ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

শুধু পোশাক নয়, এখন জুতো ও প্রসাধনীর বিক্রিও বেড়েছে

প্রকাশিত: ০৭:২৮, ৭ জুলাই ২০১৫

শুধু পোশাক নয়, এখন জুতো ও প্রসাধনীর বিক্রিও বেড়েছে

রহিম শেখ ॥ ঈদ মানেই নতুন জামা, নতুন পোশাক। নতুন পোশাক ছাড়া ঈদ আনন্দ যেন একেবারেই অসম্ভব। তাই ঈদের কেনাকাটায় এখন মহাব্যস্ত নগরবাসী। রাজধানীর মার্কেট, শপিংমল ও ফ্যাশন হাউসগুলো বেচাকেনায় রাতদিন একাকার। বিপণিবিতানগুলোয় যেমন ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড়, তেমনই এসব এলাকার সড়কগুলোয় দিন দিন যানজটের মাত্রা বেড়েই চলেছে। তাই অনেক ক্রেতাই যানজট ও ভিড় এড়াতে ঈদ-কেনাকাটার জন্য বেছে নিয়েছেন মধ্যরাতকে। আর ক্রেতাসমাগম হচ্ছে বলে মধ্যরাত অবধি রাজধানীর বিপণিবিতানগুলোও খোলা রাখছেন দোকানিরা। শুধু পোশাকই নয়, এখন জুতো, গহনা, প্রসাধন সামগ্রীও বেচাকেনা হচ্ছে প্রচুর পরিমাণে। বেচাকেনায়ও দম ফেলার সময় নেই বিক্রেতাদের। দিনের বেলা নারী ক্রেতাদের ভিড় বেশি থাকলেও রাতে তরুণ-তরুণী ও পুরুষ ক্রেতারা মার্কেটে বেশি ভিড় করছেন। সামনেই ঈদ-উল-ফিতর। বড় উৎসব। তাই সারা বছরের কেনাকাটা আর ঈদের কেনাকাটায় থাকে পার্থক্য। এ সময়ের কেনাকাটায় থাকে উৎসবমুখরতাও। ঈদে যত না আনন্দ তার চেয়ে বেশি আনন্দ পরিবার-পরিজন নিয়ে কেনাকাটা করায়। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত অফিসের কাজ শেষ করে বিকেলেই নেমে পড়েন অনেকে কেনাকাটায়, যা চলে গভীর রাত পর্যন্ত। বিক্রেতারা বাড়তি রোজগারের আশায় রাজধানীর অধিকাংশ মার্কেট, শপিং মল ও নামী-দামী ব্রান্ডের শোরুম খোলা রাখছেন মধ্য রাত পর্যন্ত। ফুটপাথও সরগরম মাঝরাত অবধি। দিনের তুলনায় ক্রেতা কম বলে বিক্রেতারাও বাড়তি খাতির করছেন ক্রেতাদের। রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেট ঘুরে দেখা যায়, ক্রেতা আকৃষ্ট করতে বিভিন্ন বিপণিবিতানে এবার আলোকসজ্জা করা হয়েছে। কেউ কেউ সাদা-কালো, হলুদ, নীল কাপড়ের ওপর কৃত্রিম ফুল দিয়ে তাদের বিপণিবিতান, শপিংমল এবং প্রবেশদ্বার দৃষ্টিনন্দন করে সাজিয়ে রেখেছেন। কিছু কিছু মার্কেটে গ্রামীণ আবহ তুলে ধরা হয়েছে প্রবেশদ্বারের সাজসজ্জায়। বনানী, গুলশান, বারিধারা ও উত্তরা এলাকায় বেশ কয়েকটি নামীদামী শপিংমলের প্রবেশদ্বার সাজানো হয়েছে মাটির কলস, কুলা-ডুলা ও বিভিন্ন পাটপণ্য দিয়ে। যেসব দোকানে দেশী পোশাকের কোন সরবরাহ নেই, সেখানেও লেগেছে গ্রামীণ আবহ। রাজধানীর বিভিন্ন বিপণিবিতান ঘুরে দেখা যায়, শুধু পোশাক নয়, এখন জুতো, গহনা, প্রসাধন সামগ্রীরও বেচাকেনা বেড়েছে। এখন দম ফেলার যেন সময় নেই দোকানিদের। সাধারণত দিনের বেলায় নারী ক্রেতারা রাজধানীর বিভিন্ন বিপণিবিতানে ভিড় জমাচ্ছেন। