ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

দেশের মানুষ দীর্ঘজীবী হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ১৪ জুলাই ২০১৫

দেশের মানুষ দীর্ঘজীবী হচ্ছে

হামিদ-উজ-জামান মামুন ॥ দীর্ঘ হচ্ছে মানুষের জীবন। দেশের মানুষের গড় আয়ু বেড়েছে। সচেতনতা, স্বাস্থ্য সেবার উন্নতি, বিশুদ্ধ পানি পানের হার বৃদ্ধি ও শিক্ষার হার বেড়ে যাওয়াসহ নানা কারণেই বেশি দিন বাঁচছে মানুষ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) চূড়ান্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী দেশের মানুষের গড় আয়ু হচ্ছে ৭০ বছর ৪ মাস, যা প্রাথমিক হিসাবে ছিল ৭০ বছর ১ মাস। পুরুষের চেয়ে মহিলাদের গড় আয়ু বেশি। পুরুষের গড় আয়ু হচ্ছে ৬৮ বছর ৮ মাস, ২০০৯ সালে ছিল ৬৬ বছর ১ মাস। অন্যদিকে মহিলাদের গড় আয়ু হচ্ছে, ৭০ বছর ২ মাস, যা ২০০৯ সালে ৬৮ বছর ৭ মাস। এছাড়া বিভিন্ন ক্ষেত্রে অগ্রগতিও হয়েছে উল্লেখযোগ্য। আজ মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হবে মনিটরিং দ্য সিচুয়েশন অব ভাইটাল স্টাটিসটিকস অব বাংলাদেশ এসভিআরএস-২০১৩ জরিপের প্রতিবেদন। চূড়ান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মানুষের গড় আয়ু বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭০ বছর ৪ মাস, যা ২০১২ সালের জরিপের প্রতিবেদনে ছিল ৬৯ বছর ৪ মাস। তার আগে ২০১১ সালে ছিল ৬৯ বছর, ২০১০ সালে ৬৭ বছর ৭ মাস এবং ২০০৯ সালে ছিল ৬৭ বছর ২ মাস। পর্যালোচনা করলে দেখা যায় মানুষের গড় আয়ু দিন দিন বাড়ছে। অন্যদিকে পুরুষের তুলনায় মহিলাদের গড় আয়ু বেশি। পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম গড় আয়ু বৃদ্ধি পাওয়ার বিষয়ে জনকণ্ঠকে বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিকসহ সরকারের নানা উদ্যোগের কারণে দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নতি হয়েছে। শিক্ষার হার বৃদ্ধি পাওয়ায় মানুষের মধ্যে সচেতনতা বেড়েছে। তাছাড়া এখন সুপেয় বিশুদ্ধ পানি প্রাপ্তির হার বেড়েছে। এসব কারণে আগে যেসব প্রাণঘাতি রোগ-বালাই দেখা দিত, বিভিন্ন রোগে মহামারি হয়ে মানুষ মারা যেত এখন সেসব আর নেই বললেই চলে। ফলে মানুষের গড় আয়ু বেড়ে এখন ৭০ বছর ৪ মাসে দাঁড়িয়েছে। গড় আয়ু ছাড়ায় বিভিন্ন ক্ষেত্রে অগ্রগতির চিত্র উঠে এসেছে প্রতিবেদনে। এগুলো হচ্ছে বিদ্যুতের ব্যবহার, টয়লেট সুবিধা, নির্ভরশীলতার অনুপাত, শিক্ষার হার, শিশুমৃত্যুর হার, মাতৃমৃত্যুর হার, জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার এবং স্থুল প্রতিবন্ধিতা, যা সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এমডিজি) লক্ষ্য অর্জনে ভূমিকা রাখছে বলে আশা করা হচ্ছে। এ বিষয়ে পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব কানিজ ফাতেমা জনকণ্ঠকে বলেন, দারিদ্র্য বিমোচনসহ গুরুত্বপূর্ণ আর্থ-সামাজিক অর্জনের ক্ষেত্রে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায় প্রতিনিয়ত পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। আমরা নিম্ন আয়ের থেকে এখন নিম্ন-মধ্য আয়ে উন্নীত হয়েছি। এরপর মধ্য আয় এবং উন্নত দেশে যাব। এজন্য বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। সেসব কার্যক্রমের অর্জিত ফলাফল বিবিএসের এই প্রকল্পের মাধ্যমে উঠে আসে। এক কথায় একটি পরিবারের সামগ্রিক চিত্র, একজন বাস চালক বা মোটর মেকানিক কিভাবে জীবন ধারণ করে তা তুলে আনা হয়েছে। এভাবে সঠিক চিত্র পেলে সরকারের পক্ষে সমন্বিত পরিকল্পনা করা সহজ হবে। সেই সঙ্গে সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এমডিজি) মূল্যায়নসহ গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশক মূল্যায়নে ভূমিকা রাখছে। মাতৃমৃত্যুর হার কমেছে। গুরুত্বপূর্ণ এ সূচকে অগ্রগতি অর্জিত হয়েছে। বর্তমানে মাতৃমৃত্যুর হার দাঁড়িয়েছে এক দশমিক ৯৭ শতাংশ, যা ২০১২ সালে ছিল দুই দশমিক শূন্য তিন শতাংশ। তার আগের কয়েক বছরে যথাক্রমে এ হার ছিল দুই দশমিক নয় শতাংশ, দুই দশমিক ১৬ শতাংশ এবং দুই দশমিক ৫৯ শতাংশ। গ্রামে বর্তমানে মাতৃমৃত্যুর হার দাঁড়িয়েছে দুই দশমিক শূন্য পাঁচ শতাংশ, যা ২০১২ সালে ছিল দুই দশমিক ১০ শতাংশ। শহরে এ হার দাঁড়িয়েছে এক দশমিক ৮৫ শতাংশ, যা ২০১২ সালে ছিল এক দশমিক ৯০ শতাংশ। প্রতিবেদন পর্যালোচনা করলে দেখা যায় বর্তমানে জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির ব্যবহার বেড়েছে। এ হার দাঁড়িয়েছে ৬২ দশমিক চার শতাংশ, যা ২০১২ সালে ছিল ৬২ দশমিক দুই শতাংশ, ২০১১ সাল থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে এ হার ছিল ৫৮ দশমিক তিন শতাংশ, ৫৬ দশমিক সাত এবং ৫৬ দশমিক এক শতাংশ। অন্যদিকে গ্রামে জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারের হার দাঁড়িয়েছে ৬১ দশমিক আট শতাংশ, যা ২০০৯ সালে ছিল ৫৪ দশমিক চার শতাংশ। শহরে জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার হার ৬৪ দশমিক এক শতাংশ, যা ২০০৯ সালে ছিল ৫৮ দশমিক সাত শতাংশ। বাংলাদেশে নির্ভরশীল মানুষের সংখ্যা কমেছে। বর্তমানে জাতীয়ভাবে শতকরা ৫৫ জন মানুষ নির্ভরশীল (শিশু, প্রতিবন্ধী, বেকার ইত্যাদি), যা ২০১২ সালে ছিল ৫৬ শতাংশ, তার আগের তিন বছরে এ হার ছিল পর্যায়ক্রমে ৫৭ শতাংশ, ৬৫ শতাংশ এবং ৬৬ শতাংশ। এক্ষেত্রে পল্লী অঞ্চলে নির্ভরশীল মানুষের হার শতকরা ৬০ শতাংশ যা তার আগের বছর ২০১২ সালে ছিল ৬১ শতাংশ এবং শহর এলাকায় এ হার ৪৭ শতাংশ, যা তার আগের বছর ছিল ৪৮ শতাংশ।
×