ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পথশিশুদের গায়ে ঈদের হাওয়া লাগেনি এখনও

প্রকাশিত: ০৬:২৫, ১৬ জুলাই ২০১৫

পথশিশুদের গায়ে ঈদের হাওয়া লাগেনি এখনও

এমদাদুল হক তুহিন ॥ সমাজের আট দশটা শিশুর মতো পথশিশুদের মনে এখনও ঈদ আনন্দ লাগেনি। যেন ঈদ এখনও অনেক দূরে! কিংবা ঈদের দিনই ঈদ! তার মানে এই নয়; পথশিশুদের নিয়ে কারও ভাবনা নেই। তরুণ প্রজন্মের ক্ষুদ্র একটি অংশ পথশিশুদের সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে নিচ্ছে একাধিক উদ্যোগ। ব্যক্তিগতভাবে সাহায্য প্রদান ছাড়াও সংঘবদ্ধ হয়ে রমজানের প্রথম থেকেই মাঠে রয়েছে মানবতাপ্রেমী তরুণ প্রজন্ম। মধ্য রমজান অবধি কেবল ইফতারির আয়োজন নিয়ে মাঠে থাকলেও, এখন এর সবটাই ঈদকেন্দ্রিক। সপ্তাহখানেক ধরে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে ছিন্নমূল পথশিশুদের সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগির শেষ চেষ্টা চলছে। ঈদের কাপড় বিতরণ ছাড়াও চলছে সেমাই ও চিনি বিতরণ। অবহেলিত ও বঞ্চিত এ শিশুরা বাবা-মা’র সঙ্গে ভ্যানে বসেই ঈদ আনন্দে হেসে উঠতে পারে চলছে সে ব্যবস্থা। নতুন জামা গায়ে চেপে ঈদের মাঠ কিংবা পড়শী বাড়িতে বেড়ানোর সাধ্য না হলেও; পথের এ শিশুরা রাস্তার ধারেই যেন ঈদ আনন্দে মেতে উঠতে পারে ঈদ ছুঁই ছুঁই মুহূর্তে সেটাই সকলের প্রত্যাশা। রাজধানীর ধানম-ি, শাহবাগ, ফার্মগেট, মহাখালী, বনানীসহ বেশ কয়েকটি ফুটপাথ ঘুরে দেখা যায়; ঈদ এলেও ঈদের হাওয়া লাগেনি পথশিশুদের গায়ে। নাগরিক যান্ত্রিকতা থেকে মুক্তির নেশায় মানুষের পদচারণায় শেষ সময়ের জন্য ব্যস্ত প্রতিটি ফুটপাথ। সবার হাতে কম-বেশি নতুন ব্যাগ। সাধ্যের মধ্যে পছন্দ অনুযায়ী কেনাকাটা। অধিকাংশই ব্যস্ত গতিতে ছুঁটছেন নাড়ির টানে। তবে ছুটে চলার পথে প্রায়শই দেখা পাওয়া পথশিশুদের মুখের দিকেও তাকালে নির্দয় হৃদয়ও কেঁদে ওঠে। সব শিশুর ভাগ্যে এখনও জোটেনি ঈদের কাপড়। কেউ কেউ বাড়িয়ে দিচ্ছে হাত। সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের মধ্যে সাহায্য পাওয়া ভাগ্যবানদের তালিকায় আছে লাবিয়া, মুক্তা, সাবিনা। ঈদের পোশাক পেয়ে এরা খুব খুশি। ধারণা করা হয়ে থাকে এখনও অর্ধেক পথশিশু ঈদের কাপড় পায়নি। রাজধানীর কারওয়ান বাজারের প্রজাপতি গুহার কাছে বসবাস করে বেশ কয়েক পথশিশু। কথা হলে আইনাল নামের এক ছিন্নমূল পথশিশু জানায়, স্যার এখনও কেউ কিছু দেয় নাই। ঈদ ক্যামনে করমু? তবে সাহায্য পেয়েছে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের ক্ষুদ্র একটি অংশ, তবে এদের কেউ ফুটপাথে থাকে না। সুবিধাবঞ্চিত হলেও কিছুটা সুবিধা পাচ্ছে তারা। আর দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা না নিয়ে মৌসুমকেন্দ্রিক সাহায্য প্রদানকে অনেকে লোক দেখানো বলে আখ্যা দেন। তরুণ প্রজন্মর কেউ কেউ সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা