ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

স্বজনপ্রীতির উর্ধে থাকুন

প্রকাশিত: ০৫:১৩, ১৫ জুলাই ২০১৫

স্বজনপ্রীতির উর্ধে থাকুন

বর্তমান সরকারের এক মহতী উদ্যোগের চলমান প্রক্রিয়া ঈদ উৎসবে হতদরিদ্রদের মধ্যে বিনামূল্যে চাল বিতরণ। এবারের ঈদেও এ প্রক্রিয়ার ব্যত্যয় ঘটছে না। ঈদ আনন্দকে নির্দিষ্ট কোন গোষ্ঠীর মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে সবার মাঝে বিলিয়ে দেয়ার এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই। সব মানুষকে সমান দৃষ্টিতে দেখা এবং জাতীয় উৎসবে সম্পৃক্ত করার এ পরিকল্পনা সরকারের উদারতার পরিচায়ক। সারাদেশে ৬৪ জেলার ৪৮৭ উপজেলা ও ৩১৭টি পৌরসভার ৯১ হাজার ৪৬২ পরিবারের মধ্যে এ চাল বিতরণ কার্যক্রম চলছে ভিজিএফ কর্মসূচীর আওতায়। প্রায় ১ কোটি মানুষ এ সুবিধা পাবে। চালের পরিমাণ ৯৮ হাজার টন। প্রত্যেক পরিবারের মধ্যে এ চাল সম্পূর্ণ বিনামূল্যে বিতরণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে এ কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এ উদ্যোগের বিশেষত্ব হলোÑ প্রত্যেক পরিবারই ১০ কেজি করে চাল পাবে। তবে মন্ত্রণালয় নির্দেশিত বিশেষ কয়েকটি শর্তসাপেক্ষে এ চাল পাওয়ার উপযোগী হবে। নির্দেশনা অনুযায়ী হতদরিদ্র, শুধু ভিটেবাড়ি ছাড়া ভূমিহীন ব্যক্তি, বয়োবৃদ্ধ কর্মে অক্ষম মুক্তিযোদ্ধা, স্বামী পরিত্যক্তা-বিধবা বা পরিবারপ্রধান দুস্থ নারী এ সুযোগ পাওয়ার অধিকারী বলে বিবেচিত হবেন। সরকারী দান-অনুদানের ব্যবস্থাপনা, বিতরণ নিয়ে অতীতের অভিজ্ঞতা খুব একটা সুখকর নয়। কোথাও হরিলুটের দশাও প্রত্যক্ষ করতে হয়েছে। এ নিয়ে মামলা-মোকদ্দমাও রয়েছে বিস্তর। একেবারে দুস্থদের দান-অনুদানও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও কতিপয় অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে ভাগবাটোয়ারা ও লুটপাট করে, ভুয়া কাগজপত্র তৈরির মাধ্যমে তা সিদ্ধ করার প্রচেষ্টার দৃষ্টান্ত খুঁজতে খুব বেশি দূরে যেতে হবে না। পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষে সরকারের বিনামূল্যে চাল বিতরণের কর্মসূচীতে যেন কোন অনিয়ম না ঘটে সেদিকে স্থানীয় প্রশাসন সতর্ক দৃষ্টি রাখবে বলে আমাদের প্রত্যাশা। এমন যেন না হয় স্থানীয় জনপ্রতিনিধির পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয়দের ভুয়া দুস্থ সাজিয়ে নিজেরাই তা আত্মসাত করে কিংবা প্রভাবশালীর প্রভাবে বা অসৎ উদ্দেশ্য চরিতার্থ করতে প্রকৃত প্রাপক যেন বঞ্চিত না হয় সেটা নিশ্চিত করা জরুরী। যাদের জন্য বরাদ্দ তারা যদি বঞ্চিত হয় তবে ঈদের আনন্দ সর্বজনীন না হয়ে হতে পারে বঞ্চনাময়। সৃষ্টি হতে পারে নতুন অপরাধের। ব্যর্থ বা প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে সরকারের এক মহৎ উদ্যোগ। এমনটা হোক নিশ্চয়ই তা কারও কাম্য হতে পারে না। স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের সর্বোচ্চ সততা, আন্তরিকতা ও দায়িত্ববোধই এ উদ্যোগের সাফল্যের চাবিকাঠি।
×