ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বিশেষ এলসিজি বৈঠক আজ

উন্নয়নের রূপরেখায় অংশ নিচ্ছে দাতারা

প্রকাশিত: ০৪:২৪, ৯ জুলাই ২০১৫

উন্নয়নের রূপরেখায় অংশ নিচ্ছে দাতারা

হামিদ-উজ-জামান মামুন ॥ আগামী ৫ বছরে উন্নয়নের রূপরেখা তুলে ধরা হচ্ছে উন্নয়ন সহযোগীদের সামনে। এ জন্য বিশেষ এলসিজি (স্থানীয় পরামর্শক গ্রুপ) বৈঠকে বসছে সরকার। আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠেয় বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। দেশে কর্মরত গ্রুপভুক্ত সকল দাতা সংস্থা ও দেশের প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকবেন। এতে কো-চেয়ারের দায়িত্ব পালন করবেন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন ও ডিএফআইডির কান্ট্রি রিপ্রেজেনটেটিভ সারাকো। এলসিজিতে সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার খসড়া উপস্থাপন করবেন পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম। এর আগে সর্বশেষ গত বছরের সেপ্টেম্বরের এলসিজি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিল বলে জানা গেছে। এ বিষয়ে ড. শামসুল আলম জনকণ্ঠকে জানান, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের আয়োজনে এই বিশেষ এলসিজি বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় আগামী পাঁচ বছরে সরকারের লক্ষ্য এবং দেশকে কোথায় নিয়ে যেতে চায় সে বিষয়টি তুলে ধরা হবে। এ সময় উন্নয়ন সহযোগীদের কোন পরামর্শ বা মতামত থাকলে সেগুলো গুরুত্বসহকারে পরবর্তীতে সমন্বয় করা হবে। তিনি জানান, সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নে মোট ব্যয় (সামগ্রিক বিনিয়োগ) যেটি ধরা হয়েছে তার মধ্যে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ধরা হয়েছে ২৮ লাখ ৪৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা এবং বৈদেশিক উৎস থেকে ৩ লাখ ৫ হাজার ২০০ কোটি টাকা। পরিকল্পনার শেষ বছরে ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য অর্জন করতে হলে এই ধরনের বিনিয়োগই প্রয়োজন হবে। এক্ষেত্রেও উন্নয়ন সহযোগীদের অংশগ্রহণ প্রয়োজন হবে। ইআরডি সূত্র জানায়, বৈঠকে অংশ নেবে বিশ্বব্যাংক, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি), কাউন্সিলর ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন ফর সাউথ এশিয়া, অষ্ট্রেলিয়ান এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট, সিডা, ডেনমার্ক সরকারের পক্ষে বাংলাদেশে নিযুক্ত প্রতিনিধি, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জার্মান সরকারের পক্ষে প্রতিনিধি, ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক, জাপান সরকারের পক্ষে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থার (জাইকা) প্রতিনিধি, কোরিয়া সরকারের পক্ষে প্রতিনিধি, নেদারল্যান্ড সরকারের পক্ষে প্রতিনিধি, নরওয়ে সরকারের পক্ষে প্রতিনিধি, স্পেন সরকারের প্রতিনিধি, সুইডেন সরকার, সুইজারল্যান্ড সরকার এবং ইউনাইটেড কিংডোমের পক্ষে বাংলাদেশ প্রতিনিধি, ইউনাইটেড নেশনসের পক্ষে আবাসিক সমন্বয়কারী, ইউনাইটেড স্টেটসের পক্ষে সহকারী মিশন পরিচালক ও