ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সমাজ ভাবনা

প্রকাশিত: ০৪:০৯, ৯ জুলাই ২০১৫

সমাজ ভাবনা

ইসমত পারভীন রুনু ঈদের হাতছানি। চারদিকে সাজ সাজ রব। মাসব্যাপী সিয়াম সাধনার পর খুশির বার্তা নিয়ে আসছে পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর। এখন ঈদের চাঁদের অপেক্ষা। আনন্দের জোয়ার সর্বত্র। বাড়ছে ঘরে ফেরার তাগিদ। প্রিয়জনের সঙ্গে এখন ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করার পালা। পরিবার কিংবা নিকট আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে ঈদ উদ্যাপন যেন ঈদের আনন্দকে কয়েকগুণ বাড়িয়ে তোলে। আবহমানকাল থেকেই এই রীতি প্রচলিত। শেকড়ের টান বলে কথা! কিছু কিছু ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম আছে। সীমাহীন আনন্দের সঙ্গে রয়েছে উৎকণ্ঠার ছায়া। শত বাধা-বিপত্তি ও নানা রকম প্রতিবন্ধকতায় জর্জরিত যে অভিযাত্রা, তা আদৌ সুখকর ও নিরাপদ হবে তো? পথ চেয়ে থাকা বাবা-মায়ের অপেক্ষার প্রহর সার্থক হবে তো? কিংবা নিজের রোজগারের টাকায় কেনা উপহারসামগ্রী সবার হাতে পৌঁছানোর সৌভাগ্য হবে তো? ঘরে ফেরা মানুষের দুশ্চিন্তা বাড়ছেই। যোগাযোগ ও যাতায়াতের ক্ষেত্রে সড়ক, রেল ও নৌপথকেই সবাই প্রাধান্য দিয়ে থাকে। শুরুতেই অগ্রিম টিকেট প্রাপ্তিতে ভোগান্তি চরমে। ঈদকে সামনে রেখে যদিও বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হয়, কিন্তু সে সুযোগ আর ক’জনের ভাগ্যে জোটে? টিকেট যেন সোনার হরিণ। সড়কপথে নির্ধারিত দিনের আগেই সব টিকেট শেষ। ছিনতাইকারী, প্রতারকচক্র, মলম পার্টি, অজ্ঞান পার্টি সক্রিয়; আর মহাসড়কের ১৫-২০ কিলোমিটারের যানজট তো আছেই। ছিনতাইকারীদের হাতে সর্বস্ব হারিয়ে ঘরে ফেরা মানুষ রীতিমতো সর্বস্বান্ত। রেলপথেও বিড়ম্বনা কম নয়। টিকেট পেতে সেহরির পর থেকেই লাইনে দাঁড়িয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়। দূর থেকে দেখলে মনে হয় শরণার্থী শিবির। কেউ কেউ সিরিয়াল দিতে লোক ভাড়া করেন। এমনটি আদৌ কাম্য নয়। রেল দুর্ঘটনা, রেল ক্রসিং, উদাসীনতা, গেটম্যান না থাকা, ফেরিওয়ালাদের দৌরাত্ম্য ইত্যাদি বিড়ম্বনা রয়েছে রেলপথে। সামান্য অসতর্কতায়ও ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটে যায়। দক্ষ চালক ও প্রশিক্ষিত জনবলেরও অভাব। সবচেয়ে বড় কথা ট্রেনের সিডিউল বিপর্যয়, যাতে অসুস্থ হয়ে পড়েন বৃদ্ধ ও শিশুরা। অতিরিক্ত যাত্রী হলে অনেকে ট্রেনের ছাদেও উঠে পড়েন, যা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। এক্ষেত্রে ট্রেন দুর্ঘটনায় মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। এছাড়া নৌপথে এ মুহূর্তে যাতায়াত খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। বর্ষার মৌসুম চলছে। নদী উত্তাল। তাই নিরাপত্তার কথা মাথায় রাখা দরকার। এখানেও ভোগান্তি কম নয়। লঞ্চের টিকেট কালোবাজারিদের দখলে। ঘাটে টোল আদায়, ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রীবহন, টিকেট নিয়ে টালবাহানা, চালকের অদক্ষতা, প্রতিযোগিতামূলক মানসিকতা লঞ্চডুবির অন্যতম কারণ। তাছাড়া নির্মাণ ত্রুটি নিরাপত্তাহীনতা এসব অনভিপ্রেত ঘটনায় অকালে ঝরে যায় কত না তাজা প্রাণ! অনেকের জীবনের সলিল সমাধি হয়ে যায়। প্রিয়জনের ভাগ্যে লাশটিও জোটে না। রোজার মহিমায় উদ্দীপ্ত হয়ে ধৈর্য, সহনশীলতা, সহযোগিতা, সহমর্মিতা এসব মানবীয় গুণাবলীতে বলিয়ান হয়ে নিজেকে ও অন্যকে সাহায্য করতে হবে। সময়ের চেয়ে জীবনের মূল্য অনেক। এমন অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা না ঘটুক, যাতে ঘরে ফেরা মানুষটি নিরাপদে গন্তব্যস্থলে পৌঁছাতে পারে, এটাই কাম্য। ঘরমুখো মানুষের জীবনের নিরাপত্তা ও নির্বিঘেœ ঘরে ফেরার নিশ্চয়তা সমান জরুরী। ঈদের আনন্দ যেন সবার ভাগ্যে জোটে। কোন অকাল মৃত্যু যেন ঈদের আনন্দকে ম্লান না করে। সড়ক, রেল ও নৌপথের দুর্ঘটনা প্রতিরোধ ও উদ্ধারের তেমন ব্যবস্থাও চোখে পড়ে না। সোজা কথায়Ñ ‘যার যায়, সে-ই বোঝে’। ঈদে ঘরে ফেরা মানুষের এ যাত্রা স্বস্তিদায়ক ও নিরাপদ হোক। ধনী-গরিবের বৈষম্য ভুলে গিয়ে সবাই যাতে একসঙ্গে গাইতে পারি বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের সেই বিখ্যাত গান- ‘ও মন রমজানের ওই রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ, তুই আপনাকে আজ বিলিয়ে দে শোন আসমানি তাগিদ...’ টিবি গেইট, সিলেট থেকে
×