ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ফেসবুক, টুইটারে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া

নৃশংস ভিডিও চিত্রটি দেখে শিউরে ওঠেন সবাই

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ১৪ জুলাই ২০১৫

নৃশংস ভিডিও চিত্রটি দেখে শিউরে ওঠেন সবাই

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সিলেটে শিশু রাজনকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা এবং এর নৃশংস ভিডিওচিত্র নিয়ে দেশব্যাপী তোলপাড় শুরু হয়েছে। রবিবার সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভয়াবহ ভিডিওচিত্র দেখার পর শিউরে ওঠেন সবাই। শিশু রাজনের চোখেমুখে বাঁচার আকুতি কাঁদিয়ে চলেছে দেশবাসীকে। সবার মনে একই প্রশ্নÑ কিভাবে একটি শিশুকে সামান্য চুরির সন্দেহে এমনভাবে হত্যা করতে পারল পাষ-রা। কতটা বিকৃত মানসিকতার হলে তারা হত্যাকা-টি ভিডিও করেছে এবং তা ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দিয়েছে। সব মহল থেকে এ হত্যার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে দ্রুততম সময়ে সর্বোচ্চ শাস্তি প্রদানের দাবি উঠেছে। সোমবার রাজন হত্যার বিচার চেয়ে দেশব্যাপী মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিভিন্ন সংগঠন থেকে হত্যাকারীদের শাস্তির দাবিতে বিবৃতি দেয়া হয়েছে। এদিকে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সোমবার বলেছেন, হত্যাকারীদের কেউ ছাড় পাবে না। হত্যায় জড়িত প্রত্যেককে দ্রুত গ্রেফতারের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। রাজনের ময়নাতদন্ত করে চিকিৎসক জানিয়েছেন, মস্তিষ্কে আঘাতে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মৃত্যু হয়েছে। তার শরীরে ৬৪টি আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। গত বুধবার সকালে ১৩ বছরের শিশু সামিউল আলম রাজনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। নির্যাতনকারীরা শিশুটিকে পেটানোর ভিডিও ধারণ করে এবং তা ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়। ২৮ মিনিটের ওই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে শুরু হয় তোলপাড়। ফেসবুক, টুইটারসহ বিভিন্ন যোগাযোগের মাধ্যমে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন অসংখ্য মানুষ। সেøাগানসমৃদ্ধ ছবিও প্রকাশ হচ্ছে যোগাযোগের মাধ্যমে। তাতে লেখা হয়েছে, ‘আমি আর কখনও কবিতা পড়ব না এই বর্বর প্রাণীদের বিচার না হওয়া পর্যন্ত।’, ‘এই কসাইখানা আমার দেশ না।’ একজন লিখেছেন, ‘পৃথিবীতে যুগে যুগে মানুষরূপী কিছু অমানুষ জন্ম নেয়, যাদের কর্মকা- পুরো মানবজাতিকে অপরাধী বানিয়ে দেয়। রাজন, আমাদের ক্ষমা করিস বাপ। এ দৃশ্য দেখার পর সারারাত ঘুমাতে পারিনি।’ আরেকজন লিখেছেন, ‘চরম মানসিক বিপর্যয়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি আমরা। নয় তো কেন ঘরে বাইরে মানবিকতা এভাবে পরাজিত হচ্ছে। শিশু রাজন হত্যার ভিডিওটি দেখার সাহস নেই। তীব্র ঘৃণা ও প্রতিবাদের পাশাপাশি দ্রুতবিচার আইনে খুনীর দলের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’ শিল্পী চারুপিন্টু লিখেছেন, ‘এই কসাইদের গ্রেফতার না হওয়া পর্যন্ত সমস্ত ছবি আঁকা থেকে বিরত থাকলাম। আমার এর চেয়ে বেশিকিছু করার নেই। এর চেয়ে আর কী প্রতিবাদ করার আছে? রাস্তায় দাঁড়ালে আন্দোলন ছিনতাই হয়, বিভিন্ন খপ্পরে পড়ে যায়। এই কসাই মানসিকতা থেকে মুক্তি চাই যেভাবেই হোক... ছোট্ট রাজনকে যে মানুষ বাঁচতে দেয় না সে মানুষদের সাথে একই রাষ্ট্রে কোন উৎসব পালন করাও বেশ দুঃখের...। আমি মনে করি একটা কোমলমতি দরিদ্র শিশুর অসহ্য করুণ মৃত্যুর চেয়ে শিল্পচর্চা কোনভাবেই বড় হতে পারে না।’ আরেকজন লিখেছেন ‘... আমার তালিকায় কোন ক্রিকেটার নেই। তারপরও বলছি তাদের উদ্দেশ্য করেই, এই মুহূর্তে তারা ছাড়া আর কোন উপায়ও নেই আমাদের সামনে। এই ক্রিকেটাররা পারেন রাজন হত্যার বিচার চাইতে। আমি নিশ্চিত, আজ যদি তারা বলেন, এর দৃষ্টান্তমূলক বিচার না হওয়া পর্যন্ত আমরা খেলব না তাহলেই রাষ্ট্রযন্ত্র নড়বে, বিশ্ব অধিপতিরা নড়বে। কিন্তু তারা কি করবেন এটা? একটি বার? অন্তত দেশের জন্য? আমরা যারা তাদের ভালবাসি, তাদের জন্য?’ এমন সব মর্মস্পর্শী আবেদন ছিল দু’দিন ধরে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমজুড়ে। বাংলাদেশ ক্রিকেট টিমের টেস্ট অধিনায়ক মুশফিকুর রহীম তার ফেসবুক ফ্যানপেজে ‘সে নো টু চাইল্ড এ্যাবিউস’ লেখা প্ল্যাকার্ড হাতে দাঁড়িয়ে থাকা ছবি আপলোড করেন। তিনি লিখেছেন, ‘একটি নিষ্পাপ শিশুকে নির্যাতন করে মেরে ফেলার মতো বড় অপরাধ মনে হয় আর নেই। শিশু নির্যাতনকে না বলুন।’ জাতীয় দলের ক্রিকেটার মাহমুদুল্লাহ, মমিনুল হকদের ফেসবুক ফ্যানপেজেও মুশফিকের এই ছবি শেয়ার করা হয়। এদিকে রাজন হত্যার ঘটনায় তীব্র নিন্দা প্রকাশ করেছেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান। সোমবার এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, কতিপয় পাষ- দোকানঘরের বারান্দার খুঁটির সঙ্গে বেঁধে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে রাজনকে নির্মমভাবে নির্যাতন করে হত্যা করে এবং লাশ গুমের চেষ্টা করে, যা মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। এ ঘটনায় জাতীয় মানবাধিকার কমিশন তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে। শিশু রাজনের হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেফতার ও বিচার দাবি করেছে বাংলাদেশ যুব মৈত্রী। মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম এক বিবৃতিতে হত্যাকা-ের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চেয়েছেন। শিশু-কিশোর মেলা, সামাজিক ছাত্র ফ্রন্ট, সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম ও বিজ্ঞান আন্দোলন মঞ্চ হত্যাকারীদের শাস্তি চেয়ে বিবৃতি দিয়েছে। সোমবার এক বিবৃতিতে খেলাঘর কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতিম-লীর চেয়ারম্যান অধ্যাপিকা পান্না কায়সার ও সাধারণ সম্পাদক আবুল ফারাহ পলাশ বিবৃতিতে ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘মিথ্যা চুরির অপবাদ দিয়ে চতুর্থ শ্রেণী পর্যন্ত পড়া সবজি বিক্রেতা রাজনকে খুঁটির সঙ্গে বেঁধে যেভাবে লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে ও খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করা হয়েছে, তার নিন্দা জানানোর ভাষা আমাদের জানা নেই। মধ্যযুগীয়, নৃশংসতম, বর্বর ও লোমহর্ষক এ নির্যাতন এবং নির্মম হত্যাকা-ের সঙ্গে জড়িত নরপশুদের প্রতি ঘৃণা জানাই।’ আমাদের দাবি, ‘এই খুনীদের একমাত্র শাস্তি মৃত্যুদ-।’ তাদের সহায়তাকারী, পলায়নে সাহায্যকারী এবং আশ্রয়দাতাদেরও সমান অপরাধী গণ্য করে বিচারের আওতায় আনতে হবে। রাজন হত্যার প্রতিবাদে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট হ্যাক ॥ কথিত চুরির অভিযোগে সিলেটের শিশু সামিউল আলম রাজনকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যার প্রতিবাদ জানিয়ে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট হ্যাক করা হয়েছে। কলেজে ভর্তির জন্য ব্যবহৃত ওই ওয়েবসাইটটি হ্যাক করার ঘটনা আলোড়ন তুলেছে সামাজিক যোাগাযোগের মাধ্যমেও। সোমবার বিকেলে ওই ওয়েবসাইটে (http://dhakaeducationboard.gov.bd) গিয়ে দেখা যায়, সেখানে লেখা রয়েছে- ‘Hacked by Code X Hunter and Dark Soul.’ ওয়েবসাইটে Code X Hunter and Dark soul have something to say লেখাটি ভেসে উঠছে। পাশাপাশি সালাম দিয়ে একটি কণ্ঠ বলছে, ‘আমি বাংলাদেশের একজন মানুষ বলছি। আবারও বলছি, আমি একজন মানুষ; অমানুষ নই আপনাদের মতো। খুব অবাক লাগছে! কেন আমি এমন বলছি! শুনুন, তাহলে একটি গল্প...। মনে পড়ে কিছুদিন আগের কথা! পহেলা বৈশাখে ঢাকা ইউনিভার্সিটি গিয়েছিল কিছু মেয়ে। ওদের বস্ত্রহরণের মতো জঘন্য কাজও করেছিল কিছু অমানুষের জাত। যাদের...! আসলে আমাদের পুলিশের কথা বলে কোন লাভই নেই। কারণ, ওনাদের কাছে সবই...! আর লেটেস্ট নিউজ তো দেখছি। রাজন নামে এক ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে। কিসের জন্য জানেন! চোর মনে করা হয়েছিল। সিওর না কিন্তু। আচ্ছা, বুঝি না দেশে কুকুর এত বেড়ে গেল কী করে! এক/দুই কোটি মানুষও হবে কিনা ডাউট রয়েছে। আর ১২/১৪ কোটি কুকুর, অদ্ভুত ব্যাপার! এদের নিধন করা জরুরী হয়ে পড়েছে।’ শিশু রাজনকে গত ৮ জুলাই পিটিয়ে হত্যা করার পর হত্যার দৃশ্য ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়া হয়। এরপর দেশে-বিদেশে সমালোচনার ঝড় ওঠে। এ ঘটনায় একজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইটে রাজন হত্যার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে জেগে ওঠার আহ্বান জানিয়েছেন ওই হ্যাকার। বলেছেন, ‘ওয়াক আপ পিপল!’ এছাড়া দিনে দিনে নির্মমতা তুলে ধরে তার প্রতিবাদ না করার সমালোচনা করেছেন হ্যাকার। ওয়েবসাইটে লেখা রয়েছেÑ ‘we have something to say... enough is enough. We have tolerated enough... You have forgotten what is law, what is freedom of speech. you have forgotten what is religion if you think we are joking, then you are wrong.’ ‘বাংলাদেশের মানুষের পক্ষ থেকে বলছি। ভাল থাকবেন। ঈদ মোবারক!’ সব শেষে বলেছে হ্যাকারের ওই কণ্ঠ। এদিকে ওয়েবসাইট হ্যাক করার বিষয়টি সাংবাদিকরা ফোন করার পরই প্রথম জানতে পারেন ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারা। কলেজ পরিদর্শক আসফা
×