ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ঈদ বাণিজ্য ॥ গিভ এ্যান্ড টেকে নির্বাহী প্রকৌশলীর পকেটে ৩০ লাখ!

প্রকাশিত: ০৬:৩৬, ১২ জুলাই ২০১৫

ঈদ বাণিজ্য ॥ গিভ এ্যান্ড টেকে নির্বাহী প্রকৌশলীর পকেটে ৩০ লাখ!

সমুদ্র হক ॥ ঈদের আগে তারা ভাল আছেন। পরেও ভাল থাকবেন। তাদের সুবাদে অনেকেই ভাল আছেন। দিন কয়েক কি টেনশনই না ছিল! এখন সব ঠিকঠাক। বকশিশের পার্ট প্রায় শেষ। বর্তমানে হিসাবের পাওনা। এই দেনা-পাওনার হিসাব যে খুব সহজ তা নয়। চুন থেকে পান খসলেই চড়া মেজাজে রাগ-রাগিনী। এগুলো বড়দের খাবারের মতো বড়দের হিসাব। মধ্যম অবস্থানদের ঈদের সুর ‘বকশিশ চাই না মালিক হিসাবের পাওনা চাই’। এই মালিক যিনি তিনিও হিসাবের পাওনা আদায় করেন। কেবল স্বল্প আয়ের ধারাপাতের হিসাব কষা মানুষ ও মধ্যবিত্ত শ্রেণী এ ঈদেও ওপর ও নিচের চাপের মধ্যে থাকা স্যান্ডউইচের মতো রয়ে গেলেন। তবে আশায় আছেন মাথাপিছু আয় বর্তমানের ১৩শ’ মার্কিন ডলার থেকে আর সামান্য একটু এগিয়ে ১৫শ’ মার্কিন ডলারে ঠেকলেই স্যান্ডউইচ থেকে বের হয়ে আসতে পারেন। বাংলা নববর্ষে গ্রামে-গঞ্জে (এখন শহরেও) হালখাতার একটা রীতি আছে। যা বছর শেষে পাওনা পরিশোধের হিসাব। বিষয়টি ব্যবসায়িক। ঈদের বেলাটিতে এমন ধারতেই অন্য রকম ব্যবসা (!)। টাকা উড়ে বেড়ানোর অদৃশ্য দেনা-পাওনা। কেউ বলেন এটা কি করে ব্যবসা হলো! এ অর্থ দিয়ে তো সখের কেনাকাটা করা হয়। শপিং করা কি ব্যবসা। আরেক পক্ষের সহজ সরল যুক্তি, অর্থের উৎসটা কোথায়! এই উৎস খুঁজতে গিয়েই দেখা যায়Ñ ঈদের আগে ‘কিছু পাইয়া থাকি, কিছু দিয়া থাকি, কিছু নিয়া থাকি......’ এই চাওয়া-পাওয়া, দেয়া-নেয়ার ‘এক্সক্লুসিভ’ হিসাবটি দিনে দিনে ‘ইনভিজিবল ম্যান্ডেটরি’ হয়ে গিয়েছে। যেমন রমজান মাস শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ‘ইফতার পার্টি’ নামে বিশেষ ধরনের এক পার্টির আবির্ভাব হয়েছে। সকল সরকারী অধিদফতর, পরিদফতর, দফতর, ব্যুরো, সরকারী বেসরকারী প্রতিষ্ঠান, রেজিস্টার্ড ট্রেড ইউনিয়ন, বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান, বড় ও মাঝারি সংগঠনসহ প্রায় সকল প্রতিষ্ঠান এবং রাজনৈতিক দল ইফতার মাহফিলের আয়োজন করে। কিছু ইফতার পার্টি এতটাই জাঁকজমক ও আড়ম্বরপূর্ণ হয় যে খরচের হিসাব শুনলে চোখ চড়ক গাছে উঠে। কোথা থেকে যে এত অর্থের যোগান আসে....! অবশ্য ধর্মীয় কাজের খরচের হিসাব দেয়ার নিয়ম নেই, কোন জবাবদিহিতাও নেই। ইফতার পার্টির আয়োজন না করলেই যেন পরিচিতির প্রতীক, ডিগনিটি, স্ট্যাটাস সিম্বল বিফলে যায়। দেশজুড়ে এ ধরনের ইফতার পার্টিতে যত অর্থ ব্যয় হয় তার সামান্য অংশ নিজ এলাকার অথবা গ্রামের হত দরিদ্রদের জীবনের কোন উন্নয়নে কাজে লাগালে ধনী দেশের তালিকায় অন্তর্ভুক্তিতে বেশি সময় লাগার কথা নয়। আবার ধনীদের যাকাতের অংশটি বিচ্ছিন্নভাবে না বিলিয়ে নিজ এলাকা ও গ্রামে প্রতিবছর হত দরিদ্রদের মধ্য থেকে এক বা দু’জনকে (সামর্থ থাকলে কয়েকজনকে) সারাবছর রোজগারের কোন পথ করে দিতে পারলে সেই পরিবারটি স্বাবলম্বী হয়ে সেও হয়তো এক সময় এ কাজটি করতে পারে। ঈদের আগের সময়টিতে বেশিরভাগ মানুষ এমন ভাল কাজে না গিয়ে সততাকে জলাঞ্জলি দিয়ে কেউ সরাসরি, কেউ বিকল্প পথে, কেউ কৌশলে কেউ চাঁদাবাজি করে, কেউ ট্র্যাপে ফেলে, কেউ ফন্দি- ফিকির বের করে, কেউ মুফতে নানা প্রক্রিয়ায় কে যে কত ভাবে ঈদের ‘আদায় বাণিজ্য’ শুরু করেছে তার হিসাব নেই। ‘আইদার ক্যাশ অর কাইন্ডস (হয় নগদ টাকা না হয় পণ্য বা জিনিস)’ থিওরিতে ক্যাশের কদরই এখন বেশি। এ বিষয়ে একজনের সাফ কথাÑ নগদ নারায়ণ পেলে কেউ কি অন্যদিকে যায়! এ বছর ঈদ-উল-ফিতর জুলাই মাসের মধ্যভাগে উদ্যাপিত হওয়ায় উচ্চ পর্যায়ে দেয়া-নেয়া বা দেনা-পাওনার পার্টটি জুন ক্লোজিংয়ে অনেকটা মিটমাট হয়েছে। বাকি যেটুকু আছে তা মিউচ্যুয়াল আন্ডারস্ট্যান্ডিংয়ের পর্যায়ে। একটি ছোট্ট উদাহারণ দেয়া যায়Ñ শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের উত্তরাঞ্চলের এক জেলায় কর্মরত নির্বাহী প্রকৌশলী (যিনি দক্ষিণাঞ্চলের অরে অ মনু মুই কি এ্যাডায়......এমন ভাষায় কথা বলেন) ঈদকে সামনে রেখে জুন মাসের ক্লোজিংয়ে ২৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৩৬ কোটি টাকার অবকাঠামো উন্নয়ন কাজ শুরু না হতেই ১৯ জন ঠিকাদারকে প্রায় পৌনে তিন কোটি টাকা বিল প্রদান করেছেন।
×