ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

আল বিদা মাহে রমজান

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ১৪ জুলাই ২০১৫

আল বিদা  মাহে রমজান

অধ্যাপক মনিরুল ইসলাম রফিক ॥ মাহে রমজানের আজ ২৬তম দিবস। এ মাসের লাইলাতুল ক্বদর মুসলিম জীবনে এক অতি পুণ্যময় ও অনন্য রজনী। যে পাঁচটি রাতকে মহান আল্লাহ পাক অফুরন্ত বরকত প্রদান করেছেন, তন্মধ্যে লাইলাতুল ক্বদর এক বিশিষ্ট স্থান দখল করে আছে। বিশেষত এ রজনী হাজার মাসের চেয়েও উত্তম বলে সূরা ক্বদরে উল্লেখ করা হয়েছে। এ রাতের ফজিলত ও মাহাত্ম্য সম্বন্ধে হযরত সালমান হতে একটি তাৎপর্যপূর্ণ হাদীস বর্ণিত আছে। তিনি বলেন, মহানবী (স) শাবান মাসের সমাপনী দিবসে আমাদের নসিহত করেন এবং বলতেন, তোমাদের মাথার ওপর এমন এক মর্যাদাশালী মোবারক মাস ছায়াপাত করেছে যার মাঝে রয়েছে ‘লাইলাতুল ক্বদর’ নামে একটি রাত- যা হাজার মাস হতেও উত্তম। আজ দিনের অবসানে আমাদের সামনে সে মহিমান্বিত রজনী। হযরত ইবনে আবী হাতিম সূত্র পরম্পরায় হযরত মুজাহিদ (রহ) থেকে উদ্ধৃত করেন যে, একবার নবী-ই-দোজাহান (স) সাহাবাদের কাছে বণী ইসরাঈলের এক দরবেশের কথা বলেন। ওই দরবেশ একাধারে এক হাজার মাস পর্যন্ত আল্লাহর পথে জিহাদের জন্য অস্ত্র-সস্ত্রে সজ্জিত হয়ে প্রস্তুত ছিলেন। এ ঘটনা শুনে উপস্থিত মুসলমানরা বিস্ময় প্রকাশ করেন। এমনিভাবে হযরত জাবীরও হযরত মুজাহিদের (রহ) উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, বনী ইসরাঈল যুগে জনৈক দরবেশ হাজার মাস ধরে সারাটা রাত ইবাদত বন্দেগী করতেন আর পুরো দিন লড়তেন শত্রুদের মোকাবিলায়। হযরত ইবনে আবী হাতিমের অপর এক বর্ণনা মতে, বনী ইসরাঈলের মধ্যে চারজন ইবাদতগুজার ব্যক্তি ছিলেন। তারা প্রত্যেকে ৮০ বছর যাবৎ আল্লাহর ইবাদতে সর্বক্ষণ মশগুল থাকতেন। ওই চারজন আবিদ হলেন হযরত আইয়্যুব, জাকারিয়া, হিজকিল ও ইউশা বিন নুন। এ ঘটনা শোনার পর উপস্থিত সাহাবাগণ বিস্মিত হয়ে পড়েন। ঠিক তখনই হযরত জিবরাঈল (আ) এসে আরজ করেনÑ হে নবীকুল সম্রাট মুহম্মাদ (স)! আপনার উম্মতরা বনী ইসরাঈলের আবিদদের ব্যাপারে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন, কিন্তু মহান প্রভু আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা সেটা অপেক্ষা উত্তম বস্তু আপনাকে দান করেছেন। তখন সূরা ক্বদর নাজিল হয়। এতে মহানবী (স) ও তার সাহাবা-ই-কেরাম অভূতপূর্ব আনন্দে ফেটে পড়েন। সূরা কদরে আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা ঘোষণা করেন, অবশ্যই আমরা (আমি) সেটা (কুরআন শরীফ) ক্বদরের রাতে অবতীর্ণ করেছি। লাইলাতুল ক্বদর সহস্র মাস অপেক্ষা উত্তম। এতে রূহ ও তার ফেরেস্তারা তাদের প্রতিপালকের আদেশে প্রত্যেক কাজের জন্যে অবতীর্ণ হন। তা প্রভাত পর্যন্ত শান্তিময়। হযরত সুফিয়ান আসসোরীর বর্ণনা মতে, বরকতওয়ালা এ রজনীর প্রতিটি নেক কাজÑ রোজা, নফল ইবাদত হাজার মাস অর্থাৎ ৮৩ বছর চার মাসের ইবাদত বন্দেগীর সমতুল্য। কুরআন নাজিলের মহিমায় ভাস্কর এ রাত রমজানের শেষ দশকে অবস্থিত বলে এটা মাগফিরাত বা গুনাহ মাফের দশক হিসেবে বিঘোষিত হয়েছে। হযরত আয়েশা (রা) কর্তৃক বর্ণিত বুখারী শরীফের হাদীস থেকে জানা যায় যে, হযরত রাসূলে মাকবুল (স) রমজানের শেষ দশকে শক্ত করে কাপড় বেঁধে রাতভর জেগে ইবাদতে লিপ্ত থাকতেন এবং তাঁর পরিবারকেও জাগাতেন। হযরত কা’ব (রা) থেকে বর্ণিত আছে, সপ্তম আকাশে জান্নাতের অদূরে ‘সিদরাতুল মুনতাহা’ নামে এক গাছের মাঝামাঝি হজরত জিবরাঈলের নিবাস। আবার ওই গাছের শাখা-প্রশাখায় বাস করেন অসংখ্য অগণিত ফেরেস্তা। মুমিনদের প্রতি স্নেহপরায়ণ এ সব ফেরেস্তা জিবরাঈলের (আ) নেতৃত্বে এ রাতে আল্লাহর নির্দেশ মোতাবেক সূর্যাস্তের পরপরই পৃথিবীতে অবতরণ করেন; ঘুরে বেড়ান পৃথিবীর আনাচে-কানাচে। কিন্তু মুশরিক ‘যাদুকর’ নেশাখোর, জিনাকার, আত্মীয়ের প্রতি অনুদার প্রভৃতি খারাপ লোক এবং ময়লা-আবর্জনাযুক্ত অপবিত্র স্থান থেকে দূরে থাকেন। পক্ষান্তরে মুমীনদের কল্যাণ ও মঙ্গল কামনা করে সারারাত দোয়া করতে থাকেন আর আল্লাহর পক্ষ থেকে সালাম পৌঁছাতে থাকেন ইবাদতে মশগুল সকল মুমীনের কাছে। আসুন, আমরা এ রজনীর সদ্ব্যবহার করি ইবাদত বন্দেগী, তিলাওয়াত ও রোনাজারীর মাধ্যমে।
×