ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

এখন সবাই ছুটছেন গহনা ও প্রসাধনীর দোকানে

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ১৪ জুলাই ২০১৫

এখন সবাই ছুটছেন গহনা ও প্রসাধনীর দোকানে

রহিম শেখ ॥ রমজান প্রায় শেষের পথে। হাতেগোনা ক’দিন পরই ঈদ-উল-ফিতর। সর্বত্রই বইছে ঈদের আনন্দের বার্তা। ঈদ আনন্দকে যোগান দিতে কেনাকাটার যুদ্ধে ক্লান্তিহীন ছুটছেন নগরবাসী। এখন নতুন পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে গহনা কিনতে সবাই ছুটছেন গহনা ও প্রসাধনীর দোকানে। কেউ নিজের জন্য, আবার কেউ উপহার দেয়ার জন্য গহনা কিনছেন। নতুন ডিজাইনের পুঁতি, কড়ি, শেল, সুতা, কাঠ ও পিতলের তৈরি গহনার প্রতিই তরুণীরা বেশি আগ্রহী। তবে এবার স্টোনের গহনাও বেশ চলছে। তবে উচ্চ-মধ্যবিত্ত এবং উচ্চবিত্তদের বেশি আগ্রহ ডায়মন্ডের গহনায়। এছাড়া রুপার ওপর সোনার প্রলেপ দেয়া গহনা ও ইমিটেশনের গহনায়ও চাহিদা মেটাচ্ছেন মধ্যবিত্তরা। রাজধানীর চাঁদনীচক, নিউমার্কেট, বসুন্ধরা সিটি, যমুনা ফিউচার পার্ক, মৌচাক মার্কেট, কর্ণফুলী গার্ডেন সিটি ও বাইতুল মোকাররম মার্কেট ঘুরে দেখা যায়, গহনার দোকানগুলোতে বেশ ভিড়। শপিংমলগুলোতে গহনার দাম নির্ধারিত থাকলেও ছোট দোকানগুলোতে তা থাকে না এবং এসব দোকানে ক্রেতাদের ভিড়ও বেশি। গাউছিয়া মার্কেটে গহনা কিনতে আসা আজিমপুর এলাকার বাসিন্দা জেসমিন শান্তা। পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে পিতলের তৈরি ছোট ছোট পাথর বসানো চুড়ি ও গহনা কিনেছেন। তিনি বলেন, এবার নতুন নতুন ডিজাইনের গহনা এসেছে। দোকানিরা দাম অনেক বেশি চাইলেও দরকষাকষি করলে অনেক কমে কেনা যায়। অনেক ক্রেতা অবশ্য ফিক্সড প্রাইজের দোকান থেকেই পছন্দের গহনাটি বেছে নিচ্ছেন। শাড়ির সঙ্গে মিলিয়ে পুঁতি ও পিতলের সমন্বয়ে তৈরি একসেট লহরী গহনা কিনেছেন ধানম-ি থেকে আসা গৃহিণী আফরিন সুলতানা। তিনি জনকণ্ঠকে জানান, বড় বিপণিবিতানগুলোতে দাম অনেক বেশি, তাই এখান থেকে কেনা। পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে মাল্টি কালারের এক চুড়ির সেট কিনতে এসেছেন মনিরা আবরিন। চাঁদনীচকের বিশাল সেন্টারের আবু বক্কর জানান, ঈদ উপলক্ষে নতুন চুড়ি ও বালা এসেছে। এ্যান্টিক, প্লাস্টিক, জয়পুরি, মেটাল, লায়লা, জরিবালা ইত্যাদি চুড়ি আছে। এছাড়া কাচের মেটাল, রঙিলা ও পাথর বসানো এ্যান্টিকের বিভিন্ন চুড়িও রয়েছে। এবারও মেটালের গহনার চাহিদা বেশি। দামও বেশি। ছোট দুলের দাম ১৫০ থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত। চুড়ির সেট ৩৫০ থেকে দেড় হাজার টাকা। এছাড়া