ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সিরিজ হার না সমতা, ফয়সালা আজ

প্রকাশিত: ০৬:২২, ৭ জুলাই ২০১৫

সিরিজ হার না সমতা, ফয়সালা আজ

মিথুন আশরাফ ॥ সেই গত বছর নবেম্বর থেকে মাশরাফি, সাকিব, তামিম, মুশফিকদের কণ্ঠে উচ্চৈঃস্বর বেজেছে। যখনই সিরিজ এসেছে, বলেছে সিরিজ জিতবে। যখন টুর্নামেন্ট এসেছে, ভাল কিছু করার প্রত্যয় দেখিয়েছেন। তাতে সাফল্যও মিলেছে। এবার দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজ শুরুর আগেই সুর নরম হয়ে এলো। তাতে শুরুতেই ধাক্কা খেল বাংলাদেশ। প্রথম টি২০তে ৫২ রানে হারল। দুই ম্যাচের সিরিজে ০-১ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়ল বাংলাদেশ। আজ মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে দুপুর ১টায় সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টি২০ ম্যাচটি শুরু হবে। এ ম্যাচটিতে হারলেই ০-২ ব্যবধানে সিরিজ হার নিশ্চিত হবে বাংলাদেশের। তবে কোনভাবে জিতলেই সিরিজে আসবে ১-১ সমতা। এখন সিরিজ হার হবে, না আসবে সমতা, সেই ফয়সালাই হবে আজ। নবেম্বরে বাংলাদেশের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ খেলল জিম্বাবুইয়ে। ৫ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে বাংলাদেশই জিতবে, সেই কথা বললেন দলের ক্রিকেটাররা। তাতে শুধু সিরিজই নয়, ৫-০ ব্যবধানেই জয় মিলল। অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের মাটিতে বিশ্বকাপ। সবার মনেই আতঙ্ক। তাদের কন্ডিশনে দল দুমড়ে মুচড়ে যাবে। কিন্তু কী হলো? ক্রিকেটাররা যে ভাল করার প্রত্যয় দেখিয়েছিলেন, তাতে বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালেই উঠে গেল। এরপর পাকিস্তান যখন খেলতে এলো এর আগেই সাকিব বলে দিলেন, ‘সিরিজে আমরাই ফেবারিট।’ বাংলাদেশ ৩-০ ব্যবধানে পাকিস্তানকেও সিরিজে হারিয়ে দিল। এমনকি একমাত্র টি২০তেও জিতল বাংলাদেশ। ক্রিকেটারদের আত্মবিশ্বাস এতই বেড়ে গেলে ভারতের এ মুহূর্তের সেরা দলের বিপক্ষে সিরিজ জেতার কথাও বললেন ক্রিকেটাররা। তাতেও মিলল সাফল্য। ভারতকে ২-১ ব্যবধানে সিরিজে হারিয়ে দিল বাংলাদেশ। যখন ক্রিকেটারদের চাঙ্গা রাখা দরকার। যখন ক্রিকেটারদের ভেতর, দলের তরুণদের ভেতর এ বোধ ঢুকিয়ে দেয়া দরকার দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষেও পারব। তা না করে কোচ চন্দিকা হাতুরাসিংহে ও অধিনায়ক মাশরাফি বুঝিয়ে দিলেন দক্ষিণ আফ্রিকা যে কতটা শক্তিশালী দল। এমন একটা অবস্থা, যেন সফরকারীদের সামনে বাংলাদেশ কোন দলই না। পাকিস্তান, ভারতের বিপক্ষে খেলার আগে যে সাকিব সিরিজ জয়ের কথা বললেন, তিনিও জানিয়ে দিলেন, ‘বাংলাদেশ ফেবারিট নয়।’ তা জানল ক্রিকেটাররা। তাতে প্রভাবও পড়ল। সেই প্রভাব এতটাই ভয়ঙ্কর হয়ে উঠল, দেশের মাটিতে সবচেয়ে কম ৯৬ রানেই অলআউট হয়ে গেল বাংলাদেশ! দেশের মাটিতে টানা তিন সিরিজ জেতার পর এখন দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে এসে সিরিজ হারের সম্ভাবনায় পড়ে গেল বাংলাদেশ। আজ জিততে না পারলেই সিরিজ হার হবে। এ বছর দেশের মাটিতে নির্ধারিত ওভারের প্রথম সিরিজ হার হবে এটি। তাতে করে ক্রিকেটারদের আত্মবিশ্বাসেও কী ঘাটতি পড়ে যাবে না? বিসিবি একাদশ-দক্ষিণ আফ্রিকা দলের মধ্যে একমাত্র টি২০ প্রস্তুতি ম্যাচটিতেই বোঝা যাচ্ছিল, ভয়ঙ্কর দল দক্ষিণ আফ্রিকা। এর সঙ্গে যখন পেসারদের বলগুলো এমনভাবে আসল এবং উইকেটগুলো ভেঙ্গে গেল তা