ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ঘোষণার অতিরিক্ত চাল আমদানি

কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার

প্রকাশিত: ০৭:১৬, ১৬ জুলাই ২০১৫

কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার

ডি.এম তালেবুন নবী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ॥ হঠাৎ করেই মিথ্যা ঘোষণার মাধ্যমে অতিরিক্ত চাল আমদানি বেড়ে গেছে সোনামসজিদ স্থলবন্দরে। শুধু জুন মাসেই ঘোষণার অতিরিক্ত চাল আমদানির মাধ্যমে প্রায় ৩৫ কোটি টাকার শুল্ক ফাঁকি দেয়া হেয়েছে বলে একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র নিশ্চিত করেছে। দীর্ঘ সময় ধরে উত্তরাঞ্চলসহ দেশের বেশকিছু প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী শুল্কমুক্ত চাল ভারত থেকে সোনামসজিদ বন্দর দিয়ে আমদানি করায় দেশের অভ্যন্তর ভাগে কৃষক তার উৎপাদিত ধান চাল থেকে ন্যায্যমূল্য পাচ্ছিল না। ফলে কৃষক মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিল। সরকার বিষয়টি জানতে পেরে দ্রুত কৃষকদের বাঁচাতে বা তাদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে আমদানি করা চালে ১০ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করে। ফলে এতদিন ধরে বিনা শুল্কে চাল আমদানিকারকরা অনেকটাই থমকে দাঁড়াই। তাই বলে চাল আমদানি বন্ধ না করে শুল্ক ফাঁকির বিকল্প পথ বের করে। যাতে করে এতদিন শুল্কমুক্ত যে চাল আমদানি করে আসছিল তার সমান্তরাল বিকল্প ব্যবস্থা বের করে। শুল্ক পরিশোধ করলেও লভ্যাংশ যাতে আগের মতো শুল্কমুক্ত পর্যায়ে থাকে তার ব্যবস্থা পাকাপাকি করে ফেলে। আর এই বিকল্প ব্যবস্থার অংশ হিসাবে প্রতি ট্রাকে ঘোষণার অতিরিক্ত চাল আনা শুরু করে। শুল্ক কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করেই চাল আসতে থাকলে প্রথমেই বিষয়টি সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবির নোটিশে আসে। সোনামসজিদ স্থলবন্দরে দিয়ে ভারত থেকে আমদানি চালের যথাযথ শুল্ক দিচ্ছে না আমদানিকারকরা এটা বিজিবি জানতে পেরে আমদানি করা চালের ট্রাক তল্লাশি শুরু করে। জুনের প্রথম সপ্তাহে নির্দিষ্ট একটি দিনের দিবাগত গভীর রাতে একটি ট্রাকে তল্লাশি দিয়ে পাঁচ মেট্রিক টন চাল জব্দ করে। ঘোষণার অতিরিক্ত এ চাল পাচার করা হচ্ছিল বলে ৯ বর্ডার ব্যাটালিয়নের অপারেশন অফিসের মেজর মিল্লাত আলী নিশ্চিত করে। সাধারণত দিনের পাঁচটার পর আমদানি করা পণ্য বন্দরে প্রবেশ করতে পারে না। কিন্তু গভীর রাতে সীমান্ত পেরিয়ে বন্দরে কর্তব্যরত বিজিবির সোনামসজিদ সীমান্ত ফাঁড়ির গেট এলাকায় একটি ট্রাক আসলে হাবিলদার বাদল কুমার ট্রাকটি আটক কের ওজন যন্ত্রের ওপর নিয়ে যায়। চালের এই ট্রাকে ঘোষণার অতিরিক্ত পাঁচ মেট্রিক টন চাল পাওয়া যায়। এবার বেরিয়ে পরে থলের বিড়াল। শুল্ক আরোপের পর থেকেই চালের ট্রাকে এ ধরনের ঘোষণার অতিরিক্ত চাল আনা শুরু হয়েছে। এ ঘটনার পর পরই দ্বিতীয় বার আবারও বিজিবি ২৪ মেট্রিক টন চালসহ একটি ভারতীয় ট্রক (ডই-১১অ-৩৮৭৫) আটক করলে এখানেও পাওয়া যায় ঘোষণার অতিরিক্ত চাল। চাল আমদানিতে ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করায় এক শ্রেণীর আমদানিকারক মিথ্যা গোষণ দিয়ে চাল আমদানি করছে। মিথ্যা ঘোষণায় পণ্য আমদানির হিড়িক পড়ে গেছে। এর মাধ্যমে সরকারের বিপুল পরিমাণ রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। চাঁপাইনবাবগঞ্জ বিজিবি প্রধান লে. কর্নেল আবু জাফর শেখ মোহাম্মদ বজলুল হক সাংবাদিকদের জানান ঘোষণার অতিরিক্ত যে ২৪ মেট্রিক টনের ভারতীয় ট্রাকটি আটক করা হয়েছে তার মালিক জামাল উদ্দীন (এমএ ট্রেডার্স)। আমদানি কারক প্রতিষ্ঠানটি বিএন বিজনেস নামের সিএন্ডএফ এজেন্টের মাধ্যমে চাল আমদানি করে থাকে। এ ধরনের একাধিক প্রতিষ্ঠান কাস্টমসকে ম্যানেজ করে ঘোষণার অতিরিক্ত চাল আনা অব্যাহত রেখেছে। তারাই লাখ লাখ টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে। আর পুষিয়ে নিচ্ছে আগের মতো শুল্ক মুক্ত চাল আনার সুযোগ সুবিধা। এ ব্যাপারে সোনামসজিদ বন্দরের একাধিক কাস্টমস কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করলেও তারা প্রতিদিনের চাল আমদানি করা ট্রাকের পরিমাণ বলতে নারাজ। নানান ধরনের অজুহাত দেখিয়ে ট্রাক প্রবেশের পরিসংখ্যান দেবার বিষয়টি এড়িয়ে যাচ্ছে। কারণ একটাই প্রতিটি চালের ট্রাক ঘোষণার অতিরিক্ত চাল থাকায় কাস্টমস ট্রাকের সংখ্যা দিচ্ছে না।
×