ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বাংলাদেশ থেকে বছরে পাচার ॥ ১৬ হাজার কোটি

প্রকাশিত: ০৬:০০, ৮ জুলাই ২০১৫

বাংলাদেশ থেকে বছরে পাচার ॥ ১৬ হাজার কোটি

এম শাহজাহান ॥ বাংলাদেশ থেকে বছরে প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হচ্ছে। এদিকে সরকার সুইস ব্যাংকসহ বিদেশে পাচারকৃত অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছে। এজন্য তৈরি করা হয়েছে মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধ বিষয়ক জাতীয় কৌশলপত্র। এই কৌশলপত্র অনুযায়ী বাংলাদেশী নাগরিকদের বৈধ ও অবৈধভাবে বিদেশে রাখা স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ, ব্যাংক হিসাব এবং সেখানে গচ্ছিত অর্থের তথ্য সংগ্রহ করবে সরকার। যারা দেশ থেকে বিভিন্ন হুন্ডি, ওভার ইনভয়েস এবং অন্যভাবে অর্থ বিদেশে পাচার করে সেখানে বাড়ি, ফ্ল্যাট ক্রয়, ব্যবসা-বাণিজ্য স্থাপন এবং ব্যাংকে নগদ জমা রেখেছেন, বিদেশী বিনিয়োগ দেখিয়ে নাগরিকত্ব গ্রহণ এবং সেকেন্ড হোম সুবিধা গ্রহণ করেছেন, তাদের অর্জিত সব সম্পদের তথ্য সংগ্রহ করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য। জানা গেছে, সুইস ব্যাংকসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশীদের টাকা রাখার প্রবণতা বাড়ছে। এই টাকা অবৈধভাবে পাচার হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। একই সঙ্গে জঙ্গী তৎপরতার মাধ্যমে বাংলাদেশকে অশান্ত করতে মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন করছে কয়েকটি মৌলবাদী গোষ্ঠী। এসব অপতৎপরতা বন্ধে প্রণয়ন করা হয়েছে জাতীয় কৌশলপত্র। ২০১৫-২০১৭ মেয়াদের জন্য প্রণীত এ কৌশলপত্রের ১১টি সুনির্দিষ্ট কৌশলগত উদ্দেশের বিপরীতে ১১টি কৌশল নির্ধারণ করা হয়েছে। এদিকে, কৌশলপত্রে মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে যেসব বিষয় বিবেচনায় নেয়া হয়েছে তা হলো-মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়নের ঝুঁকি নিয়মিত হালনাগাদকরণ, দুর্নীতিলব্ধ সম্পদের মানিলন্ডারিং প্রতিহত করা, সীমান্ত সুরক্ষা পদ্ধতির আধুনিকায়নের মাধ্যমে সোনা ও মাদক পাচার, অন্যান্য সঙ্ঘবদ্ধ অপরাধ তার অর্থায়ন প্রতিহত করা, অবৈধ অর্থ পাচার প্রতিরোধ করা, কর ফাঁকি প্রতিহত করা এবং বাণিজ্য ভিত্তিক মানিলন্ডারিং বাধাগ্রস্ত করা, বিদেশে পাচারকৃত অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনা, নতুন নতুন প্রযুক্তির মাধ্যমে মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধ করার জন্য বিএফআইইউ’র সক্ষমতা বৃদ্ধি করা, মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে এনজিও’র মতো রিপোর্টিং এজেন্সির পরিপালন ব্যবস্থা উন্নত করা, মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন বিষয়ক তদন্ত বিচারকার্যের দক্ষতা বৃদ্ধি করা, নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সমন্বয় ও সহযোগিতা বৃদ্ধি করা এবং স্বচ্ছ ও জবাবদিহিতামূলক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তোলা। এছাড়া বিভিন্ন কৌশলের বিপরীতে ১৩৮টি এ্যাকশন আইটেম রয়েছে কৌশলপত্রে। প্রণীত এ কৌশলপত্রের প্রশংসা করে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন দেশের জন্য একটি বড় সমস্যা। তবে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের ফলে এ ধরনের অপতৎপরতাও দেশ থেকে দূর হবে। ইতোমধ্যে মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধ ব্যবস্থায় আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি অর্জন করেছে বাংলাদেশ। শুধু তাই নয় এ সংক্রান্ত আইনের সংশোধনও করা হয়েছে। সরকারের বিভিন্ন কৌশল ও পদক্ষেপের ফলে সন্ত্রাসে অর্থায়ন বন্ধ হবে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত বরেছেন। এদিকে, ওয়াশিংটন ভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফিন্যান্সিয়াল ইনটেগ্রিটির (জিএফআই) এক তথ্যমতে, বাংলাদেশ থেকে বছরে প্রায় ২০০ কোটি ডলার পাচার হচ্ছে, যা টাকায় রূপান্তর করলে দাঁড়ায় প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকা। আর এক্ষেত্রে বেশিরভাগ অর্থ পাচার হচ্ছে-যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য, সুইজারল্যান্ড, সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, হংক, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ড। সম্প্রতি সুইস ব্যাংক কর্তৃপক্ষ সে দেশে বাংলাদেশীদের অর্থ বাড়ছে বলে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। তবে কী পরিমাণ অর্থ গচ্ছিত রয়েছে, তা সুনির্দিষ্টভাবে প্রকাশ করা হয়নি। সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশীদের টাকার পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ায় কিছুটা অস্বস্তিতে রয়েছে সরকার। এ কারণে সুইস ব্যাংকের টাকার ব্যাপারে খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। সম্প্রতি এ সংক্রান্ত সমন্বয় কমিটির বৈঠকেও অর্থমন্ত্রী টাকা পাচার প্রতিরোধ এবং পাচারকৃত অর্থ ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের আরও দায়িত্বশীল হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক উর্ধতন কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে বলেন, সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশীদের টাকা বৃদ্ধি পাওয়ার ঘটনাটি বড় উদ্বেগজনক। দেশে সরকারী খাতের বিনিয়োগ বাড়লেও বেসরকারীখাতের বিনিয়োগ সেভাবে বাড়াছে না। এ অবস্থায় সুইস ব্যাংকের এ ঘটনায় প্রমাণ হচ্ছে দেশের টাকা বাইরে যাচ্ছে। তিনি বলেন, অবৈধভাবে টাকা পাচার, মানিলন্ডারিং এবং সন্ত্রাসে অর্থায়ন বন্ধে বরাবর কঠোর অবস্থানে সরকার। এ কারণে দেশ থেকে যাতে কোন টাকা পাচার না হতে পারে সে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে।
×