ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

মাহে রমজান

প্রকাশিত: ০৬:২৪, ৭ জুলাই ২০১৫

মাহে রমজান

অধ্যাপক মনিরুল ইসলাম রফিক ॥ দৈহিক আত্মিক ও আর্থিক ইবাদতের মনোমুগ্ধকর রমজানুল মোবারক ক্রমেই শেষ হচ্ছে। আজ ১৯তম দিবস। এ মাস দানÑসাদকার মাস। যাকাত-ফিতরা দানের মাস। গরিবদের প্রতি অকাতরে সাহায্য সহযোগিতার মাস। কিন্তু কোন কোন ধনী ও কৃপণ ব্যক্তি তার ধনসম্পদের যাকাত যথাযথভাবে হিসাব করে দেয় না। এ আর্থিক ইবাদত সম্পাদনের ক্ষেত্রেও নানা ছলছুতা ও ফাঁকিঝুঁকির আশ্রয় নিয়ে থাকে। যা কখনো সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির জন্য সৌভাগ্য ও কল্যাণ নিয়ে আসে না। টাকা-পয়সা, সোনাদানা, সহায়-সম্পদের প্রতি মানুষের আকর্ষণ চিরন্তন ও অপ্রতিরোধ্য। বস্তুত ধনের মায়া প্রাণের মায়ার চাইতেও বেশি। এ কথা হয়তো অনেকেই স্বীকার করবে না। কেন না সবাই জানে যে, প্রাণের চাইতে মানুষ অন্যকিছুকেই বড় মনে করে না। এ কথা স্বীকার করলেও বলতে হয় যে, প্রত্যক্ষ বিপ্লব ও রক্তারক্তি সংঘটিত হবার মূল কারণ এই ধন। ধনের লোভে মানুষ অন্ধ হয়ে যায়। প্রাণের মায়া থাকে না। তাই চুরি-ডাকাতি করতে গিয়ে প্রাণ হারায়। যুদ্ধ করতে গিয়ে নৃশংসভাবে জীবন-লীলা সংবরণ করে। ছেলে বাবাকে হত্যা করে, স্ত্রী স্বামীকে চুপি চুপি বিষ পান কারায়। প্রতিবেশী এই ধরনের লোভেই একে অন্যের গলায় ছুরি দেয়। সূরা তাকাসুরে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেছেন: ‘আধিক্যের আকাক্সক্ষাই তোমাদের মোহাচ্ছন্ন করে রেখেছে যে পর্যন্ত না তোমরা কবরে নিপতিত হও।’ যাকাত ইসলামের পঞ্চম স্তম্ভের অন্যতম এক মহান আল্লাহর ফরজকৃত একটি বাধ্যতামূলক স্তম্ভ। কুরআন মজীদে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বিরাশিবার যাকাতের কথা উল্লেখ হয়েছে। সূরা তাওবার ৬০ নং আয়াতে সুস্পষ্টভাবে যাকাত ফরজ করা হয়েছে এবং তা ব্যয়ের খাতসমূহ নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছে। যদিও ইসলামের সূচনাকাল হতেই এর প্রচলন করা হয়েছে এবং দ্বিতীয় হিজরিতে রোজা ফরজ হওয়ার পর একই বছরের শাওয়াল মাসে যাকাত ফরজ হয়েছে; তথাপি এর পূর্ণাঙ্গ ও সুশৃঙ্খল ব্যবস্থা মক্কা বিজয়ের পর ক্রমান্বয়ে গড়ে উঠে। নবম হিজরিতে যাকাতের বিধান পূর্ণাঙ্গরূপে কার্যকর করা হয়। কুরআন মজীদের বহুস্থানে বলা হয়েছে, ‘তোমরা নামাজ কায়েম কর এবং যাকাত দাও।’ মহানবী (স.) বলেন: ‘ইসলামের মূল ভিত্তি পাঁচটি: এই সাক্ষ্য দেয়া যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই এবং মুহাম্মদ (স.) আল্লাহর বান্দা ও রাসূল, নামাজ কায়েম করা, যাকাত আদায় করা, হজ আদায় করা এবং রমজানের রোজা রাখা।’- (মিশকাত)। যাকাত ফরজ সম্পর্কে আরও বহু হাদীস বিদ্যমান। একবার হযরত জিবরাঈল (আ) মানুষের বেশে রাসূলুল্লাহ (স.)-এর নিকট হাজির হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! ইসলাম কি? তিনি বললেন: ইসলাম এই যে, আপনি আল্লাহর ইবাদত করবেন এবং তার সঙ্গে কোন কিছু শরিক করবেন না। বিধিবদ্ধ নামাজ কায়েম করবেন, বাধ্যতামূলক যাকাত পরিশোধ করবেন। ‘ইবনে আব্বাস (রা) বলেন, আল্লাহ তায়ালা তার নবীকে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু (আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই) কালিমাসহ প্রেরণ করেছিলেন। লোকেরা তা গ্রহণ করলে পরে তাদের প্রতি নামাজ ফরজ করা হয়। তারা তাও পালন করতে থাকলে তাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়। তারা এটাও সত্যরূপে গ্রহণ করলে তাদের ওপর যাকাত ফরজ করা হয়। অতএব যাকাত একটি বাধ্যতামূলক কর্তব্য এবং আর্থিক ইবাদত। কোন ব্যক্তি স্বেচ্ছায় যাকাত প্রদান না করলে তার নিকট হতে রাষ্ট্র বা বল প্রয়োগে আদায় করবে। যাকাত প্রদান না করা একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। মহান আল্লাহ এবং তার রাসূল (স.) যাকাত আদায়ের জন্য উৎসাহিত করেছেন এবং কৃপণতাবশত: তা পরিশোধ না করার পরিণতি সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়েছেন। কুরআন মজীদে বলা হয়েছে : যারা স্বীয় ধন-সম্পদ আল্লাহর পথে ব্যয় করে, তাদের উপমা একটি শস্যদানা, যা সাতটি শীষ উদগত করে। প্রতিটি শীষে একশত শস্যদানা। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা বহুগুণে বৃদ্ধি করে দেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ। যারা স্বীয় ধন-সম্পদ আল্লাহর পথে ব্যয় করে, অতঃপর যা ব্যয় করেছে তার কথা বলে বেড়ায় না এবং কষ্টও দেয় না, তাদের পুরস্কার তাদের প্রতিপালকের নিকট রয়েছে। তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা দুশ্চিন্তাগ্রস্তও হবে না। (২১: ২৬১-১)। পবিত্র মাহে রমজানে অতিরিক্ত সাওয়াবের আশায় সামর্থ্যবান মুমিন মুসলমানদের যাকাত দানের একটি সোনালী ঐতিহ্য রয়েছে। আমাদের সমাজের ধনীরা যেন অকৃপণভাবে এ ঐতিহ্য ধরে রাখেন।
×