ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

দক্ষিণ আফ্রিকা ১৬২/১ (৪৬ ওভার), বাংলাদেশ ১৬৭/৩ (২৭.৪ ওভার), টাইগাররা ৭ উইকেটে জয়ী

অবশেষে স্বরূপে ফিরল মাশরাফিরা

প্রকাশিত: ০৫:১৪, ১৩ জুলাই ২০১৫

অবশেষে স্বরূপে ফিরল মাশরাফিরা

মিথুন আশরাফ ॥ ভারতের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের তৃতীয় ওয়ানডেতে যে বাংলাদেশ ঝলকহীন হয়ে পড়ল, তা দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডে পর্যন্ত বজায় থাকল। অবশেষে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে এসে সেই ঝলকের দেখা আবারও মিলল। বোলাররা বাংলাদেশকে আবারও ভাল কিছু এনে দিলেন। মুস্তাফিজুর রহমান (৩/৩৮) উইকেট, নাসির হোসেন (৩/২৬) উইকেট ও রুবেল হোসেন (২/৩৪) উইকেট নিলেন। সেই সঙ্গে দক্ষিণ আফ্রিকাকেও ১৬২ রানের মধ্যে আটকে রাখা গেছে। জিম্বাবুইয়ে, পাকিস্তান, ভারতের বিপক্ষে সিরিজ জিতে বাংলাদেশ। টানা ১০ ওয়ানডে ম্যাচ জিতে নেয়। জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে ৫, পাকিস্তানের বিপক্ষে ৩ ও ভারতের বিপক্ষে ২ ম্যাচ জিতে। যেই ভারতের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ওয়ানডে ‘বাংলাওয়াশে’র স্বপ্ন নিয়ে খেলতে নামেন টাইগাররা, সেই স্বপ্ন আর পূরণ হয়নি। এবার হার হয়। সেই যে হার হয়েছে, তা চলছেই। ভারতের বিপক্ষে ১ ম্যাচের হারের পর দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টানা ৩ ম্যাচে হার হয়েছে বাংলাদেশের। টানা দুটি টি২০তে যথাক্রমে ৫২ ও ৩১ রানে হারের পর তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতেও ৮ উইকেটের বড় ব্যবধানে হার হয়েছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকা যে ১৬২ রান করেছে, তাতে বাংলাদেশের জয়ের আশা করাই যায়। সেই মজবুত ভিত আবারও গড়ে দিলেন বোলাররাই। ভারতের বিপক্ষে পেসার মুস্তাফিজুর রহমান একাধারে আধিপত্য বিস্তার করেছেন। তিন ম্যাচে ১৩ উইকেট নিয়েছিলেন। যা ক্রিকেট বিশ্বে তিন ম্যাচের সিরিজে আর নেই। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে খেলতে নেমেই কিভাবে যেন নিষ্প্রভ হয়ে গেলেন মুস্তাফিজ। প্রোটিয়ারা মুস্তাফিজকে নিয়ে যে ভালভাবে ‘হোমওয়ার্ক’ করেছে তা বোঝা গেছে। তাই তো ডি ভিলিয়ার্স, ডু প্লেসিসরা মুস্তাফিজকে ভালভাবেই খেলেছেন। ভারতের বিপক্ষে যেমন নৈপুণ্য দেখিয়েছেন, তার ধারে কাছেও দুই টি২০’র সিরিজে যাননি। প্রথম ওয়ানডে তো উইকেটই পাননি! ক্যারিয়ারে এর আগে যে ভারতের বিপক্ষে তিন ওয়ানডে খেলেছেন, সবকটিতে উইকেট নিয়েছেন। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে গিয়ে ক্যারিয়ারের চতুর্থ ওয়ানডে খেললেন। সেই ওয়ানডেতে উইকেটহীনই থাকলেন মুস্তাফিজ। ক্যারিয়ারে প্রথমবার উইকেট ছাড়া ম্যাচ শেষ করার অভিজ্ঞতাও চতুর্থ ওয়ানডেতেই হয়ে গেল। দ্বিতীয় ওয়ানডেতেই আবার বদলে গেলেন মুস্তাফিজ। ১০ ওভার বল করলেন। ১ মেডেনসহ ৩৮ রান দিয়ে নিলেন ৩ উইকেট। তালহা জুবায়েরের (২০০২ সালে, ৪/৬৫) পর পেসার হিসেবে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সবচেয়ে উজ্জ্বল নৈপুণ্য দেখালেন মুস্তাফিজ। শুরুতেই দক্ষিণ আফ্রিকার স্কোর বোর্ডে যখন ১৬ রান যুক্ত হয়েছে, ডি কককে আউট করে দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংস ধসের শুরুটা করেন মুস্তাফিজ। এরপর ১০০ রান হতেই যে দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংসে মরিচিকা ধরে গেল, সেটি জেপি ডুমিনিকে এমন মুহূর্তে মুস্তাফিজ আউট করেছেন বলেই। শেষে রাবাদার উইকেটটি নেন। এ সিরিজে মুস্তাফিজ-রাবাদা লড়াই দেখার অপেক্ষায় ছিলেন সবাই। রাবাদা আগের ম্যাচে অভিষেকেই ৬ উইকেট নিয়ে ইতিহাস গড়েছেন। কিন্তু মুস্তাফিজ ঝলক দেখাতে পারছিলেন না। এবার মুস্তাফিজও চমক দেখালেন। নাসির হোসেন তো নির্ভরযোগ্য বোলারই হয়ে উঠছেন। ডু প্লেসিসের পর রিলি রুশোকে আউট করে দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংসের বারোটা বাজিয়ে দেন নাসির। এরপর কাইল এ্যাবোটকেও আউট করে দেন। নাসির ৮ ওভার বল করে ২৬ রান দিয়ে নেন ৩ উইকেট। বাংলাদেশ স্পিনারদের মধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে আব্দুর রাজ্জাকের (২০০৭ সালে, ৩/২৫) পর সেরা বোলিং এখন নাসিরেরই। এ দুই বোলার মিলে দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংসে কম্পন ধরিয়ে দেন। মুস্তাফিজ, নাসিরের সঙ্গে রুবেলও দুর্দান্ত বোলিং করেন। প্রথম ওয়ানডেতে রুবেলকে খেলানো হয়নি। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে স্পিনার জুবায়ের হোসেনের পরিবর্তে রুবেলকে নেয়া হয়। যোগ্যতাও দেখান এ পেসার। এবি ডি ভিলিয়ার্স নেই বলে হাশিম আমলাতেই সব ভরসা থাকে। কিন্তু এ ব্যাটসম্যানকে দলের ৪৫ রানের সময়ই আউট করে দেন রুবেল। দলের এ মুহূর্তের সেরা বোলারকে আউট করে যেন আরও উজ্জীবিত হয়ে উঠেন রুবেল। সেই সঙ্গে অন্য বোলাররাও। রুবেল ৯ ওভার বল করে ২ মেডেনসহ ৩৪ রান দিয়ে ২ উইকেট নেন। মাশরাফি বিন মর্তুজা ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদও নেন ১টি করে উইকেট। তবে সাকিব আল হাসান উইকেটহীন থেকে যান। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বাংলাদেশ দাঁড়াতেই পারবে না, এমন যখন ভাবনা হচ্ছে; তখন প্রতিদ্বন্দ্বিতার আঁচ মিলে গেল। তা মিলল মুস্তাফিজ, নাসির, রুবেলদের দুর্দান্ত বোলিংয়ে। তাতে ঝলকও দেখাল বাংলাদেশ।
×