ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের মূল্য হ্রাস ও অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে সার্বিক খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি অন্যতম কারণ

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে থাকায় স্বস্তিতে সাধারণ মানুষ

প্রকাশিত: ০৬:০৩, ৮ জুলাই ২০১৫

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে থাকায় স্বস্তিতে সাধারণ মানুষ

হামিদ-উজ-জামান মামুন ॥ আয়ত্তে রয়েছে মূল্যস্ফীতি। ফলে স্বস্তিতে সাধারণ মানুষ। গত এক বছরে অর্থাৎ ২০১৪ সালের জুন মাস থেকে চলতি বছরের জুন মাস পর্যন্ত দেশে গড় মূল্যস্ফীতির হার দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ৪১ শতাংশ। তার আগের বছর গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ৭ দশমিক ৩৫ শতাংশ। তবে পয়েন্ট টু পয়েন্টে ভিত্তিতে গত মে মাসের তুলনায় জুন মাসে সামান্য বেড়েছে মূল্যস্ফীতির হার। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ হিসাব থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। এ অবস্থার প্রশংসা করে চলতি অর্থবছরের বাজেটে মূল্যস্ফীতির যে লক্ষ্যমাত্রা (৬.২) ধরা হয়েছে তা অর্জন করা সম্ভব বলে মনে করছে বিশ্বব্যাংক। সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে থাকার কারণ হিসেবে পরিকল্পনা আ হ ম মুস্তফা কামাল জনকণ্ঠকে বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেল, শিল্পের কাঁচামাল, মূলধনী যন্ত্রপাতি, পেট্রোলিয়াম জাতীয় পদার্থসহ সকল পণ্যের দাম কমে গেছে। এ জন্য দেশেও মূল্যস্ফীতি কমেছে। তাছাড়া ভারতের মূল্যস্ফীতিও কমেছে। পার্শ্ববর্তী দেশ হিসাবে তার একটি প্রভাব পড়েছে। পেট্রোলিয়ামের দাম আগে যেখানে ১৪৭ ডলার ছিল, সেটি এখন ৪৮ থেকে ৪৯ ডলারে চলে এসেছে। তিনি আরও বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যমূল্য কমার পাশাপাশি আমাদের দেশে টাকার মান স্থিতিশীল রয়েছে। এর সুফল পাওয়া গেছে। তিনি বলেন, দেশে রমজান ও বাজেট আসলে আগে জিনিসপত্রের দাম নিয়ে হাহাকার পড়ত। এখন আর সেই হাহাকার নেই। মুদ্রানীতিসহ সরকারের নানামুখী উদ্যোগের ফসল হচ্ছে মূল্যস্ফীতি সাফল্য। এ জন্য সময় সময় বিভিন্নœ কৌশল ও বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) জানায়, জুন মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে পয়েন্ট টু পয়েন্টে ছয় দশমিক ২৫ শতাংশে, যা তার আগের মাসে ছিল ছয় দশমিক ১৯ শতাংশ। খাদ্য পণ্যের মূল্যেস্ফীতি হয়েছে ছয় দশমিক ৩২ শতাংশে, যা তার আগের মাসে ছিল ছয় দশমিক ২৩ শতাংশ। খাদ্য বহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি হয়েছে ছয় দশমিক ১৫ শতাংশে, যা তার আগের মাসে ছিল ছয় দশমিক ১৪ শতাংশ। মূল্যস্ফীতির এ ধারার প্রশংসা করেছে বিশ্বব্যাংক। সংস্থাট্ িপ্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, এই সাফল্যের পিছনে একটি বিষয় হচ্ছে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলে দাম কমে যাওয়া এবং অন্যটি হচ্ছে অভ্যন্তরীণ বাজারে ধান ও সবজি উৎপাদনসহ সার্বিক খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়া এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সকর্তমূলক মুদ্রানীতির প্রভাব। বর্তমান সতর্কমূলক মুদ্রা নীতি অব্যাহত রাখার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। এ ক্ষেত্রে বলেছেন, যেহেতু ব্যাংকে তারল্য সংকট নেই তাই সম্প্রসারণমূলক মুদ্রানীতির প্রয়োজন নেই। নতুন অর্থবছরের (২০১৫-১৬) বাজেটে মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ছয় দশমিক দুই শতাংশ অর্জন সম্ভব হবে বলেও মনে করেন এ অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন বাজেটের এই লক্ষ্যমাত্রা বাস্তব সম্মত। কেননা মুদ্রানীতি এখনও ঠিক আছে। যদি জুলাই মাসে নতুন মুদ্রানীতি এখনকার মতো হয় তাহলে ভাল হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতি এখন সর্বকালের সবচেয়ে বেশি ভাল অবস্থায় রয়েছে। এ সময়টিই হচ্ছে পে-স্কেল বাস্তবায়নের উপযুক্ত সময়। সূত্র জানায়, গ্রামে সার্বিক মূল্যস্ফীতি পয়েন্ট টু পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে পাঁচ দশমিক ৯০ শতাংশে, যা তার আগের মাসে ছিল পাঁচ দশমিক ৮৪ শতাংশ। খাদ্য পণ্যের মূল্যে স্ফীতি হয়েছে পাঁচ দশমিক ৭৬ শতাংশ, যা তার আগের মাসে ছিল পাঁচ দশমিক ৬৬ শতাংশ। খাদ্য বহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি বেড়ে হয়েছে ছয় দশমিক ১৬ শতাংশ, যা তার আগের মাসে ছিল ছয় দশমিক ১৪ শতাংশ। অন্যদিকে শহরে সার্বিক মূল্যস্ফীতি পয়েন্ট টু পয়েন্টে হয়েছে ছয় দশমিক ৯১ শতাংশ,যা তার আগের মাসে ছিল ছয় দশমিক ৮৭ শতাংশ। খাদ্য পণ্যের মূল্যস্ফীতি হয়েছে সাত দশমিক ৬৪ শতাংশ, যা তার আগের মাসে ছিল সাত দশমিক ৫৪ শতাংশ। খাদ্য বহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ছয় দশমিক ১৪ শতাংশে, যা তার আগের মাসে ছিল ছয় দশমিক ১৪ শতাংশ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাব পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, গত কয়েক বছরের গড় মূল্যস্ফীতির চিত্র হচ্ছে নতুন ভিত্তিবছর (২০০৫-০৬) ধরে ২০০৮-০৯ অর্থবছরে সার্বিক গড় মূল্যস্ফীতি হয়েছিল সাত দশমিক ৬০ শতাংশ, ২০০৯-১০ অর্থবছরে সার্বিক গড় মূল্যস্ফীতি হয়েছিল ছয় দশমিক ৮২ শতাংশ, ২০১০-১১ অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি হঠাৎ করেই বেড়ে যায়। এ অর্থবছরে সার্বিক গড় মূল্যস্ফীতি দাঁড়ায় দশ দশমিক ৯১ শতাংশে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি এবং সরকারের কার্যকর পদক্ষেপের কারণে ২০১১-১২ অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি কমতে শুরু করে। এ সময় সার্বিক গড় মূল্যস্ফীতি পয়েন্ট টু পয়েন্টে কমে গিয়ে দাঁড়ায় আট দশমিক ৬৯ শতাংশে। ২০১২-১৩ অর্থবছরে মূল্যস্ফীতির নিম্নমুখীর ধারা অব্যাহত থাকে। এ অর্থবছরে সার্বিক মূল্যস্ফীতি কমে গিয়ে দাঁড়ায় ছয় দশমিক ৭৮ শতাংশে, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে সার্বিক মূল্যস্ফীতি কিছুটা বেড়ে হয় সাত দশমিক ৩৫ শতাংশ হয়েছিল। মঙ্গলবার প্রকাশিত তথ্যে দেখা যায় ২০১৪-১৫ গড় মূল্যস্ফীতি কমে হয়েছে ছয় দশমিক ৪১ শতাংশ।
×