ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সংসদ সদস্য পদ থাকবে কি?

লতিফ সিদ্দিকীকে দল থেকে বহিষ্কারের চিঠি সংসদে

প্রকাশিত: ০৬:৪৫, ৮ জুলাই ২০১৫

লতিফ সিদ্দিকীকে দল থেকে বহিষ্কারের চিঠি সংসদে

সংসদ রিপোর্টার ॥ সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকীকে দল থেকে চূড়ান্তভাবে বহিষ্কারের দীর্ঘ আট মাস পর তা আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দিয়ে স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীকে জানিয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। ধর্ম নিয়ে বেফাঁস মন্তব্য করে মন্ত্রিত্ব ও দল থেকে বহিষ্কৃত লতিফ সিদ্দিকীকে শেষ পর্যন্ত সংসদ সদস্য পদও হারাতে হচ্ছে? রাজনীতির মাঠে থিতিয়ে পড়া সেই প্রশ্নটি আবারও নতুন করে সামনে এসেছে। তবে সংবিধান বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দল থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্তটি আওয়ামী লীগ স্পীকারকে জানালেও শুধুমাত্র এ কারণে লতিফ সিদ্দিকীর সংসদ সদস্যপদ চলে যাওয়ার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। কারণ হিসেবে তাঁরা বলছেন, আবদুল লতিফ সিদ্দিকী দলের বিরুদ্ধে ভোট দেননি, নিজে পদত্যাগ করেননি। তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এ কারণে আবদুল লতিফ সিদ্দিকী আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য হিসেবে এখন আর পরিচয় দিতে না পারলেও স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য হিসেবে বহাল থাকতে আইনগত কোন বাধা নেই। এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকীকে আওয়ামী লীগ থেকে চূড়ান্তভাবে বহিষ্কারের বিষয়টি অবহিত করে চিঠি প্রাপ্তির কথা মঙ্গলবার সাংবাদিকদের কাছে স্বীকার করেন জাতীয় সংসদের স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। তিনি জানান, গত ৫ জুলাই এ সংক্রান্ত একটি চিঠি পেয়েছি। লতিফ সিদ্দিকীর সংসদ সদস্য পদের বিষয়টি আইন দেখে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এদিকে, আওয়ামী লীগ সূত্রে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আট মাস আগে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে আবদুল লতিফ সিদ্দিকীকে দলের প্রাথমিক সদস্য পদ থেকে চূড়ান্তভাবে বহিষ্কারের বিষয়টিই স্পীকারকে চিঠির মাধ্যমে জানানো হয়েছে। দল পাঠানো চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। চিঠিটি স্বাক্ষরের পর ধানম-ির আওয়ামী লীগ কার্যালয় থেকে বিশেষ বাহকের মাধ্যমে স্পীকারের কাছে চিঠিটি পাঠানো হয়েছে। সূত্রগুলো আরও জানায়, কারাগার থেকে জামিনে লতিফ সিদ্দিকী মুক্ত হওয়ার পরই আলোচনায় উঠে আসে উনি সংসদে যোগ দিচ্ছেন কি না। লতিফ সিদ্দিকীর পক্ষ থেকে সংসদে যোগদানের ব্যাপারে আওয়ামী লীগের উচ্চ পর্যায়ে যোগাযোগও করা হয়। এদিকে জামিনে মুক্ত হওয়ার পর লতিফ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে হেফাজতসহ কিছু সাম্প্রদায়িক দল মাঠে নামায় সরকারের উচ্চ মহলে চিন্তার বলিরেখা ফুটে উঠে। আওয়ামী লীগ যে আর কোনভাবেই লতিফ সিদ্দিকীর দায়-দায়িত্ব নিতে চায় না এবং আর ৮ মাস আগে থেকেই তাঁর সঙ্গে আওয়ামী লীগের যে কোন সম্পর্ক নেই, সে বিষয়টিই দলের পক্ষ থেকে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেয়া হয়েছে। পোড় খাওয়া রাজনীতিক লতিফ সিদ্দিকী আওয়ামী লীগের মনোনয়নে টাঙ্গাইল-৪ আসন থেকে বারংবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। বর্তমান মন্ত্রিসভায় তিনি ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রীর দায়িত্বেও ছিলেন। কিন্তু গত ২৯ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে এক অনুষ্ঠানে লতিফ সিদ্দিকী মহানবী (সা.), হজ ও তবলীগ নিয়ে আপত্তিকর বক্তব্যে দেশ-বিদেশে সমালোচনার ঝড় ওঠে। ব্যাপক সমালোচনা ও বিক্ষোভের মুখে লতিফ সিদ্দিকীকে গত ১২ অক্টোবর মন্ত্রিপরিষদ এবং পরে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য পদ থেকে অপসারণ করা হয়। সর্বশেষ গত ২৪ অক্টোবর কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে লতিফ সিদ্দিকীর প্রাথমিক সদস্য পদও খারিজ করা হয়। এই সিদ্ধান্তের কথায় আওয়ামী লীগের তরফে স্পীকারকে জানানো হলো। এদিকে, দল থেকে বহিষ্কারের চিঠি সংসদে পৌঁছানোর পর লতিফ সিদ্দিকীর সংসদ সদস্যপদ থাকবে কিনা তা নিয়ে বিতর্ক জোরদার হয়েছে। তবে অতীতের নজির অনুযায়ী তাঁর সংসদ সদস্যপদ বাতিলের সুযোগ নেই। তবে নির্বাচন কমিশনের বিদ্যমান আইনের বিধান অনুযায়ী তার সদস্যপদ বাতিল হবে। এ বিষয়ে ডেপুটি স্পীকার এ্যাডভোকেট মোঃ ফজলে রাব্বী মিয়া সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক হতে পারে, কিন্তু দল থেকে বহিষ্কার হলে কারো সংসদ সদস্যপদ যাবে না। এক্ষেত্রে সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ প্রযোগ্য হবে না। অতীতে তেমন রেকর্ড নেই। সংসদ সচিবালয় সূত্র জানায়, এর আগে চারদলীয় জোট সরকারের সময়ে অষ্টম জাতীয় সংসদে বিএনপির টিকেটে নির্বাচিত সংসদ সদস্য আবু হেনাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। তার সংসদ সদস্য থাকবে কি না- বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন উঠলে তখন সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আবু হেনার সদস্য পদ বহাল রাখার সিদ্ধান্ত দেন তৎকালীন স্পীকার ব্যারিস্টার মুহম্মদ জমিরউদ্দিন সরকার। একইভাবে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের আমলে নবম জাতীয় সংসদেও একই ধরনের ঘটনা ঘটে। সাতক্ষীরা-৪ আসন থেকে নির্বাচিত এইচ এম গোলাম রেজাকে তার দল জাতীয় পার্টি বহিষ্কার করলেও তার সংসদ সদস্য পদ বহাল থাকে। তবে দল থেকে বহিষ্কার হলে সংসদ সদস্যপদ বাতিল হবে বলে দাবি করেছেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ ছহুল হোসাইন। তিনি বলেন, সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করেছেন বলেই আওয়ামী লীগ তাঁকে বহিষ্কার করেছে। দল চাইলে তাঁর সংসদ সদস্যপদ বাতিল হবে। কারণ তিনি দলীয় মনোনয়ন না পেলে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হতে পারতেন না। তিনি আরো বলেন, সংসদ সচিবালয়ে পাঠানো আওয়ামী লীগের চিঠি স্পীকার নির্বাচন কমিশনে পাঠাবেন। নির্বাচন কমিশন তাঁর বিষয়ে চূড়ান্ত নেবে। উল্লেখ্য, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার অভিযোগে দেশের বিভিন্ন স্থানে সাবেক মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকী বিরুদ্ধে প্রায় দুই ডজন মামলা হয়। বিভিন্ন ইসলামপন্থী দলগুলোর আন্দোলনের হুমকি ও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে সমালোচনার মুখে ২০১৪ সালের ২৩ নবেম্বর রাতে ভারত হয়ে দেশে ফেরেন তিনি। পরদিন তিনি আত্মসমর্পণ করলে আদালত তাঁকে কারাগারে পাঠায়। গত ২৯ জুন উচ্চ আদালতের জামিনে তিনি মুক্তি পান।
×