ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

যোগ হলেন নুরুল ইসলাম বিএসসি, তারানা হালিম ও নুরুজ্জামান আহমেদ ;###;পদোন্নতি পেলেন আসাদুজ্জামান খান কামাল ও স্থপতি ইয়াফেস ওসমান;###;ঈদের পর আবার রদবদলের সম্ভাবনা

মন্ত্রিসভার কলেবর আরেক দফা বাড়ল ॥ তিন নতুন মুখ

প্রকাশিত: ০৫:১৫, ১৫ জুলাই ২০১৫

মন্ত্রিসভার কলেবর আরেক দফা বাড়ল ॥ তিন নতুন মুখ

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ বর্তমান সরকারের মন্ত্রিসভার কলেবর আরেক দফা বাড়ল। এ যাত্রায় মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়েননি কেউ-ই। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বঙ্গভবনের দরবার হলে নতুন পাঁচজন মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী শপথ নিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ নতুন মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীদের শপথবাক্য পাঠ করান। নতুন পাঁচ মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর মধ্যে তিনজন নতুন মুখ, বাকি দু’জন প্রতিমন্ত্রী থেকে পদোন্নতি পেয়ে পূর্ণমন্ত্রী হয়েছেন। শপথ গ্রহণের পরপরই মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীদের মধ্যে দফতর পুনবণ্টন করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। বঙ্গভবনে পূর্ণ মন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান এবং চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা নুরুল ইসলাম বিএসসি। এছাড়া নতুন প্রতিমন্ত্রী হয়েছেন সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য এ্যাডভোকেট তারানা হালিম ও লালমনিরহাট-২ আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য নুরুজ্জামান আহমেদ। টেকনোক্র্যাট কোটায় মন্ত্রী হওয়া নুরুল ইসলাম বিএসসিকে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, স্থপতি ইয়াফেস ওসমানকে আগের মন্ত্রণালয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এবং আসাদুজ্জামান খান কামালকেও আগের মন্ত্রণালয় স্বরাষ্ট্র দেয়া হয়েছে। এছাড়া তারানা হালিমকে ডাক ও টেলিযোগাযোগ এবং নুরুজ্জামান আহমদকে খাদ্য মন্ত্রণালয় দেয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগ ও সরকারের উচ্চ পর্যায়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ যাত্রায় কোন মন্ত্রীর ভাগ্যে বিপর্যয় না ঘটলেও ঈদের পর আরেক দফা মন্ত্রিসভায় রদবদল ঘটতে পারে। আর সেটি হলে বর্তমান মন্ত্রিসভায় থাকা কয়েকজন মন্ত্রী তাঁদের পদ হারাতে পারেন, গত সরকারের সাবেক দু’জন মন্ত্রীর ভাগ্য খুলতে পারে। শুধু মন্ত্রিসভায় নয়, ঈদের পর আওয়ামী লীগেও বড় ধরনের শুদ্ধি অভিযান চালাবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, এমননি আভাস দিয়েছেন সূত্রগুলো। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে দফতরবিহীন মন্ত্রী করার পর থেকেই মন্ত্রিসভার গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে। কয়েকদিন ধরেই মন্ত্রিসভায় রদবদলের গুঞ্জন চললেও কারা শপথ নিচ্ছেন সে বিষয়ে সরকার পক্ষ থেকে কিছু বলা হচ্ছিল না। তবে সকাল থেকেই তিন মন্ত্রী ও দুই প্রতিমন্ত্রী নামের ব্যাপারে স্পষ্ট আভাস পাওয়া যায়। মঙ্গলবার বিকেলে বঙ্গভবনে শপথ অনুষ্ঠানের প্রস্তুতিতে নতুন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর জন্য রাখা চেয়ারে নাম দেখে পাঁচ জনের নাম নিশ্চিত হওয়া যায়। শপথ নিতে বিকেল ৪টার দিকে বঙ্গভবনে ঢোকেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা নুরুল ইসলাম বিএসসি। তার