নিয়েও এগিয়ে আসছে। স্বপ্ন দেখে পথশিশু, টোকাই ও ছিন্নমূল শব্দগুলো চিরতরে লুপ্ত হবে। সুবিধাবঞ্চিত শিশু বলতে আপত্তি না করা প্রজন্মের তরুণ সৈনিকরা শুধু ঈদকেন্দ্রিক মৌসুমে নয়, বছরের পুরোটা অবহেলিত এ শিশুদের নিয়ে কাজ করে চলছেন। তাদেরই গড়া একাধিক সংগঠন হতদরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিয়ে কাজ করে, প্রচেষ্টা ফাউন্ডেশন তার একটি। প্রচেষ্টা ফাউন্ডেশনের সেক্রেটারি পাভেল বাবু জনকণ্ঠকে বলেন, হাতিরঝিলের প্রকল্পের শুরুর সময়ে বন্ধুরা ওখানে দীর্ঘ সময় আড্ডা দিতাম। তেজগাঁও বস্তির সুবিধাবঞ্চিত শিশুরা চানাচুর ও ঝালমুড়ি বিক্রি করত। এদের কেউ কেউ বলত ভাইয়া আমাদের ‘পড়ান’। তখন পরিকল্পনা করে অন্তত পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ানোর লক্ষ্য নিয়ে গড়ে তুলি প্রচেষ্টা ফাউন্ডেশন। পাভেল আরও বলেন, এ বছর সংঠনের পক্ষে প্রায় ১০০ সুবিধাবঞ্চিত শিশুকে ঈদের কাপড় দিয়েছি। এছাড়া সেমাই, চিনি, চকোলেট ও মেয়ে শিশুদের জন্য মেহেদিও বিতরণ করেছি। ওরা আমাদের সমাজেরই অংশ, ওদের নিয়ে আমাদের সকলেরই ভাবা উচিত। এছাড়াও সম্প্রতি রাজধানীর কলাবাগানে ‘লেন্ড এ হ্যান্ড সোসাইটি’র উদ্যোগে পথশিশুদের সঙ্গে ইফতার করার পাশাপাশি শিশুদের মধ্যে ঈদের নতুন কাপড় বিতরণ করে। সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক সামিউল আলম জনকণ্ঠকে বলেন, এ বছর ৪৫ জন পথশিশুর মাঝে ঈদের কাপড় বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া এতিমখানায়ও আমরা কাপড় বিতরণ করেছি। ঢাকার বাইরেও বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের মাঝে ঈদের কাপড় বিতরণ চলছে। কোথাও কোথাও বিতরণ কার্যক্রম এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। কেউ কেউ বলছেন, ঈদের নামাজের পূর্ব পর্যন্ত ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি চলতেই থাকবে। প্রায় সবাই সাধ্যানুযায়ী সমাজের অবহেলিত অংশের দিকে সুদৃষ্টিতে তাকাবে। ঢাকার বাইরে ময়মনসিংহে স্বেচ্ছা শ্রমে পরিচালিত পথশিশু এবং সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের জন্য প্রতিষ্ঠিত স্কুল ঘাসফুল শিশু নিকেতন এর পক্ষ থেকে ৬০ শিক্ষার্থীর মাঝে ঈদের পোশাক বিতরণ করেছে। মঙ্গলবার সুবিধাবঞ্চিত এ শিশুদের মাঝে ঈদ পোশাক বিতরণ ছাড়াও তাদের পরিবারের মাঝে সেমাই, চিনি, পোলাও চাল ও নুডলস বিতরণ করা হয়। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জামান পায়েল জনকণ্ঠকে বলেন, সুবিধাবঞ্চিত এ শিশুদের তো ওভাবে ঈদ করা হয় না। পরিবারের পক্ষ থেকে এ শিশুদের ঈদের আনন্দে মাতিয়ে রাখার সাধ্য নেই। তাই আমরা আমাদের সাধ্যমতো সাহায্য করার চেষ্টা করছি। শুধু ময়মনসিংহে নয়, প্রায় প্রতিটি জেলা পর্যায়েই পথশিুদের ঈদ আনন্দ নিয়ে শেষ সময়ের ভাবনা চলছে। অনেকেই জানাচ্ছেন সাহায্য পৌঁছে দেয়ার আকুল আর্তি।
×