ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

হিন্দু সম্প্রদায়ের বলেই ওপারে যেতে হবে, তা ঠিক নয়

ছিটমহলে জনগণনা

প্রকাশিত: ০৪:৫৬, ১৩ জুলাই ২০১৫

ছিটমহলে জনগণনা

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ ‘হিন্দু সম্প্রদায়ের সদস্য বলেই যে ওপারে (ভারত) যেতে হবে, এ চিন্তাভাবনা ঠিক নয়। বঙ্গবন্ধুর দেশে নিরাপদে ছিলাম, নিরাপদে আছি এবং মৃত্যুর আগ পর্যন্ত নিরাপদেই থাকব বলে আশা করি।’ এ কথা জানিয়ে ছিটমহলের চলমান জনগণনার সপ্তম দিন রবিবার দুপুরে বাংলাদেশে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে নিবন্ধন করলেন নীলফামারীর ডিমলার অভ্যন্তরে থাকা ভারতীয় ৩১ নম্বর নগর জিগাবাড়ি ছিটমহলের মৃত বীরেন্দ্রনাথের ছেলে অতুল চন্দ্র রায় (৪৬), স্ত্রী কবিতা রানী (৩৫), দুই ছেলে পবিত্র চন্দ্র রায় (১৩) ও পরিতোষ চন্দ্র রায় (৮)। এদিন মাত্র তিনটি পরিবার জনগণনায় অংশ নেয়। অন্য দুই পরিবার হলোÑ ২৯ নম্বর বড়খানকী খারিজা গীতালদহের মৃত আব্বাস উদ্দিনের পুত্র আফছার আলী (৬৫) ও তার মেয়ে অজিফা বেগম (১৮) এবং মৃত নথিকুল ইসলামের ছেলে আবু বক্কর (৪৮), তার স্ত্রী ও তিন সন্তান। এরা সবাই বাংলাদেশের নাগরিকত্বের জন্য নিবন্ধন করেন। গত ৬ জুলাই শুরু হওয়া জনগণনায় নীলফামারীর চার ছিটমহলে এ পর্যন্ত ১১৪ পরিবারের ৫১৩ সদস্য নিবন্ধন করেছেন। এদিকে আগামী ১ আগস্ট থেকে শুরু হচ্ছে ছিটমহলে জমির সার্ভে কাজ। খবর স্টাফ রিপোর্টার ও নিজস্ব সংবাদদাতাদের। পঞ্চগড় ॥ জেলার ৩৬ ছিটমহলে জনগণনা চলাকালীন এ পর্যন্ত ৪০৫ জন ভারতে যাওয়ার জন্য নির্দিষ্ট ফরম পূরণ করে তাতে স্বাক্ষর দিয়ে ছবি তুলেছেন। কিন্তু দিন যতই যাচ্ছে, সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের সংখ্যাও বাড়ছে। গত দু’দিনে পাঁচ পরিবারের ১৮ সদস্য ভারতে যাওয়ার মত পরিবর্তন করে বাংলাদেশে থেকে যাওয়ার আবেদন করেছেন। গারাতী ছিটমহলের বাসিন্দা দুলাল চন্দ্র (২০) বলেন, ফ্ল্যাটবাড়ি, রেশনকার্ড ও পাঁচ লাখ টাকার লোভে পরিবার নিয়ে ভারতে যাওয়ার আবেদনে সই করেছি। জন্মস্থান আর ভিটেমাটি ছেড়ে এখন আর যেতে চাইছি না। তাই ইউএনওর কাছে এ দেশে (বাংলাদেশে) থাকার জন্য আবেদন করেছি। একই কথা বলেন নিখিল চন্দ্র (২২) ও আনন্দ (২০)। তারা বলেন, লোভে আর মানুষের প্রলোভনে ভারতে যেতে চেয়েছিলাম। নির্দিষ্ট ফরমে সই আর ফটোও তুলেছিলাম। বাবা-মা ও স্ত্রীর অমতে আর যাব না। এ দেশেই জন্ম তাই এ দেশের মাটি আঁকড়ে ধরে থাকতে চাই। পঞ্চগড়ের বিভিন্ন ছিটমহলে সরেজমিন পরিদর্শনে আসা রাজশাহীর ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনার সন্দীপ মিত্র ভারতীয় নাগরিকত্ব গ্রহণের জন্য আবেদনকারী কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলেন। এসব ছিটবাসীর অনেকেরই প্রশ্ন ছিল- ওপারে (ভারতে) গিয়ে আমাদের কী লাভ? ভারত সরকার আমাদের জন্য চিরস্থায়ী পুনর্বাসনের কী ব্যবস্থা নিয়েছে? ফ্ল্যাটবাড়ি, রেশন আর পাঁচ লাখ টাকার পর আর কী ধরনের সুযোগ আমরা পাব? এসব প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে