ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আজ পবিত্র লাইলাতুল কদর

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ১৪ জুলাই ২০১৫

আজ পবিত্র লাইলাতুল কদর

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আজ পবিত্র লাইলাতুল কদর। পবিত্র ও মহিমান্বিত রজনী। পশ্চিম আকাশে সূর্য অস্ত যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হবে পবিত্র এ রজনীর ফজিলত। পবিত্র কোরআন শরীফে এ রাতকে হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম বলে ঘোষণা করা হয়েছে। পুণ্যময় ও সম্মানিত এ রাতেই নাজিল হয়েছে পবিত্র কোরআন। লাইলাতুল কদরের সঠিক দিনক্ষণ নিয়ে ভিন্নমত থাকলেও ২৭ রমজানের রাতকেই বাংলাদেশসহ সারাবিশ্বে লাইলাতুল কদর হিসেবে পালন করা হয়ে থাকে। এ হিসেবে আজকে এই রাতেই ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে রাত অতিবাহিত করবেন অধিক পূণ্য ও গুনাহ থেকে মুক্তির আশায়। এ উপলক্ষে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমসহ দেশের সকল মসজিদে ইবাদতের বিশেষ প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। এ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধী রাজনৈতিক দল বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া পৃথক বাণী দিয়েছেন। বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক ও ধর্মীয় সংগঠনের পক্ষ থেকে বিস্তারিত কর্মসূচী হাতে নেয়া হয়েছে পবিত্র এ রজনী উদযাপনের জন্য। সংবাদপত্র, রেডিও, টেলিভিশনেও এ উপলক্ষে বিশেষ প্রবন্ধ, ফিচার ও নানা অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়েছে। লাইলাতুল কদর বা শবে কদর অর্থ সম্মান ও মর্যাদাপূর্ণ রাত। বছরের যে কটি রাতকে মহান আল্লাহ্তাআলা বিশেষভাবে মহিমান্বিত ও মর্যাদাপূর্ণ বলে ঘোষণা করেছেন তার মধ্যে সবচেয়ে উত্তম ও ফজিলতপূর্ণ হলো এই লাইলাতুল কদর। শবে কদর যে কত গুরুত্বপূর্ণ তা কোরানের একটি সুরায় উল্লেখ করা হয়েছে। এ রাত সম্পর্কে একটি পূর্ণাঙ্গ সূরা সূরায়ে কদর নাযিল করা হয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে এ রাতে আল্লাহ্ তা’আলা কোরান মজিদ লওহে মাহফুজ থেকে প্রথম আসমানে নাজিল করেছেন। তারপর দীর্ঘ ২৩ বছর ধরে শেষ নবী হযরত মুহাম্মাদ (স)-এর ওপর ক্রমান্বয়ে নাজিল করেছে। অন্যত্র এ রাতের গুরুত্ব সম্পর্কে বলা হয়েছে এ রাত এক হাজার মাস অর্থাৎ ৮৩ বছর অপেক্ষা উত্তম। এ রাতে ইবাদত করলে এক হাজার মাসের সমান সওয়াব দান করা হয়। বুখারী শরীফে এ রাতের গুরুত্ব সম্পর্কে বলা হয়েছে ‘যে ব্যক্তি এ রাতে ঈমান ও নিষ্ঠার সঙ্গে রাতে জাগ্রত থেকে ইবাদত করবে তার সারা জীবনের গুনাহ্ মাফ করে দেয়া হবে। এছাড়া কোথাও কোথাও এ রাতে বান্দার আগামী বছরের ভালমন্দ নির্ধারিত করে ফেরেস্তাদের হাতে অর্পণ করা হয়ে থাকে উল্লেখ করা হয়েছে। এ রাতকে কদর বলা হয় এ কারণে যে এ রাতে সম্মানিত কোরান নাজিল করা হয়েছে। এ রাতে যে ইবাদত করা হয় তাতে অনেক মর্যাদা রয়েছে। এ রাতে হযরত জিব্রাইল (আ) এবং অন্যান্য ফেরেস্তা ইবদাতকারীদের সঙ্গে মুছাফা করে থাকেন। এ রাত সুবহে সাদিক পর্যন্ত স্থায়ী হয়ে থাকে। তবে শবে কদরের সঠিক দিনক্ষণ নিয়ে ইসলামী প-িতদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তাদের মত যে শবে কদর রমজানুল মোবারকের শেষ দশদিনের বিজোড় রাতে হয়ে থাকে। এ কারণে শুধু ২৭ রমজান রাতের গুরুত্ব না দিয়ে রমজানের ২১, ২৩, ২৫, ২৭ ও ২৯ তারিখের রাতে শবে কদর খোঁজ করে এসব রাতে বেশি বেশি করে ইবাদত করার কথা বলা হয়েছে। হযরত আয়েশা (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল্লাহ (সা) ইরশাদ করেছেন তোমরা শবে কদর রমজানুল মোবারকের শেষ দিনের বিজোড় রাতগুলোতে খোঁজ করো। