ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

দুই কোটি টাকা মুক্তিপণ দাবিতে শতাধিক জেলেকে অপহরণ

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ১৫ জুলাই ২০১৫

দুই কোটি টাকা মুক্তিপণ দাবিতে শতাধিক জেলেকে অপহরণ

বাবুল সরদার, বাগেরহাট ॥ সুন্দরবন ও সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে বেপরোয়া গুলি বর্ষণের পর পৃথকভাবে শতাধিক জেলেকে মুক্তিপণের দাবিতে জলদস্যু ‘বড় ভাই’ ও ‘আকাশ বাহিনী’ অপহরণ করেছে। সশস্ত্র দস্যুরা আতঙ্ক সৃষ্টির পর জেলেদের আহরিত ইলিশ, মালামাল, ডিজেল ও একটি ফিশিং ট্রলারসহ এক কোটি টাকার মালামাল লুটে নিয়ে গেছে। অপহৃত জেলেদের মুক্তিপণ বাবদ তারা দু’কোটি টাকা দাবি করে এক সপ্তাহের মধ্যে পরিশোধের সময় বেঁধে দিয়েছে। অন্যথায় অপহৃতদের হত্যার হুমকি দিয়েছে। এদিকে, মুক্তিপণ দিয়ে ফিরে এসেছে শরণখোলার চারজন জেলে। জলদস্যুদের আক্রমণে শরণখোলা উপজেলার খুড়িয়াখালী গ্রামের জেলে সহিদুল ইসলাম গুরুতর আহত হন। এসব ঘটনায় সাগরে ইলিশ আহরণরত জেলেদের মাঝে চরম আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। সাগর থেকে ফিরে জেলে ও আড়তদাররা এ খবর নিশ্চিত করেছে। শরণখোলা, পাথরঘাটা, বাগেরহাট ও মহিপুর মৎস্য আড়তদার সমিতি সূত্রে জানা যায়, সোমবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে দুবলারচর থেকে আনুমানিক ৩০ কিলোমিটার পূর্ব-দক্ষিণে গভীর সাগরের ১নং বয়ার গাংরাইল এলাকায় জলদস্যু বড় ভাই বাহিনী ওরফে ‘রাজু বাহিনী’র ৩০Ñ৩২ সশস্ত্র সদস্য ইলিশ আহরণরত জেলেদের ওপর আকস্মিক হামলা চালায়। সারারাত তা-ব চালিয়ে ৭০টি ফিশিং ট্রলারের ইলিশ, ডিজেল, নগদ টাকা, মোবাইল ফোন সেট ও অন্যান্য মালামাল লুটপাট শেষে ৭০ জেলেকে এক কোটি চল্লিশ লাখ টাকা মুক্তিপণের দাবিতে ধরে নিয়ে যায়। এর মধ্যে বাাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার রাজৈর গ্রামের সেলিম তালুকদারের এফবি আব্দুল্লাহ্ ফিশিং ট্রলার ও তার ১৪ জেলেসহ ১৮ জেলে রয়েছে। শরণখোলা অন্যান্য অপহৃত জেলেদের মধ্যে রাজৈর গ্রামের এফবি মারিয়া ট্রলারের মালিক সহিদুল ইসলাম, খোন্তাকাটা গ্রামের হাতেম আলী মোল্লার এফবি কারিমা ও রাহিমা ট্রলারের মাঝি কালাম মোল্লা ও কামাল মোল্লার নাম জানা গেছে। বরগুনা জেলা ফিশিং ট্রলার শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আঃ মান্নান জানান, একই ঘটনায় পাথরঘাটা উপজেলার আনুমানিক ১০Ñ১২ জেলে মুক্তিপণের দাবিতে অপহৃত হয়েছে। তবে তাৎক্ষণিকভাবে তিনি জেলেদের নাম ও ঠিকানা জানাতে পারেননি। পটুয়াখালী জেলার মহিপুর মৎস্য আড়তদার সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাসুম মিয়া জানান, ওই ঘটনায় নিদ্রা সকিনা এলাকার এফবি মায়ের দোয়া ট্রলারের মাঝি ইউনুচ মিয়াসহ তার এলাকার অন্তত ১৫Ñ১৬ জেলে অপহৃত হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পাড়েরহাটের মৎস্য আড়তদার সমিতি এবং মৎস্যজীবী সমিতি একাধিক নেতা জানান, ভা-ারিয়ার এফবি আব্দুল্লাহ ট্রলারের মাঝি জাহাঙ্গীর মোল্লা ও পিরোজপুরের জুসখোলার কমল দাসের ট্রলারের মাঝিসহ তাদের এলাকার ১৫Ñ১৬, বাগেরহাটের ৫Ñ৬ ও মঠবাড়িয়া উপজেলার তুষখালী এলাকার ৫Ñ৬ জেলে মুক্তিপণের দাবিতে অপহৃত হয়েছে। তাফালবাড়ির মৎস্য ব্যবসায়ী খলিলুর রহমান জানান, প্রায় একই সময়ে পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের মরাভোলা, আলীবান্দা ও দুধমুখী এলাকায় বনদস্যু শিপন গাজীর নেতৃত্বাধীন ‘আকাশ বাহিনী’র ৮Ñ৯ সশস্ত্র সদস্য তিন রাউন্ড গুলিবর্ষণ করে আতঙ্ক সৃষ্টি করে ৩৫ জেলেকে অপহরণ করে। এদিকে, একই উপজেলার বকুলতলা গ্রামের দেলোয়ার তালুকদার, শাহ আলম, ফারুক হোসেন ও সোনাতলা গ্রামের বারেক মুন্সী দেড় লাখ টাকা আকাশ বাহিনীকে মুক্তিপণ দিয়ে ফিরে এসেছে।
×