ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

চিরকুট নিয়ে তদন্ত করছেন সিআইডি বিশেষজ্ঞরা

প্রকাশিত: ০৬:৪৯, ৯ জুলাই ২০১৫

চিরকুট নিয়ে তদন্ত করছেন সিআইডি বিশেষজ্ঞরা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঢাকায় মুক্তিযোদ্ধার আত্মহত্যা নিয়ে তোলপাড় চলছে। নিহত মুক্তিযোদ্ধাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় দাফন করা হয়েছে। এদিকে আত্মহত্যার প্রকৃত কারণ জানতে চলছে গভীর তদন্ত। লাশের সঙ্গে উদ্ধার হওয়া চিরকুটটি ওই মুক্তিযোদ্ধার কিনা সে বিষয়ে সিআইডির হস্ত লেখা বিশারদরা তদন্ত করছেন। নিহত মুক্তিযোদ্ধা চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী শুঁটকি মাছ এবং মোটা অঙ্কের টাকা মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব এম এ হান্নানকে দিয়েছেন। সেই টাকা ফেরত চাইতে গেলে দুইবার সচিব তার বাড়ি থেকে তাঁকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেন। আর তাতেই অপমানিত হয়ে আত্মহত্যা করেন বলে জানিয়েছেন নিহতের বড় ছেলে আরিফ খান। এদিকে বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের তরফ থেকে মুক্তিযোদ্ধার আত্মহত্যার সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলত শাস্তি দাবি করা হয়েছে। যদিও বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরের প্রতিবাদ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব। মঙ্গলবার বেলা এগারোটার দিকে রাজধানীর শাহবাগ মডেল থানাধীন তোপখানা রোডের কর্ণফুলী আবাসিক হোটেলের ২০৪ নম্বর কক্ষ থেকে আইয়ুব খান (৬২) নামে এক মুক্তিযোদ্ধাকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ। তাকে দ্রুত ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হলে আধঘণ্টা পরেই তাঁর মৃত্যু হয়। নিহত আইয়ুব চট্টগ্রামের সাতকানিয়া মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার এবং চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা সংসদের সদস্য সচিব ছিলেন। নিহতের বড় ছেলে আরিফ খান জনকণ্ঠকে বলেন, তাদের বাড়ি সাতকানিয়া উপজেলার নলুয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ মলফলা গ্রামে। তারা দুই ভাই দুই বোন। সবার বড় বোন রুখসানা আক্তার পলি। তিনি বিবাহিত। এরপর আমি। আমি ছোটখাটো ব্যবসা করি। এরপর বোন আফরোজা আক্তার এ্যানি (২০) এবং সবার ছোট ভাই মোহাম্মদ রায়হান (১৭)। ছোট দুই ভাই বোন পড়াশুনা করছে। একমাস আগে বাবা ঢাকায় যান। গিয়ে উঠেন ওই হোটেলে। গত বৃহস্পতিবার রাতের ট্রেনে তার গ্রামের বাড়ির উদ্দেশে রওনা হওয়ার কথা ছিল। ঘটনার দিন সকালেও মায়ের সঙ্গে মোবাইল ফোন পিতার কথা হয়েছে। কিন্তু মঙ্গলবার দুপুরে পুলিশ মোবাইল ফোনে তাদের দ্রুত ঢাকার যাওয়ার কথা বলেন। আমি সন্ধ্যা সাতটায় ঢাকায় পৌঁছি। যাওয়ার পর আমি জানতে পারি বাবা আত্মহত্যা করেছেন। খবর পেয়ে থানায় যাই। পুলিশ পিতার লাশের সঙ্গে তিন পৃষ্ঠার একটি চিঠি উদ্ধার করে। চিঠির কপি পুলিশ তাদের দেয়নি। তবে চিঠিটি তিনি পড়েছেন। তাতে লেখা রয়েছে, আমি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিবকে চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী শুঁটকি মাছ ও মোটা অঙ্কের টাকা দিয়েছি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক চট্টগ্রামের দক্ষিণ ইউনিটের অফিস খোলার জন্য। টাকার পরিমাণ অন্তত ২০ থেকে ২৫ লাখ। কিন্তু কাজটি হয়নি। কাজ না করে সচিব দীর্ঘদিন ধরে ঘুরাচ্ছিলেন। সর্বশেষ টাকা চাইতে সচিবের বাসায় গেলে সচিব দুইবার আমাকে গলা ধাক্কা দিয়ে বের করে দেন। এমন অপমানে আমি আত্মহত্যা করলাম। প্রধানমন্ত্রীকে এমন অন্যায়ের বিচার করতে অনুরোধ করেছেন বলেও জানান নিহত মুক্তিযোদ্ধার ছেলে। যদিও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সচিব এম এ হান্নান স্বাক্ষরিত এক প্রতিবাদ লিপিতে দাবি করা হয়েছে, প্রকাশিত সংবাদ ভিত্তিহীন ও মিথ্যা। নিহত মুক্তিযোদ্ধার সঙ্গে তাঁর ব্যক্তিগত পরিচয় ছিল। ফলে এ ধরনের কোন লেনদেনের বিষয়টি একেবারেই মিথ্যা।
×