ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক শেষে শিক্ষামন্ত্রীর জরুরী নির্দেশনা জারি

অবশেষে শিক্ষা সচিবকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ থেকে বিরত রাখার সাব্যস্ত

প্রকাশিত: ০৬:১৫, ৮ জুলাই ২০১৫

অবশেষে শিক্ষা সচিবকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ থেকে বিরত রাখার সাব্যস্ত

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে অবশেষে শিক্ষা সচিবের স্বেচ্ছাচারিতার লাগাম টানা হচ্ছে। তাকে সব ধরনের বদলি, সিন্ধান্ত গ্রহণ ও নীতিনির্ধারণী কার্যক্রম গ্রহণ থেকে দুরে রাখার সিন্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এখন থেকে সরকারী কলেজের শিক্ষক বদলিতেও কোন হস্তক্ষেপ করতে পারবে না সচিব। মন্ত্রীকে পাশকাটিয়ে শিক্ষা সচিব নজরুল ইসলাম খানের বিরুদ্ধে একের পর এক প্রজ্ঞাপন জারি, নিজের খেয়ালখুশি মতো যেখানে-সেখানে চলে যাওয়া এবং এবার একাদশ শ্রেণীতে ভর্তিতে দেশব্যাপী নৈরাজ্য সৃষ্টির অভিযোগ রয়েছে। এই ধরনের কর্মকা-ের কারণে সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ভাবমূর্তি তলানিতে নামে। শিক্ষা প্রশাসনের একটি সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে লাগামহীনভাবে চলা শিক্ষা সচিবের স্বেচ্ছাচারিতার বিষয়ে সোমবার শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের সঙ্গে জাতীয় সংসদ ভবনে প্রায় এক ঘণ্টা কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি এ সময় শিক্ষামন্ত্রীকে বিভিন্ন বিষয়ে দিকনির্দেশনা প্রদান করেন। প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রণালয়ের সকল বিষয়ে সিন্ধান্ত গ্রহণ থেকে সচিবকে বিরত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানা গেছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার আলোকে মঙ্গলবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের জন্য কয়েকটি জরুরী নির্দেশনা জারি করেন শিক্ষামন্ত্রী। অত্যন্ত গোপনীয়ভাবে জারি করা এই নির্দেশনার কোন ফটোকপি কর্মকর্তাদের না দিয়ে তা দেখিয়ে (পড়ে দেখা) স্বাক্ষর নেয়া হয়। এ ক্ষেত্রে মন্ত্রীর বিশেষ নির্দেশনাসমূহ উপসচিব, যুগ্মসচিব ও অতিরিক্ত সচিবদের জানিয়ে দেন যুগ্মসচিব (অর্থ ও প্রশাসন) আমিনুল ইসলাম খান। তবে নির্দেশনার একটি কপি এই প্রতিবেদকের হাতে রয়েছে। মন্ত্রীর স্বাক্ষরে জারি হওয়া নির্দেশনার মধ্যে ৬ নম্বরে বলা হয়েছে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আমার সার্বিক বিষয়ে কথা হয়েছে। তিনিই ডেকে বলে দিয়েছেন- মন্ত্রণালয়ের সকল সিন্ধান্ত মন্ত্রী চূড়ান্ত করবেন। আমাকে না জানিয়ে কোন সিন্ধান্ত গ্রহণ করা যাবে না। প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীর আলোচনার বরাত দিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন উর্ধতন কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে বলেন, কলেজে ভর্তিতে দেশব্যাপী নৈরাজ্য সৃষ্টির জন্য প্রধানমন্ত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, এখন থেকে নজরুলকে (সচিব) আর কোন বিষয়ে সিন্ধান্ত গ্রহণের সুযোগ দেয়া যাবে না। নীতিনির্ধারণী কোন কাজেই নজরুলকে সম্পৃক্ত রাখা যাবে না। এর আগে চলমান কলেজ ভর্তি নিয়ে নৈরাজ্য ছাড়াও গত এক বছরে বেশ কয়েকটি সিদ্ধান্ত সচিব এককভাবে গ্রহণ করার ফলে সমালোচনার মুখে পড়ে মন্ত্রণালয় বা সরকার। মন্ত্রীকে পাশকাটিয়ে অন্তত ৮টি পরিপত্র ও আদেশ জারি করা হয়, যা নিয়ে শিক্ষা সেক্টরে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে সেই সিদ্ধান্তগুলো বাতিল করতে হয় মন্ত্রণালয়কে। এরমধ্যে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা ছাড়াই অনার্স ভর্তির পদ্ধতি জারির করার ফলে উপাচার্যগণ ব্যাপক আপত্তি জানিয়েছিলেন। কয়েকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থিরতাও দেখা দেয়। পরে সেই পরিপত্র বাতিল করা হয়। এরপর পরিপত্র জারি করা হয় যে, পাবলিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য নির্বাচনী পরীক্ষায় পাস করা বাধ্যতামূলক নয়। এই পরিপত্রও পড়েছে সমালোচনার মুখে। এরপরে সকল স্কুল-কলেজে সাঁতার বাধ্যতামূলক করে পরিপত্র জারি করেন সচিব। এ নিয়েও ছড়িয়ে পড়েছে অসন্তোষ। এরপরে গত এক বছরে মন্ত্রীকে না জানিয়ে সাবেক ছাত্রলীগ নেতাসহ সরকারী কলেজের অসংখ্য প্রগতিশীল শিক্ষককে ঢাকার বাইরে বদলি করা হয়। অথচ সচিবের একক সিন্ধান্তে ঢাকায় পদায়ন করা হয় ছাত্রদল ও ছাত্রশিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত অনেক সাবেক নেতাকে। যারা এখন শিক্ষা ক্যাডারে সদস্য। এই ঘটনা নিয়ে সরকারী কলেজের প্রগতিশীল শিক্ষক ও জাতীয় সংসদে থাকা অনেক সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সচিবের বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর কাছে লিখিত অভিযোগ দেন। সার্বিক ঘটনায় শিক্ষা প্রশাসনে প্রগতিশীল শিক্ষক-কর্মকর্তাদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
×