ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বিদেশী বিনিয়োগে গ্যাস ও জমিই বড় বাধা ॥ বাণিজ্যমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ১৩ জুলাই ২০১৫

বিদেশী বিনিয়োগে  গ্যাস ও জমিই  বড় বাধা ॥ বাণিজ্যমন্ত্রী

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, বিদেশী বিনিয়োগের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে গ্যাস ও জমি। বিদেশীদের কথা বাদ দেন, দেশীয় যারা ২০০ থেকে ৩০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে কারখানা করেছে তাদেরই গ্যাস সংযোগ দিতে পারছি না। এজন্য সম্ভাবনাময় স্থানে যেমন ভোলায় শোনা যাচ্ছে গ্যাস রয়েছে এ রকম স্থানে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে গ্যাস উত্তোলনে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। তাছাড়া জমির সমস্যা রয়েছে, ভিয়েতনাম বিনিয়োগকারীদের মাগনা জমি দেয়, ফলে তাদের দেশে ব্যাপক বিদেশী বিনিয়োগ হয়েছে। তিনি আরও বলেন, পৃথিবীতে কোথাও এ্যাকড এ্যালায়েন্স নেই। অথচ আমাদের দেশে তারা কাজ করছে। এটা দুর্ভাগ্যজনক। বিশ্বে অনেক ঘটনাই ঘটছে কিন্তু বাংলাদেশে এক রানা প্লাজা ধসের ঘটনাই যত সমস্যা মনে করা হচ্ছে। সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা (২০১৬-২০) দলিলের খাতভিত্তিক পরামর্শ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। রবিবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে খাতভিত্তিক আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন, বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী ইমাজ উদ্দিন প্রামাণিক। বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম। বক্তব্য রাখেন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেদায়েতউল্লাহ আল মামুন, শিল্প সচিব মোশারফ হোসেন ভূঁইয়া, বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) মহাপরিচালক কেএস মুর্শিদ, সেন্টার ফল পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. মোস্তাফিজুর রহমান, এফবিসিসিআইর প্রতিনিধি গুলশান নাসরিন চৌধুরী, ডিসিসিআইর প্রতিনিধি শহিদ চৌধুরী, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মজিবুর রহমান প্রমুখ। সভাপতির বক্তব্যে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী মুহাম্মদ ইমাজ উদ্দিন প্রামাণিক বলেন, দেশের উন্নয়ন ঘটাতে চাইলে পাট খাতের উন্নয়ন করতে হবে। কেননা এক সময় পাট ছিল অর্থনীতির এক নম্বর শক্তি। তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংক বলেছে মধ্য আয়ের দেশ। বিশ্বব্যাংক বলুক আর নাই বলুক দেশ এগিয়ে যাচ্ছে এবং যাবেই। সে লক্ষ্যে সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান বলেন, কারিগরি শিক্ষাকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে বের করে এনে আলাদা মন্ত্রণালয় করা দরকার। কেননা আমাদের উন্নতি করতে হলে দক্ষতা উন্নয়নের বিকল্প নেই। তিনি বলেন, উত্তরাঞ্চলে জমির সমস্যা নেই। বিদ্যুত ও গ্যাসসহ অবকাঠামো উন্নয়ন করা গেলে ব্যাপক শিল্পায়ন অনেক সহজ হবে। আমাদের কর রেভিনিউ বাড়ানো প্রয়োজন। ট্যারিফ কমিশন ও এনবিআরের মধ্যে সম্পর্ক বাড়ানো দরকার। ডব্লিউটিও এর সঙ্গে সম্পর্কিত করে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পলিসি করা দরকার। শিল্পসচিব মোশারফ হোসেন বলেন, সরাসরি বিদেশী বিনিয়োগ (এফডিআই) আনতে জায়গা করে দিতে হবে। স্পেশাল ইকোনমিক জোন করতেই হবে। এর বিকল্প কিছু নেই। শিল্পখাতের উন্নয়নে ইন্ডাস্ট্রিয়ান পলিসি করা হচ্ছে। আগামী ১ মাসের মধ্যে এটি একটি পর্যায়ে আসবে। সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, কৃষির সঙ্গে ম্যানুফ্যাকচারিংয়ের সমন্বয় করতে হবে। রফতানি বৃদ্ধির পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ বাজারের বিষয়টিতে নজর দিতে হবে। প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রম বাড়াতে হবে। ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট করতে হবে আমেরিকার সঙ্গে। ভারত বা চীনের সঙ্গে করে লাভ নেই। কেননা এ দুটি দেশে আমাদের প্রচুর পণ্য ডিউটি ফ্রি সবিধা পায়। তিনি বলেন, শিক্ষা খাতে বাজেট বরাদ্দ বাড়াতে হবে। বিআইডিএসের মহাপরিচালক কেএস মুর্শিদ বলেন, পরিকল্পনায় বাস্তবতা ও স্বপ্নের মধ্যে সমন্বয় ঘটাতে হবে। বিদেশী বিনিয়োগ আনতে চাইলে ইকোনমিক জোন করতে হবে। যত বেশি ইকোনমিক জোন হবে ততই বিনিয়োগ বাড়বে আর কর্মসংস্থান হবে। ডিসিসিআইর ভাইস প্রেসিডেন্ট শহীদ চৌধুরী বলেন, বিমানের লাগেজ বিড়াম্বনার কারণে দেশের ইমেজ নষ্ট হচ্ছে। কেননা কোন যাত্রী এয়ারপোর্টে নামলে দেড় ঘণ্টায়ও লাগেজ আসে না। এটি অত্যন্ত বিরক্তিকর। এ বিষয়ে যত দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া যায় ততই ভাল। কৃষিভিত্তিক শিল্প স্থাপনের সমস্যাগুলো খুঁজে বের করতে হবে। কেননা অনেকেই উদ্যোগ নিয়েছিল, কিন্তু শেষ পর্যন্ত দুই একটি বড় কোম্পানি ছাড়া ছোট ও মাঝারিগুলো প্রায় ঝরে গেছে। ট্যারিফ যৌক্তিক পর্যায়ে রাখতে হবে।
×