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন আমি যদি শবে কদরকে নির্দিষ্ট করে দিতাম আর তোমরা এ রাত সম্পর্কে জানা সত্ত্বেও গুনাহে লিপ্ত হতে, তাহলে তা না জেনে গুনাহ করার চেয়ে বেশি জঘন্য হয়ে যেত। সুতরাং এ কারণে আমি সেটাকে গোপন রেখেছি। তিনি আরও বলেছেন, যদি তুমি শবে কদর সম্পর্কে জানতে এবং তাতে ইবাদত করতে তবে হাজার মাস অপেক্ষা বেশি সওয়াব অর্জন করতে। আর যদি তাতে গুনা করে বসতে তবে হাজার মাসের চেয়েও অনেক বেশি শাস্তি পেতে। শাস্তি দূর করা সওয়াব অর্জনের চেয়েও উত্তম। তবে শবে কদের রাত নিয়ে ইসলামী প-িতদের মধ্যে ভিন্নমত থাকলেও বেশিরভাগ প-িত ও ইসলামী বিশেষজ্ঞরা মনে করেন শবে কদর ২৭ রমজানের রাতেই হয়ে থাকে। এ কারণে সারা বিশ্বের মুসলমান ২৭ রমজানের রাতকেই শবে কদর হিসেবে পালন করে থাকে। এ মাসে ২৭ রাতের প্রতি বেশি গুরুত্ব দেয়ার কথা তাঁরা উল্লেখ করেছেন। তাদের অভিমত শবে কদর সম্পর্কে সবচেয়ে বেশি গ্রহণযোগ্য ধারণা ২৭ তারিখের রাত সম্পর্কেই। তাই এ রাতে অলসতার মধ্যে না কাটিয়ে ইবাদত বন্দেগির মাধ্যমে পালনের আহ্বান জানিয়েছেন। বিশেষ করে এ রাতে বারবার যিকির ও দরুদ শরীফ পাঠের মাধ্যমে অতিবাহিত করার আহ্বান জানিয়েছেন তারা। শবে কদরের ইবাদত সম্পর্কে নবী করিম (স) ইরশাদ করেছেন তোমাদের ওপর এমন এক মাস এসেছে যাতে একটি রাত এমনও আছে যা হাজার মাস থেকে উত্তম। যে এ রাত থেকে বঞ্চিত রয়েছে সে পূর্ণ কল্যাণ থেকে বঞ্চিত রয়েছে। তিনি এ রাত সম্পর্কে আরও বলেন, যে ব্যক্তি লাইলাতুল কদরে ঈমানের সঙ্গে সওয়াব লাভের আশায় ইবাদত করে তার পূর্ববর্তী গুনাহগুলো ক্ষমা করে দেয়া হয়। (বুখারি) লাইলাতুল কদর সম্পর্কে কোরানের একাধিক জায়গায় বর্ণনা করা হয়েছে। লাইলাতুল কদর এমন এক রাত যে রাতে আল্লাহ প্রত্যেক বস্তুর সঠিক পরিমাণ নির্ধারণ করেন। তার সময় নির্দিষ্ট করেন এবং হুকুম নাজিল করেন ও প্রত্যেক বস্তুর ভাগ্য নির্ধারণ করেন। এ রাতে ফেরেশতাগণ রবের নির্দেশে সকল কার্য সম্পাদনের জন্যে নেমে আসেন। লাইলাতুল কদর এমন এক রাত আল্লাহর নিকট যার বিরাট মাহাত্ম্য ও ফযিলত রয়েছে। মহাপূণ্যময় আজকের এ রাতে বিশ্বের মুসলমান ইবাদত বন্দেগির মাধ্যমে অতিবাহিত করবেন। তবে এ রাতে কেউ নির্দিষ্ট কোন ইবাদতের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না। ইসলামী চিন্তাবিদদের মতে, পবিত্র কুরান তেলাওয়াত, নফল নামাজ, তাসবিহ-তাহলিল, দান-সদকা সবই এ রাতে করা যায়। আস্থা ও বিশ্বাসের সঙ্গে যে কোন ইবাদত করলে আল্লাহ্র সান্নিধ্য পাওয়া সম্ভব। এদিকে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে আজ রাতে লাইলাতুল কদরের ফজিলত ও তাৎপর্য বিষয়ে ওয়াজ মাহফিল হবে। তারাবিহ নামাজের পর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে শবে কদরের ফজিলত ও করণীয় শীর্ষক ওয়াজ মাহফিল হবে। ওয়াজ মাহফিলের পর লাইলাতুল কদর উপলক্ষে বিশেষ মোনাজাত হবে। এছাড়া এ রাতে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের সব মসজিদেই কোরান তেলাওয়াত, তাছবীহ্ তাহলীল, নফল নামাজ, জিকির ও অন্যান্য এবাদতের আয়োজন করা হয়েছে। প্রায় সব মসজিদে সারারাত ইবাদত বন্দেগির আয়োজন রয়েছে। ইবাদত বন্দেগিসহ শেষ রাতে মিলাদ জিকির আজকার, দোয়া ও বিশেষ মোনাজাতও পরিচালনা করা হবে। এতে বিশ্বের মুসলিম উম্মার শান্তি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত পরিচালনা করা হবে। রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন।
×