এক ঘণ্টা পর একে একে বঙ্গভবনে প্রবেশ করেন নুরুজ্জামান আহমেদ, তারানা হালিম ও স্থপতি ইয়াফেস ওসমান। সাড়ে ৫টার দিকে ঢোকেন আসাদুজ্জামান খান কামাল। আগে থেকেই বঙ্গভবনে শপথের অনুষ্ঠানের জন্য সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়। সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দরবার হলে প্রবেশের পর শুরু হয় শপথ গ্রহণের আনুষ্ঠানিকতা। মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররফ হোসাইন ভূঁঞার পরিচালনায় প্রথমে মন্ত্রী হিসেবে রাষ্ট্রপতির কাছে শপথ গ্রহণ করেন নুরুল ইসলাম বিএসসি, আসাদুজ্জামান খান কামাল ও স্থপতি ইয়াফেস ওসমান। এরপর প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহন করেন নুরুজ্জামান আহমেদ ও এ্যাডভোকেট তারানা হালিম। শপথ গ্রহণের পর নতুন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সালাম বিনিময় করেন এবং দোয়া চান। সংক্ষিপ্ত আয়োজনে বঙ্গভবনের দরবার হলে অনুষ্ঠিত নতুন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের শপথ অনুষ্ঠানে তাঁদের পরিবার সদস্য ছাড়া অন্য কাউকে দেখা যায়নি। অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতির স্ত্রী রাশিদা খানম, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফাফেল আহমেদ, কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ, রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব জয়নাল আবেদীন, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিমসহ সামরিক ও বেসামরিক উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। শপথ গ্রহণ শেষে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আমন্ত্রিত অতিথিরা ইফতার মাহফিলে যোগ দেন। গত বছর শেখ হাসিনা সরকার গঠনের পর আসাদুজ্জামান খান কামাল স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এবং স্থপতি ইয়াফেস ওসমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছিলেন। এ দুই প্রতিমন্ত্রীর সততা ও বিশ্বস্ততার বিচারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁদের পদোন্নতি দিয়ে পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রী করেন। রাষ্ট্রপতির কাছে তাঁরা দু’জনই মন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। নুরুল ইসলাম বিএসসি ॥ সানোয়ারা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও এনসিসি ব্যাংকের উদ্যোক্তা পরিচালক নুরুল ইসলাম বিএসসি বেশ কিছুকাল ধরে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি। কিন্তু দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মহাজোটের সঙ্গে আসন ভাগাভাগির অঙ্কে মনোনয়ন লাভে বঞ্চিত হন তিনি। আসনটি জাতীয় পার্টির মহাসচিব জিয়াউদ্দিন বাবলুকে ছেড়ে দিতে হয় তাঁকে। মনোনয়ন লাভে ব্যর্থ নুরুল ইসলাম বিএসসিকে টেকনোক্র্যাট কোঠায় পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রী করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁকে সম্মানিত করলেন। মন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়ে নুুরুল ইসলাম বিএসসি সাংবাদিকদের কাছে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে বলেন, আমি যে দায়িত্ব পাব, সমস্যা চিহ্নিত করে প্রতিকারের ব্যবস্থা করব। তারানা হালিম ॥ সংস্কৃতি অঙ্গনে জনপ্রিয় মুখ এ্যাডভোকেট তারানা হালিম। শুধু ন্যাটাভিনেত্রীই নন, দু’দফা সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য হিসেবে জাতীয় সংসদে তুখোড় বক্তব্যে দিয়ে রাজনীতির মাঠে নিজের আসন অনেকটাই পাকাপোক্ত করে নিতেও সক্ষম হন তিনি। চলতি সংসদে তথ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য তারানা হালিম সাবেক অর্থমন্ত্রী মরহুম শাহ এ এম এস কিবরিয়ার নিকটাত্মীয়। বাংলাদেশ টেলিভিশনের প্রতিযোগিতামূলক অনুষ্ঠান নতুন কুঁড়িতে চ্যাম্পিয়ন হয়ে কৈশোরেই পরিচিতি পাওয়ার পর তারানা হালিম অভিনেত্রী হিসেবেও সুনাম কুড়ান। তারানা হালিম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় যুবলীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। সংসদে সংরক্ষিত আসনে এনিয়ে দ্বিতীয়বার সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে প্রতিমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেন, রাষ্ট্রপতির কাছে শপথ গ্রহণ করেন তিনি। শপথ গ্রহণ শেষে তারানা হালিম তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় দেশবাসীর দোয়া ও সহযোগিতা কামনা করে বলেন, সততা, নিষ্ঠা ও সকল ধরনের লোভ-লালসার উর্ধে থেকে যাতে আমি আমার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করতে পারি, সেজন্য সবার দোয়া ও সহযোগিতা চাই। যে মূল্যেবোধ নিয়ে বড় হয়েছি, সেই মূল্যেবোধ নিয়েই বাকি জীবন চলতে চাই। নুরুজ্জামান আহমেদ ॥ প্রধানমন্ত্রীর মন্ত্রিসভার এবারের কলেবর বৃদ্ধিতে সবচেয়ে চমক ছিল লালমনিরহাট-২ আসন থেকে এবারই প্রথম সংসদের সদস্য নির্বাচিত নুরুজ্জামান আহমেদ। প্রথম সংসদে এসেই অনলবর্ষী বক্তা হিসেবে সবার দৃষ্টি কাড়েন ১৯৫৯ সালের ৩ জানুয়ারি জন্ম নেয়া স্নাতক ডিগ্রীধারী এই নেতা। সদ্য সমাপ্ত বাজেট অধিবেশনেও ছড়া-সাহিত্য-কোরআনের আয়াত মিশ্রণে চমক দেয়ার মতো নুরুজ্জামানের বক্তব্যে সংসদ চলাকালে সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুরোধে তাঁর সময় দু’দফা বাড়িয়ে দেন স্পীকার। বক্তব্যের শেষে প্রধানমন্ত্রীসহ সরকার ও বিরোধী দলের নেতারা টেবিল চাপড়ে তাঁকে অভিনন্দিতও করেন। সবার দৃষ্টি আকর্ষণে সক্ষম লালমনিটরহাটের কালিগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের এই নেতাকে প্রতিমন্ত্রী নিয়োগ দিয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেন প্রধানমন্ত্রী। কেউ কেউ নুরুজ্জামান আহমেদের মন্ত্রিসভায় যোগদান তাঁর অনলবর্ষী বক্তব্যের পুরস্কার হিসেবেই দেখছেন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের মাধ্যমে টানা দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর ওই বছরের ১২ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নতুন মন্ত্রিসভা শপথ নেয়। তখন অধিকাংশ পুরনো মন্ত্রীকে বাদ দিয়ে অপেক্ষাকৃত নতুন ও আগের সরকারের সময় দলের বাদ পড়া জ্যেষ্ঠ নেতাদের নিয়ে সরকার গঠন করা হয়। ওই বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী আরেকদফা তাঁর মন্ত্রিসভা সম্প্রসারণ করেন। সে সময় এ এইচ এম মাহমুদ আলীকে পররাষ্ট্র মন্ত্রী এবং নজরুল ইসলামকে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেয়া হয়। হজ নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের কারণে গত বছরের ১২ অক্টোবর আবদুল লতিফ সিদ্দিকী ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় থেকে অপসারিত হন। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে দফতরবিহীন করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় বর্তমান সরকারের মেয়াদে তৃতীয়বারের মতো তিন মন্ত্রী ও দুই প্রতিমন্ত্রী শপথ গ্রহণ করেন। এ নিয়ে বর্তমান মন্ত্রিসভায় ৩২ জন মন্ত্রী, মন্ত্রী পদ মর্যাদার প্রধানমন্ত্রীর একজন বিশেষ দূত, পাঁচজন উপদেষ্টা, ২০ জন প্রতিমন্ত্রী এবং দু’জন উপমন্ত্রী রয়েছেন।
×