ভিন্নধর্মী দেশীয় ধাঁচের গহনা পাওয়া যাচ্ছে নগরীর যাত্রা, মাদুলি, আড়ং, আইডিয়াস, ক্রে-ক্রাফট, দেশাল, রং, সাদাকালো, বিবিয়ানাসহ অন্য দেশীয় ফ্যাশন হাউসের শোরুমগুলোতে। এখানে কাপড়, কড়ি, মেটাল, শলা, পিতল, রুপা, গ্লোড প্লেটেড, পুঁতি, বিটসসহ বিভিন্ন গহনার প্রতি ক্রেতাদের আগ্রহ লক্ষণীয়। মেয়েরা গহনার পাশাপাশি মিলিয়ে ব্যাগ, জুতা ও সানগ্লাসসহ অন্য অনুষঙ্গ পড়তে চায়। এখানকার মাঝারি সাইজের একজোড়া কানের দুল ১ হাজার ২শ’ টাকা থেকে ১ হাজার ৫শ’ টাকা, আংটি ২৫০ টাকা থেকে এক হাজার ৫০ টাকা, ব্রেসলেটের দাম ২৫০ টাকা থেকে ২ হাজার ২৫০ টাকা। এছাড়া কানের দুল, আংটি, ব্রেসলেটসহ গহনা সেটের দাম ১ হাজার ২৫০ থেকে ১৫ হাজার টাকা। শেষ মুহূর্তে এসে তরুণরা পাঞ্জাবি ও টি-শার্টের সঙ্গে মিলিয়ে রঙিন সানগ্লাস, সুগন্ধি, ঘড়ি, ব্রেসলেট ও বেল্টসহ অন্য অনুষঙ্গ কিনতে এখন এ্যালিফ্যান্ট রোড ও নিউমার্কেটে ভিড় করছেন। রাজধানী অধিকাংশ মার্কেট ঘুরে দেখা যায়, সোনার গহনার দাম মধ্যবিত্তের ক্রয়-ক্ষমতার বাইরে চলে যাওয়ায় বর্তমানে রুপার ওপর সোনার প্রলেপ দেয়া গহনা বেশি কিনছেন মধ্যবিত্ত নারীরা। এসব দোকানে তাই ভিড়ও বেশি। মৌচাক মার্কেটে রুপার ওপর সোনার প্রলেপ দেয়া গয়না বানাতে এসেছেন ফারজানা ইসলাম মিতু। তিনি বলেন, স্বর্ণের গয়না তো আছেই কিন্তু সেটা থাকা আর না থাকা সমান। কেননা এসব গয়না পরে কোথাও যাওয়ার উপায় নেই। সবসময় ভয়ে ভয়ে থাকতে হয়। তাই এবার একসেট রুপার গয়না বানাতে এসেছি। তার ওপর সোনার প্রলেপ দিলেই হয়। তখন এটা পরে যে কোন অনুষ্ঠানে গেলে আর ভয়ও লাগবে না। মৌচাকের মাইলস্টোন এ্যানটিক জুয়েলার্সের বিক্রয়কর্মী বাচ্চু জানান, ইমিটেশনের গহনার মধ্যে এবার ঈদে এ্যান্টিক গহনার চাহিদা বেশি। ইমিটেশনের মধ্যে ভারত, চায়না ও কোরিয়া থেকে আসা এ্যান্টিক গহনার সেট, সিটি গোল্ড সেট ও ইমিটেশন সেট বেশি বিক্রি হচ্ছে। বসুন্ধরার ডায়মন্ড গার্ডেন, গুলশানের ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড, বেইলি রোডের ডায়মন্ড গ্যালারি ঘুরে দেখা যায় মানভেদে এক ক্যারেট মানের বোম্বে কাট হীরার দাম ৬০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা। আর একই মানের বেলজিয়াম কাট হীরার দাম ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা। ডায়মন্ডের কানের দুলের দাম পড়বে ১৩ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকা, নাকফুল ২ হাজার ৯০০ থেকে ৭ হাজার ২০০ টাকা, আংটির দাম পড়বে সাড়ে ১১ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা, লকেট ৭ হাজার থেকে ৫০ হাজার, ব্রেসলেটের দাম ৮৪ হাজার থেকে ৯৮ হাজার টাকা। এছাড়া হীরার গলার সেটের দাম পড়বে ৬০ হাজার থেকে আড়াই লাখ টাকা পর্যন্ত। ছেলের বৌয়ের জন্য ডায়মন্ডের আংটি কিনতে এসেছেন গুলশান এলাকার বাসিন্দা ইসমত আরা। তিনি বলেন, প্রতি বছরই একমাত্র ছেলের বৌকে পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে কোন একটা গহনা কিনে দেই। তাই এবার বৌমাকে ডায়মন্ডের আংটি কিনে দিয়েছি। আর নিজে কিনেছি একটা নাকফুল। গুলশানের ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের বিক্রেতা ইউসুফ জানান, পাথর বসানো গহনার দিকেই ক্রেতাদের ঝোঁক বেশি। আকর্ষণীয় ডিজাইনের ডায়মন্ড জুয়েলারির মধ্যে নেকলেস সেট, ফিঙ্গার রিং, চুড়ি, ব্যাঙ্গল, লকেট সেট, ইয়ার রিং, নোস পিন, লকেট রয়েছে। ঈদ উপলক্ষে ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডের বিশেষ অফারের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ঈদ উপলক্ষে হীরার অলঙ্কারের ওপর শতকরা ৩০ ভাগ ডিসকাউন্ট দেয়া হচ্ছে। কমপক্ষে ৫ হাজার টাকার পণ্য কিনলেই এ সুযোগ পাবেন ক্রেতারা। উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্তরা যখন রাজধানীর বিপণিবিতানগুলোয় পছন্দের গহনা খুঁজে নিচ্ছেন, তখন জমজমাট ফুটপাথের গহনার দোকানগুলোও। সাধারণ নিম্ন-মধ্যবিত্ত ও নিম্নœবিত্তরাই এসব দোকানের ক্রেতা। এখানে চুড়ি, গলার মালা, আংটি ও কানের দুল পাওয়া যাচ্ছে তুলনামূলক অনেক কম দামে। ঈদ ঘনিয়ে আসায় ক্রেতাদের মাত্রাতিরিক্ত ভিড়ে তিল ধারণের জায়গা নেই চাঁদনীচক ও গাউছিয়া মার্কেটের কসমেটিক্সের দোকানগুলোতে। সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, চাঁদনীচকের ফুটপাথ থেকে শুরু করে দোকানে তরুণীরা আই লাইনার, কাজল, মাশকারা, আই শ্যাডো, লিপ লাইনার, লিপস্টিক, লিপ গ্লাস, মেকাপ, চুড়ি, কানের দুল, মালা, ক্লিপ, টিপ, আংটি, পায়ের নূপুর ও পায়েল কিনতে ভিড় করছেন। বসুন্ধরা সিটির ইনফিনিটি মেগা শপ থেকে ৪৫০ টাকা দিয়ে ম্যাট লিপস্টিক, ২৫০ টাকা দিয়ে নেইল পলিশ, ৩৭০ টাকা দিয়ে নাইয়ারের আইলাইনার কিনলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মেহজাবিন। তিনি বলেন, বর্ষা মৌসুমে গরম আবহাওয়ায় ঈদ হওয়ায় এ বছর ম্যাট মেকাপের বেশি চাহিদা। যাতে ঈদের দিন সেজেগুঁজে বের হলে হঠাৎ বৃষ্টি এলেও তা নষ্ট না হয়। ইনফিনিটির বিক্রেতা জানান, তাদের বিক্রি এবার ভাল। কারণ রাজনৈতিক অস্থিরতা এই মুহূর্তে তেমন একটা নেই। তাই প্রতিদিনই তাদের বিক্রি বাড়ছে বলে মন্তব্য করে তিনি। এভাবে চললে চাঁদ রাত পর্যন্ত ক্রেতা বেড়েই চলবে বলেও তিনি আশা করেন।
×