ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

শিশুদের প্রিয় দোলনা

নিপুণ হাতে বোনা বাহারি রং ও সুতোর কারিগর

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ১৪ জুলাই ২০১৫

নিপুণ হাতে বোনা বাহারি রং ও সুতোর কারিগর

মোঃ খলিলুর রহমান দোলনা শিশুদের ভীষণ প্রিয়। সুতা, বাঁশ ও রং দিয়ে নিপুণ হাতে বানানো হয় দোলনা। বাহারি রঙে ও সুতোর কারুকাজে ভরপুর থাকে এ দোলনা। নবজাতক থেকে শুরু করে ৩-৬ মাস বয়সী শিশুকে হাসিখুশি রাখতে মা-বাবাকে বহু কৌশল অবলম্বন করতে হয়। কখনও ঝুনঝুনি বাজিয়ে, লাল-নীল ফুল বা কোন আকর্ষণীয় বস্তু প্রদর্শন করে কিংবা কোলে নিয়ে হাঁটাহাঁটি করে শিশুকে আগলে রাখতে হয়। এতেও যদি আদরের ছোট্ট শিশুটি আনন্দবোধ না করে তবে শেষ ভরসা হিসেবে তাকে দোলনায় তুলে দোলানো হয়। এ জন্য প্রয়োজন সেই নিপুণ হাতে বানানো দোলনার। ইদানীং দোলনা শোভা পাচ্ছে শৌখিন পরিবারেও। সতেরো বছর ধরে দোলনা বানানো ও বিক্রির পেশায় ডুবে আছেন আঃ আউয়াল। দোলনা বিক্রি এখন তার নেশায় পরিণত হয়েছে। এটি তাঁর রক্তের সঙ্গে মিশে গেছে। আব্দুল আউয়াল (৫৫) দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে ঘুরে দোলনা বিক্রি করছেন। তাঁর পিতার নাম রুসমত আলী। তিনি তার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার মুরাদনগর থানার দইয়ারা গ্রামে নারীদের দিয়ে দোলনা বানান। মাঝে মাঝে তিনি নিজেও দোলনা বানান। দোলনা বানানো শেষ হলেই বিক্রির জন্য ছুটে যান রাজধানী ঢাকাসহ নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, মুন্সীগঞ্জ ও কুমিল্লাসহ বিভিন্ন জেলায়। দোলনায় থাকে সুতোর নানা কারুকাজ। সুতোকে রং দিয়ে করা হয় আকর্ষণীয়। মেয়েদের চুলের বেণীর মতো করে দোলনা তৈরির সুতোগুলোকেও বেনি করা হয়। এরপর বাঁশের চটির সঙ্গে সুতো বেঁধে তৈরি করা হয় দোলনা। আব্দুল আউয়াল জানান, দোলনা কয়েক ধরনের হয়ে থাকে। ছোট, মাঝারি ও বড় আকৃতির। ছোট সাইজের একটি দোলনা ৮০-১২০ টাকায় ও মাঝারি সাইজের একটি দোলনা ১৮০-২০০ টাকায় ও বড় সাইজের একটি দোলনা ৪০০-৮০০ টাকাও বিক্রি করা হয়। দোলনা তৈরির প্রধান সরঞ্জাম হলো সুতো। তা নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও থেকে তাকে কিনতে হয়। সুতোগুলোকে লাল, হলুদ ও কালো রং করা হয়। দোলনা তৈরি করতে সাধারণত লাল, হলুদ, সাদা ও কালো সুতোর প্রয়োজন হয়। তিনি জানান, তিনি প্রথমে গাজীপুর থেকে তৈরি করা দোলনা কিনে রাজধানী ঢাকাসহ আশপাশের জেলা ও শহরগুলোতে ঘুরে ঘুরে তা বিক্রি করতেন। এখন তিনি নিজেই দোলনা বুনাতে পারেন। এমনকি তিনি নারীদের দিয়ে দোলনা বুনিয়ে বিভিন্ন লোকজ মেলায়ও বিক্রি করছেন। তাঁর কাছ থেকে পাইকারও দোলনা কিনে নিয়ে যাচ্ছে। রিক্সাচালক থেকে ধনী সবাই দোলনা কেনেন। এখন অনেক শৌখিন পরিবারেও ঘরে সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য দোলনা কিনে সাজিয়ে রাখছেন বলেও তিনি জানান। আঃ আউয়াল দোলনা বুনিয়ে ও বিক্রি করেই জীবিকা নির্বাহ করছেন। দোলনা বিক্রির আয় দিয়েই আব্দুল আউয়াল সুখ-শান্তিতেই পরিবার নিয়ে দিন কাটাচ্ছেন। একই গ্রামের সুলতান আহমেদ (৫৬)ও পনেরো বছর ধরে দোলনা বিক্রি করেই জীবিকা নির্বাহ করছেন। তার পিতার নাম আক্কাস আলী। দোলনা বিক্রির আয় দিয়েই চালাচ্ছেন তাঁর পুরো সংসার। নিজেই মাথায় করে দূর-দূরান্তে ছুটে গিয়ে দোলনা বিক্রি করছেন সুলতান আহমেদ। তাই দোলনাই তার একমাত্র ভরসা। তিনি প্রথমে পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে এ ব্যবসা শুরু করেন। তিনি এখন ৭/৮ জন নারী দিয়ে দোলনা বুনাচ্ছেন। তিনি দোলনা বিক্রির পেশায় নিজেকে খাপ খাইয়ে নিয়েছেন। তিনি জানান, একদিনে ২০/২৫টি দোলনা বিক্রি করতে পারেন। তিনি প্রতিমাসে দোলনা বিক্রি করে ১৫/২০ হাজার টাকা আয় করেন। তিনি তার দুই ছেলে ও চার মেয়ের লেখাপড়ারও খরচ যোগাচ্ছেন দোলনা বিক্রির আয় থেকেই। তিনি জানান, এখন সুতা, রং ও বাঁশের দাম একটু বেশি। তাই দোলনা বুনাতে তৈরির খবচও বেশি পড়ে যায়। সুলতান আহমেদ দোলনা বিক্রি করতে বেশ স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। তাই তিনি দোলনা বিক্রির পেশায়ই আজীবন ডুবে থাকতে চান।
×