ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সুকৌশলে কওমী মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করছে

লালমনিরহাট ছিটমহলে উগ্র মৌলবাদী জঙ্গীগোষ্ঠী তৎপর

প্রকাশিত: ০৫:২৩, ১৫ জুলাই ২০১৫

লালমনিরহাট ছিটমহলে উগ্র মৌলবাদী জঙ্গীগোষ্ঠী তৎপর

নিজস্ব সংবাদদাতা, লালমনিরহাট, ১৪ জুলাই ॥ জেলার ৫৯টি ছিটমহলের নিয়ন্ত্রণ ও কর্তৃত্ব নিতে অপতৎপরতা চালাচ্ছে বিএনপি-জামায়াত উগ্র মৌলবাদী ও জঙ্গী গোষ্ঠী। উগ্র মৌলবাদী জঙ্গীগোষ্ঠী সুবিধাবঞ্চিতদের ধর্মীয় অনুভূতি কাজে লাগিয়ে সুকৌশলে ছিটমহলের পাড়া-মহল্লায় কওমী মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করছে। ইসলামী ফাউন্ডেশন এতে সহায়তা করছে বলে খোদ সরকারের সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও এমপি বীরমুক্তি যোদ্ধা মোতাহার হোসেন অভিযোগ তুলেছেন। ৬ জুলাই হতে ১৬ জুলাই পর্যন্ত লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী ও পঞ্চগড় জেলার ভেতরে থাকা ১১১টি ছিটমহলে বাংলাদেশে ও ভারতীয় প্রশাসনের যৌথ জরিপ কাজ চলছে। এই জরিপে মঙ্গলবার লালমনিরহাটে ১৯৬ জন হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ ভারতের নাগরিকত্ব নিয়ে ভারতে চলে যেতে আবেদন করেছে। বিষয়টি লালমনিরহাটের পুলিশ সুপার মুজাহিদুল ইসলাম নিশ্চিত করেছে। তার ব্যক্তিগত অভিমত যারা ছিটমহলগুলো ছেড়ে ভারতে যেতে চাচ্ছে তারা প্রায় সকলেই দিনমজুর শ্রেণীর। ভারত সরকার তার দেশে গেলে পুনর্বাসনের ঘোষণা দিয়েছে। তাই এসব দিনমজুর পরিবার সেখানে গিয়ে অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছলতার স্বপ্ন দেখছে। ফলে ভারতীয় নাগরিকত্ব নিতে আগ্রহী হয়েছে। এছাড়াও সুবিধাবঞ্চিত হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে ভারতপ্রীতি ও ধর্মীয় অনুভূতি কাজ করছে। এদিকে রবিবার জেলা ও দায়রা জজ আদালত চত্বরে মাতৃদুগ্ধ পান কেন্দ্র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে লালমনিরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, এমপি অভিযোগ তুলে জেলা প্রশাসক মোঃ হাবিবুর রহমানকে জানান, লালমনিরহাট ইসলামিক ফাউন্ডেশনের অধীনে ছিটমহলগুলোতে পাড়া-মহল্লায় নিয়ন্ত্রণ নিতে জামায়াত-শিবির, বিএনপি ও উগ্র মৌলবাদী কওমী মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করতে অপতৎপরতা চালাচ্ছে। যাতে সেখানে উগ্র মৌলবাদী চক্র নিয়ন্ত্রণ নিয়ে অরাজকতা চালাতে না পারে ও সরকারবিরোধী অপপ্রচার করতে না পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখার আবেদন করেন। এদিকে জেলার হাতীবান্ধা উপজেলার গোতামারী ইউনিয়ন গোতামারী ছিটমহলের ১৮টি হিন্দু পরিবার ভারতের নাগরিকত্ব নিয়ে চলে যাওয়ার আবেদনের পেছনে জামায়াতের অপপ্রচার কাজ করেছে বলে জানা যায়। হাতীবান্ধায় জামায়াত অধ্যুষিত। এখানে ৫ জানুয়ারির নির্বাচন পূর্বে জামায়াত অগ্নিসংযোগসহ নানা তা-ব চালায়। আওয়ামী লীগ কোন প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেনি। জামায়াত-বিএনপির অপ্রপ্রচারের কাছে মুক্তিযোদ্ধার পরিবার ও আওয়ামী লীগ পরিবার অসহায়ত্ব বোধ করে ছিল। ছিটমহলের হিন্দু পরিবারগুলো তাহা স্বচক্ষে দেখেছে। তারা মনে করছে আওয়ামী লীগ ও মহাজোট ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় জামায়াত ছিটমহলে যেভাবে আস্ফালন করছে। বিএনপি-জামায়াত যদি কোন দিন ক্ষমতায় আসে না জানি তখন হিন্দু সম্প্রদায়ের কপালে কি দূরগতি আসে। তাই সুযোগ পেয়ে ভারতে চলে যাওয়াই ভাল। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মোঃ হাবিবুর রহমান জানান, বর্তমান সরকার ছিটমহল উন্নয়নে যেখানে যাহা প্রয়োজন করবে। সরকারের অনুমতি ছাড়া ছিটমহলে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কওমী মাদ্রাসা নির্মাণ করতে পারবে না। কিভাবে ইসলামী ফাউন্ডেশন ছিটমহলগুলোতে কওমী মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করতে তৎপরতা চালাচ্ছে খোঁজ নেয়া হবে। জেলা শিক্ষা অফিসার মাধ্যমিক মোঃ মোসলেম উদ্দিন জানান, ছিটমহলগুলোর আশপাশে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ রয়েছে। ছিটমহলের শিক্ষার্থীদের এখন সেখানে নিজ পরিচয়ে শিক্ষা নিতে কোন বাধা নেই। এছাড়াও আপাতত লালমনিরহাটে অবস্থিত ৫৯টি ছিটমহলে কোন নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্মাণ করার প্রয়োজন নেই। যখন প্রয়োজন হবে সরকার তা করবে। এখন সরকার ছিটমহলে সেবাখাতে উন্নয়নে মনোনিবেশ করেছে। লালমনিরহাট জেলা ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উপপরিচালক মোঃ আব্দুল আহাদ জানান, প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন নিয়ে সরকারের প্রতিষ্ঠান ইসলামিক ফাউন্ডেশন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের নিজস্ব পদ্ধতি শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে ছিটমহলে মাদ্রাসা শিক্ষা প্রসারে কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। এই কার্যক্রম পদ্ধতিটি একেবারে নতুন। তাই ভু বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়েছে। তবে সরকার যে নির্দেশনা দেবে ইসলামিক ফাউন্ডেশন সেই নির্দেশনা মেনে চলবে। ইসলামিক ফাউন্ডেশন সরকারী প্রতিষ্ঠান। জামায়াত-শিবির ও উগ্র মৌলবাদী চক্রের অপতৎপরতা সম্পর্কে গোয়েন্দা ও মিডিয়ার কাছে ভাল তথ্য থাকতে পারে। ৩১ আগস্টের পরে ছিটমহল বিনিময় চুক্তি বাস্তবায়ন হলে সকল জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটবে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, একশ্রেণীর টাউট-বাটপার ছিটমহলবাসীর দেয়া সরকারী সুযোগ-সুবিধা নিতে অপতৎপরতা চালাচ্ছে।
×