত করা ঈদের প্রধান দীক্ষা। ঈদের উৎসব শুধু ভোগের নয়, ত্যাগেরও। তাই ঈদের উৎসবে আনন্দের সঙ্গে মুসলমানদের ত্যাগের সাধনাও করতে হয়। এ জন্য বিত্তশালী মুসলমানদের অর্জিত সম্পদের অংশ দিয়ে অভাবী মুসলমানদের ঈদ আনন্দে সম্পৃক্ত করতে হয়। এ কারণে অনেকে আত্মীয়স্বজন, প্রতিবেশীসহ সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে ঈদের আনন্দে সম্পৃক্ত করার চেষ্টা চালায়। রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়ের মাধ্যমে দলীয় নেতাকর্মী, শুভানুধ্যায়ী ও জনগণকে ঈদের আনন্দে সম্পৃক্ত করার চেষ্টা করেন। সমাজসেবীরা সমাজের সবাইকে ঈদের আনন্দে সম্পৃক্ত করার জন্য বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহণ করেন। সাহিত্য-সাংস্কৃতিক কর্মীরা সবাইকে ঈদের আনন্দ দেয়ার জন্য বিশেষ সাহিত্য রচনা ও বিনোদন কর্মসূচী নির্মাণ করেন। দর্জি- দোকানিরা অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে গ্রাহককে ঈদের আনন্দ দেয়ার চেষ্টা করেন। পরিবহন শ্রমিকরা প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ করার জন্য যাত্রীদের সম্ভব সব রকম সহযোগিতা করে থাকেন। ঈদের সুস্বাদু ও উপাদেয় খাবার সরবরাহের জন্য বহুজন আপ্রাণ পরিশ্রম করেন। ঈদের আনন্দ বাড়াতে ব্যবসায়ীরা নতুন নতুন পণ্য-সেবা বাজারজাত করেন। আইনশৃঙ্খলায় নিয়োজিত কর্মীরা জনগণের ঈদের আনন্দ নিশ্চিত করতে নিজেদের ঈদ আনন্দ বিকিয়ে দেন। ঈদ মুসলমানদের আনন্দ উৎসব হলেও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বাংলাদেশে এ উৎসবে অন্য ধর্মাবলম্বীরাও অংশ নিয়ে থাকেন। হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টানসহ সব ধর্মের লোকেরা ঈদ উৎসবে শুভেচ্ছা বিনিময়ে অংশগ্রহণ করেন। এভাবে সমাজের সর্বস্তরের মানুষ পরস্পরের মধ্যে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগির জন্য সাধ্যমতো চেষ্টা করেন। এসব সত্ত্বেও অনেক গরিব-দুঃখী ঈদের আনন্দ-উৎসবে বঞ্চিত থাকেন। এতে সমাজের ভাতৃত্ববোধ ও সহমর্মিতা প্রশ্নবিদ্ধ হয় এবং ঈদের আনন্দ অপূর্ণ থাকে। আর এর দায় সমাজের বিত্তশালী-ধনিকশ্রেণী লোকদের ওপর পড়ে। কারণ আল্লাহ তায়ালা ‘ধনীদের সম্পদে দরিদ্র-বঞ্চিতের অধিকার’ তথা ‘যাকাত’ নির্ধারণ করে দিয়েছেন। এছাড়া গরিব-অসহায়দের দান করার জন্য তিনি ধনীদের প্রতি উৎসাহ-উপদেশ-নির্দেশ করেছেন। অধিকন্তু ঈদের আনন্দ সর্বজনীন করতে ইসলামী বিধানে ঈদগাহে যাওয়ার আগেই দরিদ্র-অসহায়দের ‘সাদকাতুল ফিতর’ প্রদান ওয়াজিব করা হয়েছে। যাতে ধনী-দরিদ্র, অসহায়-বঞ্চিত সবাই ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারে। তাই সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে সমাজের সবাইকে বিশেষত বিত্তশালীদের আন্তরিক ও সচেষ্ট হতে হবে। এম এ সবুর কড্ডার মোড়, সিরাজগঞ্জ থেকে
×