গিয়ে সহকারী হাইকমিশনার বলেন, কোন্ দেশে থাকতে চান এটা আপনাদের ব্যক্তিগত বিষয়। তবে যারা ভারতে যেতে ইচ্ছুক বা ভারতীয় নাগরিকত্ব গ্রহণের জন্য নাম নিবন্ধন করে ছবি তুলেছেন তাদের পুর্ণাঙ্গ তালিকা পাওয়ার পর ভারতীয় সরকার পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করবে। রবিবার সকাল থেকে পঞ্চগড়, বোদা ও দেবীগঞ্জের কয়েকটি ছিটমহল পরিদর্শন করে ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনার জনগণনার কাজে সন্তোষ প্রকাশ করেন। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল আগামী ১৪ জুলাই পঞ্চগড়, নীলফামারী, লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রামের অভ্যন্তরে অবস্থিত বিভিন্ন ছিটমহল পরিদর্শনে আসছেন। তিনি ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারযোগে ওই দিন সকালে পঞ্চগড়ে এসে সদর উপজেলার গারাতী ছিটমহল পরিদর্শন করবেন বলে জানায় জেলা প্রশাসন। জনগণনা শেষে জমি জরিপ শুরু হবে ॥ এদিকে ভারত-বাংলাদেশের ১৬২ ছিটমহলের যৌথ জনগণনা শেষে শুরু করা হবে জমি জরিপ কাজ। সংশ্লিষ্টরা জানান, আগামী ৩১ জুলাই রাত ১২টা ১ মিনিটের পর উভয় দেশের ছিটমহল বিলুপ্ত হয়ে যাবে। এছাড়া যারা দেশ (ভারত/বাংলাদেশ) বেছে নিয়ে নিবন্ধন করেছেন, তারা প্রয়োজনীয় সকল আনুষ্ঠানিকতা শেষে ৩০ নবেম্বরের মধ্যে বেছে নেয়া দেশে চলে যেতে পারবেন। এজন্য তাদের ট্রাভেল পাস দেবে সংশ্লিষ্টরা। সূত্রমতে, ১ আগস্ট থেকে শুরু হতে পারে ছিটমহলের জমি জরিপ, যা সর্বপ্রথম শুরু করা হবে বাংলাদেশের ১১১ ছিটমহল থেকে। সরকারীভাবে জমি জরিপের দিনক্ষণ চূড়ান্ত করা না হলেও আগামী ২৩ জুলাই ঢাকায় উভয় দেশের জেলা প্রশাসকের মধ্যে বৈঠকে বিষয়টি চূড়ান্ত করা হবে। সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী দেখা যায়, বাংলাদেশের অভ্যন্তরে থাকা ভারতীয় ১১১ ছিটমহলে জমি রয়েছে ১৭ হাজার ১৫৮ দশমিক ২ একর। এর মধ্যে নীলফামারীর চার ছিটমহলে জমি রয়েছে ১০৮ দশমিক ৪৮ একর, লালমনিরহাটের ৫৮ ছিটমহলে জমি রয়েছে আট হাজার ৯৭৮ দশমিক ১১ একর, পঞ্চগড়ের ৩৬ ছিটমহলে জমি রয়েছে ছয় হাজার ১৯০ দশমিক ৭৮ একর, কুড়িগ্রামের ১২ ছিটমহলে এক হাজার ৮৮০ দশমিক ৬৫ একর। এ বিষয়ে রংপুরের জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসার আব্দুল মান্নান সাংবাদিকদের জানান, ১৬২ ছিটমহলে উভয় দেশে কী পরিমাণ জমি আছে সে বিষয়গুলো নিয়ে গত ৭ জুলাই দুপুর ১২টা থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত লালমনিরহাটের পাটগ্রামের বুড়িমারী স্থলবন্দর হলরুমে যৌথ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে উভয় দেশের জমিগুলো বের করার প্রক্রিয়া নিয়ে আলোচনা হয়। আমরা ছিটমহলের জমিগুলোর শুধু ল্যান্ড রেকর্ডসগুলো বের করেছি। উভয় দেশের জেলা পর্যায়ের ডিএমও-ডিসিদের আলোচনার পর জমি জরিপ শুরু হবে। ওই সভায় ভারতীয় দলের প্রতিনিধিত্ব করেন কোচবিহারের অতিরিক্ত জেলা শাসক ও ভূমি রিফর্ম অফিসার সঞ্জয় কেআর দাসসহ ১০ সদস্য এবং বাংলাদেশের পক্ষে তিনিসহ ১০ সদস্য।
×