জানা গেল, তখন আরও আতঙ্ক তৈরি হয়ে গেল। হাতুরাসিংহে, মাশরাফি, সাকিব যে দক্ষিণ আফ্রিকাকে শক্তিশালী বলেছেন, তা ঠিকই। বাংলাদেশ টি২০ ক্রিকেটই প্রতিনিয়ত খেলে না। তাই এ ফরমেটের ক্রিকেটে আতঙ্কও ছড়িয়ে দিতে পারে না। ২০০৬ সাল থেকে লম্বা বিরতিতে ৪৩ টি২০ খেলেছে বাংলাদেশ। হেরেছে ৩০টি। এক ম্যাচের রেজাল্ট হয়নি। জিতেছে ১২ ম্যাচে। সেই তুলনায় দক্ষিণ আফ্রিকা অনেক টি২০ ম্যাচ খেলে। ২০০৫ সাল থেকে ৭৭ টি২০ ম্যাচ খেলে ৪৫টি জিতেছে। এর মধ্যে বাংলাদেশের বিপক্ষে ৩ ম্যাচ জয় আছে। বাংলাদেশের এক সাকিব শুধু বিশ্বক্রিকেটে টি২০ লীগগুলোতে খেলেন। দক্ষিণ আফ্রিকার ভিলিয়ার্স, মিলার, ডুমিনি, প্লেসিস থেকে শুরু করে বলতে গেলে সবাই বিশ্বব্যাপী হওয়া টি২০ লীগগুলোতে খেলেন। পার্থক্য তো থাকবেই। তবে ‘দক্ষিণ আফ্রিকাকেও হারাতে পারব’ উচ্চৈঃস্বরে বোধ হয় বলে দিলে পারতেন মাশরাফি, সাকিবরা। তাতে তরুণ ক্রিকেটারদের ভেতর হয়ত সেই জ্বালানি শক্তি পুনরুজ্জীবিত হতো। হার হলেও হয়ত চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয়া যেত। প্রথম টি২০তেই যে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ১৪৮ রানে বেঁধে দেয়া গিয়েছিল, তাতে জয়ও হয়ত মিলে যেতে পারত। যে স্পিন আতঙ্ক হওয়ার কথা দক্ষিণ আফ্রিকার, সেই স্পিনেই বাংলাদেশ ঘায়েল নাও হতে পারত। এখন বাংলাদেশকে আজকের ম্যাচ থেকেই ওয়ানডের জ্বালানি তুলে নিতে হবে। জয় পেয়ে সিরিজে সমতা আনতে পারলে ভাল। তা না হলেও এমনভাবে খেলতে হবে, প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়তে হবে। যেন দক্ষিণ আফ্রিকাকে কষ্ট করে জিততে হয়। যাতে করে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের আগে আত্মবিশ্বাসে কোন ঘাটতি না পরে। তা করতে গিয়ে জয় ধরা দিলে তো হয়ে যায়। টি২০ সিরিজে হারের সম্ভাবনা দূর হয়ে গিয়ে সমতা এসে পড়ে। বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা বলেছেন, ‘দ্বিতীয় ম্যাচেই আমরা লড়াইয়ে ফিরব। পরিষ্কারভাবেই সবাই জানে দক্ষিণ আফ্রিকা কেমন ক্রিকেট খেলে। আমরা যদি এটাকে মনের মধ্যে কঠিনভাবে নিয়ে নেই, তখন আমাদের কিন্তু ওইখান থেকে বের হয়ে আসা কঠিন। আমাদের বিশ্বাস নিয়ে খেলতে হবে, তা বলেছি। যদি সুযোগ তৈরি করতে পারি আমাদের সেই সুযোগগুলো নিতে হবে। আমরা নিজেরাই (প্রথম টি২০তে) তৈরি সুযোগটা নিতে পারিনি। আশা করি দ্বিতীয় ম্যাচে এমন অবস্থায় গেলে আমরা আরও চেষ্টা করব।’ অলরাউন্ডার নাসির হোসেন তার ফেসবুক ভেরিফাইড পেজে লিখেছেন ‘একটা খারাপ দিন আসতেই পারে। এটা নিয়ে খুব বেশি দুশ্চিন্তার কিছু নেই। আরও একটা টি২০ বাকি আছে। বাঘেরা আবারও গর্জে উঠবে। আর ইনশাআল্লাহ আগামী ম্যাচেই নিজেদের জাতটা বোঝাতে পারবে। এই বাজে সময় আপনাদের (ক্রিকেটপ্রেমী, সমর্থকদের) সমর্থন আমাদের জন্য খুব জরুরী।’ ওপেনার সৌম্য সরকার সোমবার টিম হোটেলে বলেছেন, ‘আমাদের প্রতি একটাই বার্তা। সেটা হলো যার যে কাজ, সেটা যেন সঠিকভাবে শতভাগ করতে পারি। তাহলেই জয়ের সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যাবে। আমরা ভাল খেলতে পারিনি। তাই ফলও ভাল হয়নি। কিছু ভুল ছিল আমাদের। এখন একটাই লক্ষ্য, সেই ভুলগুলো শুধরে, যেভাবে হোক কামব্যাক করা। টি২০তে ভাল করে ওয়ানডে সিরিজের আগে নিজেদের মনোবল বাড়ানো এবং প্রস্তুতি ভাল করে নেয়াটাই এখন আমাদের একমাত্র লক্ষ্য।’ সেই লক্ষ্যে এখন বাংলাদেশ কিছু করে দেখাতে পারলেই হয়।
×