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসতেই বদলে যাচ্ছে ভিড়ের ধরন। এ সময় নারী ক্রেতাদের চেয়ে ঈদবাজারগুলোয় বেশি দেখা যায় তরুণ-তরুণী ও পুরুষদের। গত রবিবার মধ্যরাতে বেইলি রোডে কেনাকাটা করতে আসা কয়েকজন জানান, অসহনীয় যানজট এড়াতেই এ সময় মার্কেটে এসেছেন। আর দোকানিরা জানান, এবার রমজানের প্রথম সপ্তাহ শেষে প্রতিদিন সকাল থেকে রাত ১২টা-১টা পর্যন্ত মার্কেট খোলা রাখা হচ্ছে। ক্রেতাও আসছেন প্রচুর। বনশ্রী থেকে বেইলি রোডে কেনাকাটা করতে আসা সানজিদা হক জনকণ্ঠকে জানান, রাত হলেও পরিবারের সবাইকে নিয়ে কেনাকাটায় ব্যস্ত থাকতে খারাপ লাগে না। পাশাপাশি রাতের ঢাকার সৌন্দর্যও উপভোগ করা যায়। বসুন্ধরা সিটিতে গিয়ে দেখা যায়, রবিবার মধ্যরাতেও ক্রেতাদের পদভারে মুখরিত শপিংমলটি। অনেক ক্রেতাকে মার্কেটটির সামনে বসে সপরিবারে আড্ডা দিতে দেখা যায়। এখানে মাঝরাতে কেনাকাটা করতে আসার কারণ জানতে চাইলে একটি বেসরকারী ব্যাংকের কর্মকর্তা জাকির হোসেন জনকণ্ঠকে বলেন, দিনে অনেক যানজট থাকে। তাই রাতে এসেছি। এখন যানজট নেই। আজিমপুর থেকে মাত্র ৫ মিনিটে এসেছি বসুন্ধরা সিটিতে। দিনে হলে ১ ঘণ্টায়ও পৌঁছানো যেত না। একই কথা বললেন ব্যবসায়ী সাইদুর রহমান। তিনি বলেন, দিনে যানজট এড়াতেই মধ্যরাতে কেনাকাটা করতে এসেছি। তাছাড়া দিনে অনেক ভিড়ও থাকে। সে সময় পছন্দের পণ্যটি খুঁজে পেতে কষ্ট হয়। রবিবার রাতে বসুন্ধরা সিটিতে কেনাকাটা করতে এসেছিলেন একটি আবাসন কোম্পানির প্রধান নির্বাহী আসিফুর রহমান ও তাঁর স্ত্রী মিতু। তারা জানান, দিনে ব্যস্ততা ও তীব্র যানজটের কারণে রাতে এসেছেন ঈদ-কেনাকাটায়। মিতু বলেন, দিনে খুব ভিড় থাকে, সঙ্গে যানজট তো আছেই। আর ঈদ উপলক্ষে রাজধানীজুড়ে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে, তাই রাতে কেনাকাটা করতে এসেছি। তাছাড়া একসঙ্গে শপিং করে রাতে বাইরে ঘুরতে যাওয়ার মজাই আলাদা। বসুন্ধরা সিটির জ্যোতি শাড়ির শোরুমের বিক্রেতা মাসুদ রানা জনকণ্ঠকে জানান, দিনে যারা ব্যস্ত থাকেন, তারাই আসেন ইফতারের পর। এর মধ্যে অনেকেই আসছেন মধ্যরাতে। এসব ক্রেতা এসে ঘুরে যান না। পছন্দের জিনিসটি কিনেই তারপর বাড়ি ফেরেন। এখন রাত ১২টা-১টা পর্যন্ত দোকান খোলা থাকে। কয়েক দিন পর সময় আরও বাড়বে বলে মনে করেন তিনি। গাউছিয়া মার্কেটে কথা হয় অঞ্জনা ফ্যাশনের মালিক খন্দকার আলাউদ্দিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ঈদের খুব বেশি বাকি নেই। এ সময় সাধারণত গভীর রাত পর্যন্ত দোকানপাট খোলা রাখা হয়। কারণ, ক্রেতারা ইফতারের পর কেনাকাটায় বের হন। যতক্ষণ ক্রেতা আছে ততক্ষণ দোকানপাট খোলা রাখা হয়। এতে ব্যবসায়ীরা যেমন লাভবান হচ্ছেন, তেমনই ক্রেতারাও দিনের কাজকর্ম শেষে গভীর রাত পর্যন্ত কেনাকাটার সুযোগ পাচ্ছেন। রাজধানীর বিভিন্ন শপিংমল ও মার্কেটের খুচরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শুধু পোশাকই নয়, জুতো, গহনা, প্রসাধন সামগ্রীও বেচাকেনা হচ্ছে প্রচুর পরিমাণে। প্রথম দিকে শিশু-কিশোর ও নারীদের পোশাক বেশি বিক্রি হলেও এখন সব বয়সীর জন্য নানা ধরনের পোশাকই বিক্রি হচ্ছে। ঈদে পোশাকের পাশাপাশি চুড়ি, ইমিটেশন, ব্রেসলেট, পারফিউম, লিপস্টিক-নেইল পলিশসহ নানা কসমেটিকস, স্বর্ণালঙ্কার, হাতঘড়ি, টিভি-ফ্রিজ, থালা-বাসন, গিফট কার্ড প্রিয়জনের জন্য উপহার দেয়াও থেমে নেই। তাই বিভিন্ন গিফট আইটেমের দোকানগুলোও জমজমাট। বিক্রি চলছে জায়নামাজ, টুপি ও আতরসহ নানা ধরনের সুগন্ধি। একই সঙ্গে বিক্রি বেড়েছে সিডি-ডিভিডির দোকানগুলোতেও। আর রাত-বিরাতে ক্রেতাদের ভূরিভোজ দিয়ে ভালই মুনাফা করছে শপিংমল ও আশপাশের খাবারের দোকানগুলো।
×