আইএলও এর প্রতিনিধিসহ অন্যান্য দাতাদের প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকবেন বলে আশা করা হচ্ছে। সূত্র জানায়, বাংলাদেশের উন্নয়নে বৈদেশিক সাহায্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। গত দশ বছর ধরে বাংলাদেশ প্রতিবছর গড়ে ১ দশমিক ৫৪ বিলিয়ম অর্থাৎ ১৫৪ কোটি মার্কিন ডলার বৈদেশিক সাহায্য গ্রহণ করছে। এ বৈদেশিক সাহায্য দেশের মোট জাতীয় আয়ের মাত্র ২ শতাংশ হলেও বাংলাদেশের উন্নয়ন বাজেটের প্রায় ৫০ শতাংশ। বৈদেশিক সাহায্যের প্রায় ৭০ শতাংশ আসে বিভিন্ন প্রকার ঋণ থেকে, যা দেশের জাতীয় ঋণ এবং সংশ্লিষ্ট ঋণ সেবামূল্যের পরিমাণ বৃদ্ধি করছে। বাংলাদেশে বৈদেশিক সাহায্যের কার্যকারিতার বিষয়ে বেশ কিছু সমীক্ষা ও মূল্যায়ন কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে। সামগ্রিকভাবে এসব কার্যক্রমের অনুসন্ধানে বৈদেশিক সাহায্যের কার্যকারিতার বিষয়ে কিছু অগ্রগতি পরিচালিত পরিলক্ষিত হয়েছে। কিন্তু ২০০৫ সালে প্যারিস এবং ২০১১ সালে কোরিয়ার বুসানে অনুষ্ঠিত বৈদেশিক সাহায্য কার্যকারিতার বিষয়ে বিশ্ব সম্মেলনের অঙ্গীকার বাস্তবায়নে অনেক সমস্যা এখনও বিদ্যমান রয়েছে। ইআরডি জানায়, বিভিন্ন মূল্যায়ন কার্যক্রমে উন্নয়ন সহযোগীদের দেয়া সাহায্যের বিষয়ে অধিকতর সমন্বয় সাধনের এবং জাতীয় অগ্রাধিকার ও ব্যবস্থার সঙ্গে বৈদেশিক সাহায্যের অধিকতর সমন্বয় সাধন ও একরেখীকরণের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে। একই সঙ্গে বৈদেশিক সাহায্যের কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিতকরণের স্বার্থে শক্তিশালী সরকারী নেতৃত্ব ও দক্ষ সরকারী প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা বলা হয়েছে। কেননা বাস্তবায়ন বিলম্বের কারণে প্রতিবছর উন্নয়ন পরিকল্পনা সংশোধন করে কমাতে হচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে উন্নয়ন সহযোগীদের বিশ্বব্যাপী সাহায্য কার্যকারিতা কর্মসূচী বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকারও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে প্রতিষ্ঠিত প্রধানত উন্নয়ন সহযোগী তহবিলপুষ্ট এইড ইফেকটিভনেস ইউনিটের মাধ্যমে সরকার বৈদেশিক সাহায্য কার্যকর করার পদক্ষেপ হিসেবে এলসিজিকে কাজে লাগাচ্ছে। সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ জানায়, আগামী পাঁচ বছরের প্রধান লক্ষ্যগুলো হচ্ছে, বর্তমানের ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধির বৃত্ত থেকে বেরিয়ে পরিকল্পনার শেষ অর্থবছর ২০ এ ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধির অর্জন, মূল্যস্ফীতি বর্তমানের (২০১৫ সাল) ছয় দশমিক পাঁচ শতাংশ থেকে ২০২০ সালে পাঁচ দশমিক পাঁচ শতাংশে নিয়ে নিয়ে আসা, মোট বিনিয়োগ বর্তমানে জিডিপির ২৭ দশমিক ৬ শতাংশ থেকে পরিকল্পনার বছর শেষে ২০২০ সালে জিডিপির ৩৪ দশমিক ৪ শতাংশে নিয়ে যাওয়া। জাতীয় সঞ্চয় বর্তমানে জিডিপির ২৯ দশমিক ১ শতাংশ থেকে পরিকল্পনার শেষ বছরে জিডিপির ৩২ দশমিক ১ শতাংশে নিয়ে যাওয়া। ভোগ বর্তমানে জিডিপির ৭৭ দশমিক ৭০ শতাংশ থেকে জিডিপির ৭৩ দশমিক ৫ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
×